Advertisement
E-Paper

খাদ্য-ভ্রমণ! কলকাতা থেকে অল্প দূরে, সারা দিনের সফরে বেরিয়ে পড়ুন ৭ রেস্তরাঁর উদ্দেশে

কলকাতা থেকে বেশি দূর নয় অথচ তাকে ‘লং ড্রাইভ’ বলা যায়, এমন কোথাও যেতে চান। যেতে যেতে রাস্তার ধারে কোথাও খাবেন, না কি খাওয়ার জন্যই গন্তব্য ঠিক করবেন?

Food Trail

খাবারের জন্য ঘুরবেন, না ঘোরার জন্য খাবেন? ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০৭
Share
Save

সপ্তাহান্তে একটি ছুটির দিন। প্রথমে ভেবেছিলেন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেবেন। তার পর ভাবলেন ধুস, বাড়ির অনেক কাজ। একটা দিন নিজের শখপূরণ করতে গেলে জামাকাপড় ইস্ত্রি করা হবে না। ওই একটা দিন মুখে একটু শসা-টম্যাটো ঘষেন, তা-ও হবে না। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বন্ধুদের ডাক! গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে এখনই। অন্ধকার ঘরে বিছানায় শুয়ে-গড়িয়ে সিরিজ় না দেখে সারাটা দিন টো টো করে ঘুরে, বেড়িয়ে, খেয়ে কাটানো হবে। কিন্তু কোথায় যাবেন? রইল তেমন সাত ঠিকানার সন্ধান।

১) নোনামাটি, বাসন্তী হাইওয়ে

ছবি: সংগৃহীত।

সেই চেনা হাওড়া ব্রিজ। দ্বিতীয় হুগলি সেতু। সাঁতরাগাছির যানজট আর ভাল লাগছে না? গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দিন বাসন্তী হাইওয়ের দিকে। ধাপার মাঠ, মানে পিসি চন্দ্র গার্ডেনের পাশ দিয়ে বনগাঁ-কুলপি রোড হয়ে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সের গা ঘেঁষে ঘটকপুকুর পেরিয়ে উঠে পড়ুন কলকাতা-মালঞ্চ রোডে। কলকাতা থেকে মাত্র ঘণ্টা দেড়েকের পথ। তার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় মিনাখাঁ বিধানসভা কেন্দ্রে, টাকি থেকে একটু দূরে। সেখানেই রয়েছে ‘নোনামাটি রেস্ট্র ক্যাফে’। আশপাশে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। তবে নোনামাটির ভিতরের পরিবেশ এত সুন্দর যে আলাদা করে কোথাও যাওয়ার কথা মনেও হবে না। একেবারে নিরিবিলি, গ্রামের পরিবেশ, কিন্তু খাওয়াদাওয়া প্রায় শহুরে রেস্তরাঁর মতো। বাঙালি, তন্দুরি, মোগলাই, চিনা— সবই পাওয়া যাবে। চাইলে রাতও কাটাতে পারেন। সে ব্যবস্থা আছে। আবার, খেয়ে কয়েক ঘণ্টা গড়িয়ে নেওয়ার জন্যও ঘর পাওয়া যায়।

২) শের-এ-পঞ্জাব, কোলাঘাট

ছবি: সংগৃহীত।

গাড়ি করে দিঘা, মন্দারমণি, পুরী যাওয়ার পথে কোলাঘাটে নামা চাই। ফেরার পথেও তাই। ‘শের-এ-পঞ্জাব’ খাবারের বিষয়ে অনেকের কাছে ‘মন্দির’এর মতোই। তাই সেখানে এক বার মাথা ঠেকিয়ে না গেলেই নয়। কিন্তু বসন্তের বিকেলে দখিনা বাতাসে হঠাৎ যদি মনটা কারও কথা ভেবে ব্যাকুল হয়ে ওঠে, তখন কী করবেন? গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন। যত দূর চোখ যায়, আর যত ক্ষণ না গাড়ির পেট্রল ‘টিক টিক’ করে ‘লো ফুয়েল’ সিগন্যাল দেয়, তত ক্ষণ এগিয়ে চলুন। তবে খেয়াল রাখবেন, আবেগে ভেসে দিল্লি রোডের দিকে চলে যাবেন না। ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বোম্বে রোডে উঠে পড়ুন। কলকাতা থেকে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই রূপনারায়ণের ব্রিজ এসে পড়বে। সেটি পেরোলেই পৌঁছে যাবেন কোলাঘাট। রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি রেখে দিন নির্দিষ্ট জায়গায়। তার পর জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করুন। ধাবার সাবেক খাবার নান, পরোটা, রুটি, পোলাও, মাংস, কবাব যেমন পাওয়া যায়, তেমনই সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে স্যুপ-স্যান্ডউইচও দিব্যি মেলে। থাকার ব্যবস্থাও হয়েছে এখন এখানে।

৩) আমোলি, শান্তিনিকেতন

ছবি: সংগৃহীত।

শহর থেকে বাইরে গেলেই ওই লুচি-কচুরি খেতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে কয়েক ঘণ্টায় শান্তিনিকেতনও চলে যাওয়া যায়। রতনপল্লির দিকে চলে যাবেন। রাস্তার দু’পাশ জুড়ে চোখ জুড়ানো বাগানবিলাস, আইভিলতা দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন ‘ক্যাফে আমোলি’তে। বোলপুরের মতো জায়গায় যদি ভাল মানের ইটালীয় খাবারের খোঁজ করেন, তা হলে এটিই শ্রেষ্ঠ। এখানকার কফি ইতিমধ্যেই নাম করেছে বেশ। সঙ্গে রীতিমতো জনপ্রিয় আমোলির শেফার্ড পাই, ব্রুশেটাও। আমোলি থেকে ফেরার সময় মনে করে চিজ় কেকটা প্যাক করিয়ে নেবেন। যাতায়াত মিলিয়ে গোটা দিনটাই চলে যাবে। কিন্তু মনটা একেবারে চিজ় কেকের মতো নোনতা-মিষ্টি হয়ে থাকবে।

৪) কিচেন সূত্র, চুঁচুড়া

ছবি: সংগৃহীত।

প্রতি বার ঠিক ওই জায়গায় পৌঁছে খানিক বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। ডানকুনি পেরোনোর পর ঠিক যেখান থেকে দিল্লি রোড আর বোম্বে রোড আলাদা হয়ে যাচ্ছে। বন্ধুদের অনুরোধে বেশির ভাগ সময়ে বোম্বে রোডের দিকেই চলে যান। কারণ, ওই রাস্তাতেই রসনাতৃপ্তির বিকল্প বেশি। পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল দিল্লি রোডে কি কিছুই নেই? দিল্লি রোড ধরে নাক বরাবর ঘণ্টা দেড়েক এলেই পৌঁছে যাবেন চুঁচুড়ায়। হ্যাঁ, চন্দননগরের মিষ্টি তো ফেরার পথে কিনবেন। তার আগে এতটা পথ যে এলেন, কোথায় খাবেন? হাইওয়ের উপরেই রয়েছে ‘কিচেন সূত্র’। মোমো থেকে মিষ্টি— সবই পাবেন। সবুজে ঘেরা, শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশে কয়েকটা ঘণ্টা কাটাতে মন্দ লাগবে না।

৫) মাদার্স হাট, কৃষ্ণনগর

ছবি: সংগৃহীত।

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সাধারণত জিমেই যান। সে দিন হঠাৎ সরপুরিয়া খাওয়ার ইচ্ছে হল। ব্যস, গাড়ি নিয়ে চললেন ‘মাটির পুতুল’, থুড়ি কৃষ্ণনগরের উদ্দেশে। উলুবেড়িয়া, ডানকুনি পেরিয়ে দিল্লি রোড। ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ঘণ্টা তিনেকের পথ। মিষ্টি কিনতে যাওয়ার আগে পেটপুজোর ব্যবস্থা তো করতে হবে। পথেই পড়বে ‘মাদার্স হাট’। সেখানে খানিক ক্ষণ জিরিয়ে, উদরপূর্তি করে ফেলতে পারেন। স্ন্যাক্স আছে। সঙ্গে স্যুপ-স্যালাডও পাবেন। বাঙালি, দক্ষিণী, কন্টিনেন্টাল— খাবারের তালিকা দীর্ঘ। শেষ পাতে মিষ্টি, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রিও থাকবে। চাইলে দলবল নিয়ে ‘আম্রকাননে বনভোজন’ সেরে আসতে পারেন। আর হ্যাঁ, ভাতের সঙ্গে ‘কাঁকড়া-চিংড়ি ভাপা’ খেতে কিন্তু ভুলবেন না। ফেরার পথে সরপুরিয়া, সরভাজা, মাটির পুতুল কিনে গাড়িতে করে নিয়ে আসবেন।

৬) বনলতা, জয়পুর

ছবি: সংগৃহীত।

সকাল ৬টায় যদি যাত্রা শুরু করতে পারেন, তা হলে সাড়ে ১০টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন বাঁকুড়ার জয়পুরের জঙ্গলের কাছে ‘বনলতা রিসর্ট’-এ। ঘরোয়া, গ্রামীণ পরিবেশ। বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে এই রিসর্ট। রিসর্টের ভিতর ঘোরার জন্য রিসর্টের নিজস্ব ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। তাতে চেপে গোটা এলাকা ঘুরে দেখে নিতে পারেন। ভিতরে বিশাল পুকুর রয়েছে। চাইলে পুকুরের পাড়ে বসে মাছ ধরতে পারেন। কলকাতা থেকে এতটা পথ পেরিয়ে শুধু তো মাছ ধরতে যাবেন না। তা হলে কী করবেন? বনলতায় এলে অবশ্যই খেয়ে দেখবেন এমুর ডিম, টার্কি, কোয়েল কিংবা ভিন্‌ প্রজাতির হাঁসের মাংস দিয়ে রাঁধা বিভিন্ন পদ। আরে, বাঙালি তো? এত খাওয়ার পর ঘুমোতে মন চাইতেই পারে। সে ব্যবস্থাও আছে। এমন শান্তির পরিবেশ থেকে শহুরে কোলাহলে যদি ফিরতে আর ইচ্ছে না করে, তা হলে একটা রাত কাটিয়েও আসতে পারেন।

৭) দাদা বৌদি রেস্তরাঁ, ব্যারাকপুর

ছবি: সংগৃহীত।

জন্মসূত্রে সে খাবার অন্য জাতের। কিন্তু বাঙালি নিজগুণে বিরিয়ানিকে ‘ঘরের লোক’ বানিয়ে ফেলেছে। ভাল বিরিয়ানির খোঁজ পেলে একমাত্র বাঙালিরাই হিল্লি-দিল্লি এক করে ফেলার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এক দিনে গিয়ে আবার ফিরে তো আসতে হবে। তা হলে বরং ব্যারাকপুরেই যাওয়া যাক। কলকাতা, তার আশপাশের যত দোকান রয়েছে, সবার সব ধরনের বিরিয়ানি চেখে ফেলেছেন। কিন্তু কোনও দিন ‘দাদা বৌদি’-র বিরিয়ানি খাননি। ব্যস, তা হলে আর চিন্তা কী? সকালে সামান্য একটু জলখাবার খেয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন বিরিয়ানি, থুড়ি ব্যারাকপুরের উদ্দেশে। সরু চালের ঝরঝরে ভাত, তুলতুলে মাংস আর ঘি, জাফরানের গন্ধে ম-ম করা সুস্বাদু বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য ঘণ্টা দেড়েক গাড়ি চালাতে পারবেন না? অবশ্য রাস্তাঘাটে যানজট থাকলে ওটা দু’ঘণ্টাও হয়ে যেতে পারে। তা যাক! কলকাতা থেকে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ধরে খড়দহ, সোদপুর, টিটাগড় হয়ে পৌঁছোনো যায় গন্তব্যে। রেস্তরাঁয় বসে খেতে গেলে ধৈর্য চাই। কারণ, সকাল থেকেই সেখানে লম্বা লাইন পড়ে। ছোট একটা বিস্কুটের প্যাকেট হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করুন। পেটও ভরবে, খিদেও একেবারে মরে যাবে না। বিরিয়ানি খেয়ে শুধু হাতে নিশ্চয়ই ফিরবেন না? রাতে খাবার জন্য সঙ্গে দু’-চার প্যাকেট কিনেও আনবেন।

Food Trail Near Kolkata Travel Tips Food Trail

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}