লকডাউনে গৃহবন্দি অবস্থা দুঃসহ হয়ে উঠেছিল যখন, সেই সময়েই এক কাছের মানুষ প্রস্তাব দিলেন মধুপুরে যাওয়ার। এক সময়ে বাঙালির পশ্চিমে যাওয়ার চল বা ঐতিহ্য ছিল, তার কিছুই প্রায় বাকি নেই এখন। কিন্তু মধুপুর নামটা শুনেই হাওয়াবদলের যাবতীয় স্মৃতি ভিড় করে এল। সেই সঙ্গে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ক’টা দিন বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার লোভও সামলানো গেল না।
অগত্যা গাড়িতে পাড়ি মধুপুর। কলকাতা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, রাস্তায় দু’বার বিরতি নিয়ে পৌঁছতে সময় লাগল প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা। দিল্লি রোড ধরে এগিয়ে প্রথম স্টপ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরের এক কাফেতে, দ্বিতীয় স্টপ চিত্তরঞ্জনে ঢোকার মুখে। যাঁরা ট্রেনে যাবেন, তাঁদের গন্তব্য অবশ্য সরাসরি মধুপুর স্টেশন। সেখান থেকে ভাড়ার গাড়ি কিংবা টাঙ্গা ভরসা।
মধুপুরে পা দিয়ে প্রথমেই যে কথাটা মনে হল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, তবে জায়গাটার ফ্লেভার আগের মতোই আছে এখনও। পুরনো ভিলাগুলির সংস্কার-বিনির্মাণ করে এক দিকে ভালই হয়েছে। বিখ্যাত-অখ্যাত বহু বাঙালিই পশ্চিমে বাড়ি তৈরি করতেন, ছুটিতে এসে সেখানকার জল-হাওয়ায় তাজা হয়ে শহরে ফেরার পথ ধরতেন। সেই বাড়ির কয়েকটিই অবশিষ্ট রয়েছে, বেশির ভাগই হয় হাতবদল হয়ে গিয়েছে, নয়তো ধ্বংসপ্রাপ্ত। আমরা জনা পনেরো গিয়ে যে ভিলায় উঠলাম, তার বয়সও প্রায় একশো ছুঁইছুঁই। বাড়ি সামলানোর ভার এখন তৃতীয় প্রজন্মের হাতে, যাঁরা সাধের বাংলোটিকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হতে দেননি। পুরনো চার্ম আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় মধুপুরে কাটানো কয়েকটা দিন আরামে-ভাল লাগায় ভরে উঠেছিল।