Advertisement
E-Paper

আল্পসের গায়ে ছোট্ট তুরিনে

ইতালির উত্তর দিকে আল্পসের গা ঘেঁষে ছোট্ট শহর তুরিন। আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম তুরিন থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ইতালির মিলান শহর থেকে। ভিনদেশি ট্রেনে চেপে। আগে লোকমুখে শুনেছিলাম ইতালীয় রেলের সুন্দর ব্যবস্থাপনার কথা। এ বার তা চাক্ষুষ করলাম।

দিয়া চক্রবর্ত্তী দত্ত

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪০

ইতালির উত্তর দিকে আল্পসের গা ঘেঁষে ছোট্ট শহর তুরিন।

আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম তুরিন থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ইতালির মিলান শহর থেকে। ভিনদেশি ট্রেনে চেপে।

আগে লোকমুখে শুনেছিলাম ইতালীয় রেলের সুন্দর ব্যবস্থাপনার কথা। এ বার তা চাক্ষুষ করলাম। মিলান থেকে তুরিন যাওয়ার রেলপথটি একেবারে আল্পসের কোল ঘেঁষে। যাত্রার শুরুতেই বেশ বুঝতে পারছিলাম, সামনেই আল্পসের অমোঘ আর্কষণ। এক ঘন্টার যাত্রাপথে প্রায় নিষ্পলক দৄষ্টিতে তাকিয়েছিলাম অপরূপ আল্পসের দিকে। সাদা বরফঢাকা পাহাড় চুড়োগুলোর গায়ে সূর্যের আলো পড়ে যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে। মাঝখানে বিশাল সবুজ প্রান্তর, আর তার কোলে ছোট ছোট বাড়ি। কেউ যেন সযত্নে রঙতুলি দিয়ে এঁকেছে ওই বাগানওয়ালা বাড়িগুলোকে। অনেকেই তুরিন যেতে এই পথটা বেছে নেয় শুধুমাত্র এই নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য।

তুরিন পৌঁছে স্টেশন থেকে বেরিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম, তাতে মনে হল যেন মাঝে মাত্র কয়েকটা বাড়ি, আর তার ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে সুবিশাল আল্পস আমাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ঘোর কাটতেই বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল। অদ্ভূত একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে প্রায় দৌড়তে শুরু করি। যেন একটু ছুটেই ধরে ফেলতে পারব ওই শ্বেতশুভ্র পাহাড়চুড়োকে।

আমরা তুরিনে যে ক’টি জায়গায় যাব বলে মনস্থির করেছিলাম, সেগুলি হল সংগ্রহশালা, রাজপ্রাসাদ এবং অবশ্যই তুরিনের গির্জা, যেখানে রাখা আছে বহূচর্চিত সেই ‘The Shroud of Turin’। কথিত আছে, ক্রশবিদ্ধ যীশুখ্রীষ্টকে তার অনুগামীরা ক্রশ থেকে নামিয়ে এনে একটি কাপড়ে জড়িয়ে রাখেন। পরে সেই কাপড়টি খোলা হলে দেখা যায়, সেই কাপড়ে অদ্ভুত ভাবে যীশুখ্রীষ্টের রক্তে তারই অবয়ব ফুটে উঠেছে। এই অলৌকিক ঘটনাটি যীশুখ্রীষ্টের ঈশ্বরিক ক্ষমতার প্রতীক বহূচর্চিত ‘The Shroud of Turin’।

তুরিন গির্জায় পৌঁছে দেখলাম সেই বেদীটি, যেখানে রাখা আছে সেই ‘The holy Shroud’-এর সামনে অনেকে মাথা নত করে আরাধনা করছে তাদের আরাধ্য দেবতার। খবর নিয়ে জানতে পারলাম সেখানে যে ‘Shroud’টি রাখা আছে, তা প্রকৃত ‘Shroud’-এর অনুকরণ মাত্র। আসলটি ২৫ বছর অন্তর এক বার জনসমক্ষে আনা হয়। ফেরার সময় আরও একবার ফিরে তাকালাম সেই কাঁচ ঘেরা বেদীটির ভিতর রাখা কাপড়টির দিকে।


দ্য শ্রাউড অব তুরিন

এর পর যেখানে গেলাম, সেটি হল তুরিনের সংগ্রহশালা। সামনে সুবিশাল তুষারাবৃত আল্পসকে সাক্ষী রেখে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বমহিমায়। এ এক সুবিশাল সংগ্রহশালা যার বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তৈলচিত্র ও ভাস্কর্য। প্রতিটি কোণায় রয়েছে বিভিন্ন সংস্কৃতির নিদর্শন। সব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, এই সংগ্রহশালাটি এক অসাধারণ শৈল্পিক সংগ্রহে মোড়া একটি স্থান। বলা বাহুল্য যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিরিখে এ এক মনোরম স্থান। হয়তো তাই জানালা দিয়ে এক দৃষ্টে কিছু ক্ষণ তাকিয়েছিলাম সুবিশাল পর্বতরাশির দিকে।


দ্য রয়্যাল প্যালেস অব তুরিন

এই সংগ্রহশালাটিরই একটি অংশ দিয়ে প্রবেশ করা যায় তুরিনের রাজপ্রাসাদে। পুরোটাই এখন কার্যত পর্যটনকেন্দ্র। ঝাঁ চকচকে প্রাসাদের বিভিন্ন কক্ষ, ছাদ ও দেওয়ালের মনোরম শৈল্পিক সৌন্দর্য দেখে মনে পড়ে গেল আমাদের কোচবিহার অথবা মুর্শিদাবাদের রাজবাড়ির কথা। শুধু একটু যত্নের, একটু প্রচারের অভাবে হয়তো মলিন হয়ে পড়ে রয়েছে বাংলার ইতিহাসের কতশত গৌরবান্বিত সাক্ষ্য। হয়তো এক দিন আমরা এগুলো তুলে ধরতে পারব বিশ্বের দরবারে। দেশবিদেশের মানুষ আসবে বাংলার ইতিহাসকে চাক্ষুস করতে। ফেরার সময় এ রকমই অনেক আশাআকাঙ্খা পাক খেতে লাগল। সাজ পোশাক যাই হোক না কেন, মনেপ্রাণে তো বাঙালি।

ফেরার সময় আরও ভাল করে দেখতে লাগলাম ওখানকার বাড়িঘরের আদলগুলো। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট্ট শহর তুরিনকে। ট্রেনের জানালার পাশের সিটে বসে ঠিক একই ভাবে বিদায় জানালাম আল্পসকে। পড়ন্ত বিকেলের নরম আলোয় তুষারাবৃত আল্পসকে মনে হল আরও সুন্দর, আরও মহাজাগতিক।

Travel Turin Italy Alps The Royal Palace of Turin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy