অন্য রকম ভ্রমণের শরিক হতে চলুন তেলকুপি। ছবি: সংগৃহীত।
চারপাশে জল আর দাঁড় বওয়ার শব্দ। টলমল করতে থাকা নৌকায় চেপে বেশ কিছু ক্ষণ গেলেই দূরে দেখা যায় প্রাচীন এক দেউল। দীর্ঘ দিন জলে থেকে নড়বড়ে তার গাঁথনি। চাইলে দু’দণ্ড দেউলের চাতালে বসে চারপাশের শোভা দেখতে পারেন। তবে ভাঙা দেউলের মধ্যে এখন আর কোনও বিগ্রহ নেই। খানিক দূরে দেখা মিলবে আরও একটি দেউলের। তারও অবস্থা একই রকম। এই এলাকার তৃতীয় দেউলটি বছরের বেশির ভাগ সময়েই থাকে জলের তলায়। তবে গরমের দিনে দামোদেরর জল কমলে, অংশবিশেষ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
জলপথে দেউল দেখতে যাওয়ার এই ভিন্ন অভিজ্ঞতার শরিক হতে এবার পুজোয় বেরিয়ে পড়তে পারেন তেলকুপির উদ্দেশে। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ নম্বর ব্লকের গ্রাম চেলিয়ামা থেকে কমবেশি সাত-আট কিলোমিটার দূরে তার অবস্থান।
একাধিক বইতে উল্লিখিত তথ্য বলছে, তেলকুপিতে প্রায় ২৫-২৬টি মন্দির বা দেউল ছিল। পরবর্তীতে দামোদরের উপরে পাঞ্চেত জলাধার তৈরির পরে এই মন্দিরগুলির বেশির ভাগই চলে যায় নদের গর্ভে। কোনও ভাবে মাথা উঁচিয়ে রয়ে গিয়েছে তিনটি দেউল। তার মধ্যে দু’টিকে বছরের প্রায় সব সময়েই দেখা গেলেও একটি শুধুমাত্র গরমকালে দামোদরের জল কমলে দেখা যায়।
কেউ কেউ মনে করেন, তেলকুপি নামটি এসেছে তৈলকম্প থেকেই। সংস্কৃতে তৈল মানে তেল। আবার কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে তৈল মানে এক ধরনের কর এবং কম্প কথাটি এসেছে মূলত কম্পন অর্থাৎ পরগনা থেকে। এ থেকে অনুমান, তৈলকম্প বা অধুনা তেলকুপি ছিল কর প্রদানকারী বা করদ রাজ্য। আবার অনেকেই মনে করেন, তেলকুপি ছিল অতীতের কোনও বন্দরনগরী। স্থানমাহাত্ম্য নয়, বরং এই স্থানে ঘুরে আসতে পারেন ইতিহাসের খোঁজে। এই দেউলগুলি আসলে জৈন মন্দির। বাংলায় যে এক সময়ে জৈন ধর্ম প্রচলিত হয়েছিল, এই দেউলগুলি সেই সাক্ষ্যই বহন করে। বহু পুরনো এই দেউলগুলি অযত্নে, সময়ের গ্রাসে নষ্ট হতে বসেছে। তবে ইদানীং সেখানে কিছু উৎসাহী পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংয়ের সুবাদে মাঝেমধ্যেই গ্রামে শহুরে লোকজনের পা পড়ছে।
তেলকুপি আসতে চাইলে, শুধু এই স্থানটি না ঘুরে তালিকায় রাখতে পারেন জয়চণ্ডী পাহাড়। পুরুলিয়ার আর এক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র জয়চণ্ডী পাহাড়েই সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে ছবির শুটিং হয়েছিল। জয়চণ্ডী পাহাড় থেকে তেলকুপির দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। শীত পড়তেই এখানে কচিকাঁচাদের পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ শুরু হয়। গরম ছাড়া সারা বছরই এখানে আসা যায়। জয়চণ্ডী পাহাড়ে চড়ার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি ভাঙতে গেলে বাড়তি দমের দরকার ঠিকই, কিন্তু এক বার পাহাড়ের উপরে উঠে গেলে, সেখান থেকে চারপাশের সৌন্দর্য মন ভাল করে দেবে। সেখানেই রয়েছে জয়চণ্ডী দেবীর মন্দির। মন্দিরের চাতালে বসে দু’দণ্ড জিরিয়ে নিতে পারেন। মন্দির সংলগ্ন একটি গাছও রয়েছে। যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা মানত করে সুতো বাঁধেন।
যেতে কত ক্ষণ সময় লাগবে?
কলকাতা থেকে জয়চণ্ডী পাহাড়ের দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। সেখান থেকে তেলকুপি আরও ২২ কিলোমিটার। গাড়িতে যেতে মোটমুটি ৬-৭ঘণ্টা সময় লাগবে।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে ডানকুনি হয়ে শক্তিগড়, পানাগড়, দুর্গাপুর হয়ে পৌঁছতে হবে শালতোড়া। সেখান থেকে রঘুনাথপুর হয়ে জয়চণ্ডী পাহাড়। জয়চণ্ডী পাহাড় থেকে তেলকুপি আসার পথে পড়বে লালপুর। সেখান থেকে তেলকুপি যাওয়ার পথ নির্দেশিকা দেওয়া বোর্ডও মিলবে। দামোদরের ঘাটে গিয়ে মাঝিদের সঙ্গে দরাদরি করে চেপে বসতে হবে নৌকায়। সেই নৌকাই ঘুরিয়ে আনবে তেলকুপির দেউল।
কোথায় থাকবেন?
জয়চণ্ডী পাহাড়ে থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুব আবাস রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে জয়চণ্ডী পাহাড় হিল রিসর্ট। তবে তেলকুপিতে থাকার কোনও জায়গা নেই। সেখানে ঘুরে লালপুরে খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন। জয়চণ্ডী পাহাড়ে না থাকতে চাইলে রঘুনাথপুরেও থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন।
আর কোথায় ঘুরবেন?
অযোধ্যা পাহাড়, গড় পঞ্চকোট, বড়ন্তি, পাঞ্চেত ঘুরে নিতে পারেন এখান থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy