Advertisement
E-Paper

হিল্লিদিল্লি তো হল, ঘরের কাছের অচেনা ঠিকানাগুলিতে ঢুঁ মারবেন নাকি? রইল শীতভ্রমণের নয়া হদিস

চেনা নয়, অচেনার আকর্ষণই যদি বেড়িয়ে পড়ার আনন্দ হয়, তবে চলুন তিন ঠিকানায়। জনপ্রিয়তা কম হলেও, জায়গাগুলি হতাশ করবে না মোটেই।

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:০৭
কাছেপিঠেই রয়েছে এমন অনেক জায়গা, যা হয়তো ঘোরা হয়নি। এবার চলুন ডাবুতে।

কাছেপিঠেই রয়েছে এমন অনেক জায়গা, যা হয়তো ঘোরা হয়নি। এবার চলুন ডাবুতে। ছবি: সংগৃহীত।

শীতের ছুটিতে কেউ ছুটছেন দার্জিলিং, কেউ আবার সিমলায় বরফে গড়াগড়ি খেতে। ঠান্ডায় যাঁদের প্রবল আপত্তি, তাঁরা কেউ আন্দামান যাচ্ছেন, না হলে বিশ্রাম নিতে পুরী, দিঘা তো হাতের কাছেই আছে।

কিন্তু পকেটে রেস্ত আর ছুটি— দুই কম থাকলে কি চেনা শহরের বার বার দেখা ঠিকানাতেই চক্কর খেতে হবে? রবি ঠাকুর যে বলেছিলেন—

‘‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,

ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,

একটি ধানের শিষের উপরে

একটি শিশিরবিন্দু।’’

তেমনই ঠিকানার সন্ধানে বেরিয়ে পড়ুন ট্রেনে, বাসে কিংবা গাড়ি করে। খানিক নির্জনতা, অজানাকে জেনে নেওয়া, প্রথাগত পর্যটনকেন্দ্রের বাইরে নতুন জায়গা আবিষ্কারের আনন্দই এনে দেবে মুক্তির স্বাদ।

ডাবু

নাম শুনে অবাক হচ্ছেন? এক সময়ে সেচ দফতরের মগরাহাট ড্রেনেজ ডিভিশনের অন্তর্গত ক্যানিংয়ের ডাবু এলাকা পর্যটনের জন্য যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। বসত চড়ুইভাতির আসর। পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে সেজে ওঠার কথাও ছিল। তবে কৃত্রিমতার ছোঁয়া এখনও সেখানে লাগেনি। বরং প্রকৃতির সাজেই বিভিন্ন ঋতুতে সেজে ওঠে ডাবু খাল।

ক্যানিং থেকে পৌঁছতে হয় সেখানে। কৌলিন্য হারানো ডাবুর নাম ইদানীং আবার শোনা যাচ্ছে ট্রাভেল ভ্লগারদের দৌলতেই। অনেকেই শীতের দিনে বেলাবেলি ঘুরে আসতে এই জায়গা বেছে নিচ্ছেন। ছবি তুলছেন, ভিডিয়ো করছেন।

ডাবু খাল সংলগ্ন এলাকার চারিদিক‌ে ম্যানগ্রোভের বিস্তার। খাঁড়িপথ ধরে এগোলে মিলবে সবুজের সমারোহ। এ ছাড়াও, ডাবুর সেচ দফতর সংলগ্ন বেশ কিছু জলাশয় ঘিরে প্রচুর বড় বড় গাছগাছালি রয়েছে। তেঁতুল আর কুলগাছের সম্ভার সাজিয়েছে প্রকৃতি। সারা ক্ষণ পাখিদের কলতান ও অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার ডাবু। রয়েছে নৌকোবিহারের ব্যবস্থাও। সারাটা দিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে এই জায়গা কিন্তু মনে ধরতেই পারে।

আসলে পর্যটনের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই এখানে। কিন্তু তবু অবহেলা-অনাদরে পড়ে থাকা জায়গারও নিজস্বতা আছে। যদি কেউ কয়েকটি ঘণ্টা সেই সবুজ, নীল আকাশ, খোলা প্রান্তর, জলাশয়ে এক টুকরো গ্রামীণ পটভূমি খোঁজেন, তবে খাবারদাবার গুছিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন সেখানে। খোলা মাঠে চাদর পেতে বসে খাওয়া-দাওয়া সারতে পারেন।

ডাবুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই যে, এখানে একসময় জলাশয়, খাল, সরকারি স্থানগুলিকে সংস্কার করে ইকো-ট্যুরিজ়ম প্রকল্প গড়ার কথা ভাবাও হয়েছিল। তবে বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনি। চাইলে ডাবু সেচ দফতরের অংশ বা স্থানীয়দের কথায় 'পার্ক' ঘুরে চলুন ডাবু গ্রামে। আনাচে-কানাচে হাঁটলে প্রকৃতি সঙ্গ দেবে সব সময়।

এ ছাড়াও ক্যানিংয়ে দেখতে পারেন, লর্ড ক্যানিংয়ের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি। ক্যানিং থেকে ঘুরে নিতে পারেন মৌখালির ব্রিজ। ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঘিরে রেখেছে সেই স্থান। এখান থেকে সূর্যাস্ত দারুণ দেখায়।

কী ভাবে যাবেন?

ক্যানিং থেকে গোলাবাড়ি দিকে যাওয়ার ট্রেকার বা অটোতে সাতমুখী হাট। ভ্যান বা টোটোয় ডাবু।

শিয়ালদহ থেকে সকালের দিকের ক্যানিং লোকাল ধরুন। স্টেশন থেকে টোটো বুক করে পৌঁছে যেতে পারেন ডাবুতে। কলকাতা বা শহরের যে কোনও প্রান্ত থেকে সড়কপথেও ক্যানিং পৌঁছে ডাবু যাওয়া যায়।

রামেশ্বর শিব মন্দির

এখন নতুন রূপে, রঙে দেখতে পাবেন মন্দিরটি।

এখন নতুন রূপে, রঙে দেখতে পাবেন মন্দিরটি। ছবি:সংগৃহীত।

দক্ষিণ ভারতের রামেশ্বরম যেতে হবে না, ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরেও রয়েছে বহু পুরনো এক শিব মন্দির। শুধু মন্দির দেখার জন্যই নয়, এই স্থানে যেতে পারেন নির্জনতা এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের আশায়। কাছ দিয়েই বয়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখা নদী।

সাহিত্যের পাতায় এই নদীর নাম এসেছে বারে বারে। লোকে বলেন, এই নদীর বালুচরে মিশে থাকে সোনার কণা। তা থেকেই নাম সুবর্ণরেখা। বালি-জল ছেঁকে বহু পরিশ্রমে নাকি সংগৃহীত হয় স্বর্ণকণা। তবে সোনার নদীর রূপ বর্ষাতেই বেশি উপভোগ্য। শীতে জল কিঞ্চিৎ কম বটে, তবে দিনের বেলা ঘোরার জন্য আবহাওয়া থাকে মনোরম।

গোপীবল্লভপুর থেকে নয়াগ্রামের দিকে এগোলে পৌঁছোনো যায় সেখানে। ৫ একর জায়গা জুড়ে মন্দির চত্বর। নিরালা চত্বরের সেই মন্দিরে উৎকল নির্মাণশৈলীর ছাপ স্পষ্ট। তবে প্রাচীন মন্দিরে এখন রঙের পোঁচ। নতুন করে সেজে উঠেছে স্থানটি।

গোপীবল্লভপুরের এই স্থানের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে রাম, সীতা, লব-কুশের কাহিনি। রয়েছে তপোবন। সেই স্থান আজও ঘুরে নেওয়া যায়। জনশ্রুতি, সীতার শিব চতুর্দশীর ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে দেব স্থপতি বিশ্বকর্মাকে দিয়ে এই মন্দির বানানো হয়েছিল। সেই অর্থে এর স্থান-মাহাত্ম্য নিছক কম নয়।

মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ১৬ শতকে নয়াগ্রামের রাজা চন্দ্রকেতু সিংহ মন্দিরটি পুনর্নিমাণ করান। মন্দিরের পাশে এখনও কিছু পাথুরে পুরনো স্তম্ভ চোখে পড়ে। সেগুলি অতীত ইতিহাসের সাক্ষ্য বয়ে বেড়াচ্ছে। আবার কেউ বলেন, এই স্তম্ভ না কি অসমাপ্ত মন্দিরের স্মৃতিচিহ্ন।

মন্দিরের সামনেই বিশাল পুষ্করিণী। প্রতি বছর শিবরাত্রিতে ধুমধাম করে পুজো হয়। ভিড় করেন নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দারা।

শীতের ছোট্ট ছুটিতে বেড়ানোর শখ থাকলে বেড়িয়ে পড়ুন গোপীবল্লভপুরের উদ্দেশ্যে। পিচরাস্তা গিয়েছে বনের ভিতরে। তপোবনের পথ নির্দেশিকা পেয়ে যাবেন রাস্তার ধারের বোর্ডে।লোকমুখে প্রচলিত, এই স্থানেই না কি দস্যু রত্নাকর ‘মরা’ থেকে রাম নাম জপে, পাপস্খলন করে বাল্মীকি হয়েছিলেন। ধ্যান করার সময় তাঁর গায়ে উইয়ের ঢিবি হয়ে গিয়েছিল। লোকমুখে শোনা যায়, এখানেই লব-কুশ বড় হয়েছিলেন।

সত্যি-মিথ্য বিচার না করেই বরং এই স্থান ঘুরে নিতে পারেন। খুবই নিরিবিলি পরিবেশ। রয়েছে উইয়ের ঢিবি। সীতার মন্দির। প্রজ্জ্বলিত অনির্বাণ ধুনি। এখানকার পুরোহিতেরা কাঠকুঠোর জোগান দিয়ে তা নিরন্তর জ্বালিয়ে রাখেন। এখানে রয়েছে হনুমানের মন্দির। ঘুরে নিতে পারেন গোপীবল্লভপুর ইকোপার্ক। সুবর্ণরেখার একেবারে কাছেই এটি।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে ঝাড়গ্রাম। সেখান থেকে গাড়ি বুকিং করে গোপীবল্লভপুর হয়ে নয়াগ্রাম। বাসে বা গাড়িতে কলকাতা থেকে সরাসরি গোপীবল্লভপুরেও যেতে পারেন। থাকার জন্য নদীর ধারেই হোম স্টে পেয়ে যাবেন।

হিজলি শরিফ এবং সৈকত

ঘুরে নিন পূর্ব মেদিনীপুরের হিজলির সৈকত।

ঘুরে নিন পূর্ব মেদিনীপুরের হিজলির সৈকত। ছবি:সংগৃহীত।

পূর্ব মেদিনীপুরের হিজলিতে রয়েছে মাজার এবং সৈকতও। কাঁথি মহকুমার অন্তর্গত খেজুরি থানার মধ্যেই এই স্থান। এক দিকে রসুলপুর নদীর মোহনা এবং বঙ্গোপসাগরের ঢেউ। তার পাশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। কয়েক হাত দূরে পাতাবিহীন শুকনো গাছ সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। উল্টোদিকে ধু-ধু বালি। আর সারি সারি ঝাউ গাছ। এক ঝলকে সৈকত দেখে মন ভরে উঠবে। বিস্তীর্ণ সৈকতে দিনের বেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। চলে বিকিকিনিও। ভাটার সময় বালি-কাদা পায়ে হেঁটে খানিকটা এগিয়ে গেলে দেখা মেলে সমুদ্র আর রসুলপুর নদীর মোহনার। তবে জোয়ারের সময় জল জনবসতির দিকে এগিয়ে আসে। তখন কিন্তু ঢেউয়ের আনন্দ নিতে জলে স্নান করতে নামেন পর্যটকেরা।

সৈকত দেখা হলে যেতে পারেন ঝাউবন পেরিয়ে হিজলির মসনদ-ই-আলা শরিফে। এটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় ক্ষেত্র। সব ধর্মের মানুষ এখানে আসেন। সারা বছর পুণ্যার্থীদের আগমন ঘটে।

কী ভাবে যাবেন?

দীঘাগামী বাস ধরে যাওয়ার সময় হেঁড়িয়ায় নামতে পারেন। সেখান থেকে শরিফ যাওয়ার বাস মিলবে। কলকাতা থেকে খেজুরির বাসে বোগা গিয়ে সেখান থেকে টোটোয় হিজলি মসনদ-ই-আলা দরগা এবং সৈকতে পৌঁছনো যাবে। ট্রেনে এলে কাঁথিতে নেমে রসুলপুর হয়ে যেতে পারেন।

Dabu Winter Travel Destination Travel Tips Offbeat travel destinations
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy