রয়েছে নানা অ্যা়ভেঞ্চারের ব্যবস্থা।
উজ্জয়ন থেকে ইনদওর। মধ্যপ্রদেশের অন্যতম বৃহৎ শহর এবং জমজমাট বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইনদওর। ট্রাফিক জ্যামও হয় খুব।
মরাঠা পেশোয়া রাজপরিবারকে সাহায্য করার সুবাদে ইনদওর আসে হোলকার রাজ মলহার রাওয়ের হাতে। শ্বশুরমশাই মলহার রাও হোলকার পুত্রবধূ অহল্যাবাইকে যে সতী হওয়া থেকে আটকেছিলেন তাই নয়, তাঁর হাতেই তুলে দিয়েছিলেন রাজ্য শাসনের ভার। যদিও তাঁর রাজধানী ছিল মহেশ্বরম কিন্তু ইনদওরকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে গড়ে তোলেন মহিয়সী রানি অহল্যাবাঈ। পরবর্তীকালে রাজধানী উঠে আসে মহেশ্বরম থেকে ইনদওরে। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় মধ্য ভারতের রাজধানী ছিল ইনদওর।
শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা খাজুরি বাজার যা গড়ে উঠেছে রাজ-ওয়াড়া অর্থাৎ হোলকারদের পুরনো প্রাসাদ ঘিরে। মরাঠা, মোগল ও ফরাসি স্থাপত্যের মিলন ঘটেছে ১৭৪৭ সালে তৈরি এই প্রাসাদে। সাত তলা প্রাসাদের নীচের তিন তলা পাথরের তৈরি, বাকিটা কাঠ। বেশ কয়েক বার বিধ্বংসী আগুন গ্রাস করেছে এই প্রাসাদকে, সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে আগুনে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাসাদের কিছুটা অবশ্য সারিয়ে তোলা হয়েছে। কাছেই আছে গোপাল মন্দির এবং আর্ট গ্যালারি। আর আছে খান নদীর ধারে হোলকার রাজাদের সমাধি বা ছত্তিসবাগ। হোলকার বংশের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লালবাগ প্যালেস। তিন দশকের বেশি সময় লাগে এই প্রাসাদ তৈরি হতে। ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্রাসাদের অনুকরণে তৈরি প্রবেশ তোরণটি। প্রাসাদের অন্দরমহলে ইউরোপের বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন। আছে তৎকালীন বৈভবের নমুনা, যেমন ইতালিয়ান মার্বেলের পিলার, ঝাড়বাতি, গ্রিক মুরাল ইত্যাদি। হোলকারদের আর এক মহলে বসেছে সেন্ট্রাল মিউজিয়াম। সোমবার বাদে প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা অব্দি খোলা। এই মিউজিয়ামে রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। শহরের অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে কাচমন্দির, ইন্দো-গথিক শৈলীতে ১৯০২ সালে তৈরি কিং এডওয়ার্ড হল, এখন যার নাম গাঁধী হল।
ইনদওর-এর কাপড়জামার দোকানের প্রশস্তি তো আছেই, বিশেষ করে ট্রাডিশনাল পোশাকের। এখানকার স্বর্ণব্যবসারও বেশ নাম। সোনা-রুপোর দোকানের জন্যে বিখ্যাত সারাফা বাজার। গয়না কিনুন আর নাই কিনুন, সন্ধ্যেবেলা অবশ্যই হাজির হবেন এখানে। দোকান বন্ধ হলেই রাস্তার ধরে স্টল সাজাতে শুরু করেন দোকানিরা, চালু হয়ে যায় ‘খাও গলি’ বা ‘নাইট স্ট্রিট ফুড মার্কেট’— মোটামুটি সাড়ে ৮টা নাগাদ জমে ওঠে খাও গলি, চলে গভীর রাত অব্দি। নানা ধরনের চাট, ভুট্টার টিকিয়া, মটর কচুরি, নানা ধরনের মিষ্টি পাবেন এখানে। ইনদওরের চামড়ার তৈরি খেলনাও বিখ্যাত।
এখানে বেসরকারি হোটেল আছে নানা।
ইনদওর ঘুরে এ বার চলুন মান্ডুর পথে, প্রায় ১০০ কিমি দূরত্ব সড়কপথে।
রানি রূপমতী ও মালোয়ার রাজা বাজ বাহাদুরের প্রেমকাহিনি মিশে আছে মান্ডু-র আকাশে বাতাসে। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের অতি প্রিয় মান্ডু, বিশেষ করে বর্ষাকালে। নাম দিয়েছিলেন তিনি সাদিয়াবাদ, অর্থাৎ সিটি অফ জয়। বলা হয় যে এখানে অবস্থিত হোসাং শাহের সমাধি নাকি ভারতের প্রথম শ্বেতপাথরে তৈরি সৌধ, যা দেখে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল বানানোর অনুপ্রেরণা পান।
মান্ডু জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা সৌধ, প্রাসাদ, ইত্যাদি। খুঁটিয়ে মান্ডু দেখতে হলে সপ্তাহখানেক লেগেই যাবে। কিন্তু আমাদের হাতে তো এত সময় থাকে না। তবুও যদি অন্তত দু’টি দিন রাখেন মান্ডু-র জন্য তা হলে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে নিতে পারবেন। মোটামুটি তিন ভাগে বিভক্ত মান্ডু-র প্রধান আকর্ষণ হল, ভিলেজ বা সেন্ট্রাল গ্রুপ, রয়াল গ্রুপ এবং রেওয়াকুণ্ড গ্রুপ।
ভিলেজ বা সেন্ট্রাল গ্রুপের মধ্যে পড়ে মান্ডুতে প্রবেশ করার তিন ফটক— আলমগির, দিল্লি ও ভাঙ্গি দরওয়াজা, আশরাফি মহল, রামমন্দির, দামাস্কাসের গ্রেট মস্কের অনুকরণে তৈরি জামি মসজিদ ও হোসাং শাহ-র সমাধি। মান্ডুর বাজার এলাকায় অবস্থিত শেষ দু’টি সৌধের জালির কাজ নজর করার মতো।
রয়াল গ্রুপের মধ্যে পড়ে বিখ্যাত জাহাজ মহল। কাপুর তালাও আর মুঞ্জা তালাও-এর মাঝে অবস্থিত প্রায় ১২০ মিটার লম্বা এই প্রাসাদ। জলে পরিপূর্ণ তালাওয়ে যখন এর ছায়া ভাসে তখন মনে হয় যেন রাজ-তরী চলেছে। ঘুরেফিরে দেখুন প্রাসাদের অন্দরমহল। সংলগ্ন তাবেলি মহলে বসেছে মিউজিয়াম, তবে সেখানে ছবি তোলা মানা। আর আছে হিন্দোলা মহল। এমন সুন্দর তার গঠন শৈলী যে বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে এই বুঝি বাতাসের ছোঁয়ায় দুলে উঠল কোণাকুনি দেওয়াল সমেত মহল, কিন্তু ভেতরে গেলে দেখা যাবে দিব্বি সোজা দাঁড়িয়ে দেওয়াল। দেখে নিন রানি রূপমতীর মহল বা চম্পা বাওলি, নহর ঝরোকা এবং জলমহল।