Advertisement
০১ মে ২০২৪
Punjab

পঞ্জাব দী সোয়াদ

কলকাতার পঞ্জাবি খাবারের সঙ্গে আসল পঞ্জাবি খানার ফারাক বিস্তর। অমৃতসরের গলি থেকে সেই স্বাদের রেশ নিয়ে ফিরলেন দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষকলকাতার পঞ্জাবি খাবারের সঙ্গে আসল পঞ্জাবি খানার ফারাক বিস্তর। অমৃতসরের গলি থেকে সেই স্বাদের রেশ নিয়ে ফিরলেন দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

রকমারি পঞ্জাবি খানা

রকমারি পঞ্জাবি খানা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ১৭:২৮
Share: Save:

হাজার হাজার মানুষ এক পঙ্‌ক্তিতে বসে খাচ্ছেন। অথচ কোনও ব্যস্ততা নেই, কোলাহল নেই! অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে না গেলে অভিজ্ঞতার ভাঁড়ারে একটা ফাঁকি পড়ে যেত। এখানে আপনিই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। সৌন্দর্য তো পরের বিষয়।

এখানকার বিশৃঙ্খলাহীন পরিবেশ কলকাতার বাঙালির কাছে একটু ধাক্কা বইকি! তবে একটা জায়গায় বাঙালি আর পঞ্জাবিদের বেজায় মিল। আড্ডা এবং খাওয়াদাওয়া। কলকাতার পঞ্জাবি খাবারের সঙ্গে অমৃতসরি খাবারের বিস্তর ফারাক। এঁদের রোজকার খাবার বলতে মক্কি দী রোটি আর সরসো দা শাগ। আর এত রকমের পরোটা পাওয়া যায় যে, খেয়ে কুল মেলে না! পঞ্জাবে মূলত ছিলাম অমৃতসরে। আধুনিকতার ধাক্কা লাগলেও কিছু এলাকা এখনও পুরনো রূপ-রস ধরে রেখেছে। জমজমাট এক চক এলাকায় আস্তানা নিয়েছিলাম। একদম কাছেই পরাঠে গলি। হাঁটার সময়ে গন্ধের তোড়ে ভরা পেটেও খিদে চনমনিয়ে ওঠে।

গোল্ডেন টেম্পেলের লঙ্গরখানা।

বিভিন্ন চকের নামে এক একটা অঞ্চল। সেখানে সার দিয়ে দোকান। পাপাজি পরাঠে ওয়ালে বা কেশর-দা-ধাবা বেশ জনপ্রিয়। অমৃতসরে আমাদের প্রথম দিনটি ছিল রবিবার। কলকাতায় থাকলে লুচি-আলুর তরকারি দিয়ে দিন শুরু হত। এখানে আলুর পরোটার সঙ্গে দই। ধোঁয়া ওঠা পরোটার টুকরো মুখে দিয়ে বুঝলাম, বাড়িতে আলুর পরোটার নামে যে জিনিসটা বানাই, সেটা আসলে কিস্সু নয়! সঙ্গে বড় গ্লাসে ঘন দুধের চা মেজাজ তৈরি করে দিল।

পঞ্জাবিদের মধ্যে অর্ধেক নিরামিশাষী। তাই এদের নিরামিষের আয়োজনও কম নয়। আলু গোবি, আলু টিক্কি, বেগুনের ভর্তা, পনিরের নানা পদ আর হরেক রকমের ডাল। তরকার প্রকার ভেদে বদলে যায় ডালের স্বাদ। ভাতের চেয়ে রুটির চলনই বেশি। রাইস মানে বিরিয়ানি বা পোলাও। নিদেনপক্ষে জিরা রাইস।

টুরিস্টের ভিড় অমৃতসরে বেশি হলেও ভাতিন্দা, লুধিয়ানা, পঠানকোট, পাতিয়ালা, জলন্ধর— প্রত্যেকটি জায়গাই সমান সুন্দর। এখানে জায়গা বিশেষে খাবারের তারতম্য হয় না। তফাত হয় রান্নার ধরনে। পঞ্জাবি খাবারের আসল স্বাদ লুকনো তাঁদের তন্দুরে।

নিরামিষের লোভনীয় তালিকার পাশে ল্যাম্ব, মাটন, চিকেন এবং মাছ বহাল তবিয়তে রাজ করছে। অমৃতসরি তন্দুরি চিকেন, বাটার চিকেন, ফিশ টিক্কার স্বাদ নেওয়ার সময়ে মনে কলকাতার তুলনা চলে আসছিল। যেহেতু এই অঞ্চলেই চাষ আবাদ হয়, তাই সব কিছুই টাটকা। দুধের স্বাদও আলাদা। ছাঁস থেকে তৈরি মাখন যে কোনও খাবারের স্বাদ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এদের দুধ-মাখন দুটোর জন্যই জোরদার হজম শক্তির দরকার।

আরও পড়ুন: ঐতিহ্যে, গৌরবে আজও অমলিন মহিষাদল রাজবাড়ির রথযাত্রা

পরোটার বদলে কুলচাও খাওয়া যায়। অনেক রকমের কুলচা মেলে। অমৃতসরের মকবুল রোডে কয়েকটি ভাল কুলচার দোকান পাওয়া গেল। লাঞ্চ-ডিনারে যখন খুশি কুলচা খাওয়া যায়। সঙ্গে কখনও চানা মসালা, কখনও পনির। ফুলকপি, শালগ্রাম, গাজরের তৈরি একটা আচার পাওয়া যায়। কুলচা, পরোটা, রুটি যে কোনও কিছুর সঙ্গে দিব্যি চলে যায়। আছে ছোলে বটুরেও। জাম্বো সাইজ়ের বাটুরে মানে একবেলার জন্য নিশ্চিন্তি!

শহর দেখার ফাঁকে মুখ চালানোটাও জরুরি। দুপুরের ভারী খাবারের পরে বিকেলের জন্য চাট যথেষ্ট। গলির মোড়ে মোড়ে দোকান। ঘুরতে ঘুরতে কুপার রোডের ব্রিজওয়াসি চাটের দোকানে পৌঁছে গেলাম। দই বড়া, ফুচকা... এখানকার ফুচকা আকারে প্রকারে বৃহৎ হলেও স্বাদে কলকাতাই এগিয়ে! বিকেলের স্ন্যাক্সে মুচমুচে টিক্কির সঙ্গে চা নেওয়া যেতে পারে। নয়তো লস্যি। চাপ ঘন দই দিয়ে তৈরি লস্যিতে পছন্দ মতো আম বা গোলাপের গন্ধ। তবে আমার ভোট বাটার মিল্কের দিকে। কলকাতার ধাবায় দুধ কোলা খেয়েছি। এখানে দুধ সোডা। পঞ্জাবিরাও মিষ্টি প্রিয়। ক্ষীর, মালপোয়া, গুলাব জামুন, মোতিচুর লাড্ডু, হালুয়া এবং কুলফি। লরেন্স রোডে বেশ ভাল কয়েকটি মিষ্টির দোকান রয়েছে।

অমৃতসরে দেখার জায়গার অভাব নেই। গোল্ডেন টেম্পল ছাড়া রাম তীর্থ, সেন্ট পলস চার্চ, জামা মসজিদ খাইরুদ্দিন এবং ওয়াঘা বর্ডার। তখনও গোল্ডেন টেম্পলের রেশ কাটেনি। তার মধ্যেই ওয়াঘা বর্ডার। প্রত্যেক দিন বিকেলে দু’দেশের সেনাদের এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য বেজায় ভিড় হয়। এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে গেলে রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেয়!

রিল্যাক্স করে ঘুরলে অমৃতসরের জন্য তিন দিন যথেষ্ট। এক দিন ফার্ম টুরিজ়মের টুর নিয়েছিলাম। মাইলের পর মাইল শস্য খেত দেখাও চোখের আরাম। হাইওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময়েও কিন্তু আসল ধাবার স্বাদ নিতে ভুলিনি।

নজর থাকুক

• এ বছর গুরু নানকের ৫৫০ তম জন্মবার্ষিকী। পঞ্জাব জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে

• বছরের যে কোনও সময়েই যাওয়া যায়। কোনও না কোনও উৎসব লেগেই থাকে। জানুয়ারিতে মাঘী মেলা, লোহরি। এপ্রিলে বৈশাখী। যাওয়া যায় দীপাবলির সময়েও

• বিমানে কলকাতা থেকে অমৃতসরে সরাসরি যাওয়া যায়। ট্রেনে অমৃতসর মেল, অমৃতসর এক্সপ্রেস, জালিয়ানওয়ালাবাগ এক্সপ্রেস রয়েছে। এ ছাড়াও দিল্লি হয়ে পৌঁছনো যায় পঞ্জাবে

আরও পড়ুন: অসমের পবিতোরার জঙ্গলে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

golden temple travel Food Punjab
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE