Advertisement
E-Paper

চাঁদের আলোয় কচ্ছের রণ দেখে এসে লিখলেন অভিনেত্রী সন্দীপ্তা

সূর্যমন্দির থেকে হোয়াইট ডেসার্ট, সোলো ট্রিপে গুজরাতের মাটি-হাওয়ার  স্বাদ নিয়েছেন সন্দীপ্তা সেনকচ্ছের রণ ফেস্টিভ্যালে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল অনেক দিনের। নিরামিষ খেতে হবে বলে অনেক বন্ধুই যেতে রাজি নয়! অগত্যা দ্বিতীয় সোলো ট্রিপের পরিকল্পনা করে ফেললাম

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৯:৫৮
হোয়াইট ডেসার্টে

হোয়াইট ডেসার্টে

কচ্ছের রণ ফেস্টিভ্যালে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল অনেক দিনের। নিরামিষ খেতে হবে বলে অনেক বন্ধুই যেতে রাজি নয়! অগত্যা দ্বিতীয় সোলো ট্রিপের পরিকল্পনা করে ফেললাম। গুগল ঘেঁটে নিজের মতো পড়াশোনা করে নিলাম। আর খোঁজে ছিলাম এক জন পাকা ড্রাইভারের। তিনিই ছিলেন আমার সফরসঙ্গী।

আমদাবাদ থেকে সূর্য মন্দির

এক রাতই আমদাবাদে কাটিয়েছিলাম। কলকাতার ফুচকাকে টেক্কা দেওয়া যায় না বলে ভাবতাম। তবে এখানকার ফুচকা খেয়ে আমি মত বদলাতে বাধ্য হলাম। পানিপুরির মধ্যে গরম চানার স্বাদ জিভে লেগে আছে! পরের দিন গিয়েছিলাম পটানে রানি কী বাব-এ (রানির কুয়ো)। এটা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। কুয়োটার স্থাপত্যশিল্প দেখার মতো। তার পরে গিয়েছিলাম মধেরা সান টেম্পল। স্থানীয়দের ধারণা, সূর্যের প্রথম কিরণ পড়ে এই মন্দিরের গায়ে। ওই মন্দিরে গুধমণ্ডপ, সভামণ্ডপ (প্রার্থনাস্থল) এমন আলাদা আলাদা ভাগ রয়েছে। আর একটা রিজ়ার্ভয়ার রয়েছে, যাকে ওরা বলে কুণ্ড। চালুক্য রাজাদের আমলে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল। সোলো ট্রিপে ছবি তোলার জন্য ড্রাইভারই ভরসা। তবে উনি আমার পাঁচটা ছবি তুললে, ওঁর দশটা ছবি আমাকে তুলে দিতে হয়েছে!

বাজানার রয়্যাল সাফারি ক্যাম্প

একই দিনে গিয়েছিলাম বাজানায়। এর আগে পাহাড় দেখেছি, সমুদ্রও দেখেছি। কিন্তু এমন ধূ ধূ প্রান্তর সত্যিই আগে দেখিনি। চার পাশে কিচ্ছু নেই! শুধু যত দূর চোখ যায়, রুক্ষ-শুষ্ক মাটি। ওখানে লেকের ধারে সারি বেঁধে আসে ফ্লেমিংগো। দূরবিন দিয়ে দেখেছিলাম তাদের। বর্ষায় যখন জল থাকে, তখন নাকি পাখিগুলো লেকের ধারে উড়ে আসে। পড়ে থাকা কয়েকটা রঙিন পালক সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এর পরে যখন জিপসি চড়ে বাজানার আরও ভিতরে গেলাম, বিস্ময় আরও বাড়ল। কোথাও কিচ্ছু নেই! মাঝখানে একটা তাঁবুর মতো বাড়ি। জানতে পারলাম, মেশিন দিয়ে মাটির অনেক নীচ থেকে জল তুলে আনা হয়। সেই জল থেকে লবণ আলাদা করে তা ক্রিস্টালাইজ় করা, ফ্যাক্টরিতে পাঠানোর আগে পর্যন্ত নানা ধরনের সল্ট ফার্মিংয়ের কাজ হয় ওই বাড়িতে। কাজটা করেন এক দম্পতি। তাঁদের বাড়িতে বসে চা-ও খেলাম। এই কাজ করতেই বছরের আট মাস কেটে যায় ওঁদের। তবে পারিশ্রমিক পান খুবই কম। শুনে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল!

ভারত-পাক সীমান্তে ধোলাবীরা

আমি যখন বাড়িতে বলেছিলাম ধোলাবীরায় যাব, তখনও ভারত-পাকিস্তান পারস্পরিক সম্পর্কে সাম্প্রতিক চাপানউতোর ছিল না। তবুও বাড়ির সকলের খুব টেনশন ছিল। ওখানে জওয়ানদের ক্যাম্প আছে। আমি নিজে জওয়ানদের সঙ্গে গিয়ে কথাও বলেছি। ওঁদের জীবনযাত্রা, রোজনামচা শুনে মনে হল, এটাও এক ধরনের বাঁচা বটে! তবে ধোলাবীরায় ঢোকার একশো কিলোমিটারের মধ্যে আমি এক জন মানুষও দেখতে পাইনি! চার দিকে শুধু শোঁ শোঁ হাওয়া, ধুলোর ঝড়! পৃথিবীটা যে গোল, এই প্রান্তে এলে বোঝা যায়। আর একশো কিলোমিটার পরে ছোট একটা গ্রাম রয়েছে, যেখানে বাজার-হাট বসে। ওই গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম বলতে দিনে একটা মাত্র বাস! তবে যা দেখতে আমি সবচেয়ে এক্সাইটেড ছিলাম, সেটা হল হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। ইতিহাসের পাতায় পড়া আর্কিটেকচারগুলো নিজের চোখে দেখে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আর ফসিল পার্কেও গিয়েছিলাম। আবহবিকারের কারণে পাথরের উপরে পরিবর্তনগুলো কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।

মধেরা সান টেম্পল

পূর্ণিমার রাতে হোয়াইট ডেসার্টে

অবশেষে সেই দিন, যার জন্য আমার এই সোলো ট্রিপ। রণ ফেস্টিভ্যালে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন। মুম্বই থেকে তিন কলেজ পড়ুয়া এসেছিল গার্লস ট্রিপে। ওরা আবার আমার সোলো ট্রিপ শুনে খুব উত্তেজিত! ফেস্টিভ্যালে গুজরাতি ট্র্যাডিশনাল নাচ-গান হয়। আর থাকে খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজন। খাকড়া-থেপলার পাশাপাশি নিরামিষ তরকারির নানা পদ। তবে যেটা আমি রেফার করতে পারি, তা হল জিলিপি। বিকেলে গিয়েছিলাম হোয়াইট ডেসার্টে। সেটাও ছিল পূর্ণিমার রাত। সাদা মরুভূমির উপরে চাঁদের আলো, মেঘের সঙ্গে চাঁদের লুকোচুরি...শরীর-মনের সব ক্লান্তি যেন নিমেষে দূর হল। অসম্ভব ভাল লাগায় মন ভরে গিয়েছিল। যেন চাঁদ সঙ্গে থাকলেই আর কিছু চাই না আমার। টেন্টে ফিরে ডিনার করলাম। তবু মন কেমন করছিল! সেই রাতেই আবার ডেসার্টে গিয়েছিলাম। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে চাঁদ দেখছিলাম। আমার ড্রাইভার এক বার চাঁদ আর এক বার মোবাইলে স্ত্রীর ছবি দেখছিলেন!

যদি আমি কোনও দিন বিয়ে করি, নিশ্চয়ই সেই মানুষটিকেও এখানে নিয়ে আসব...

যা রয়েছে মনে...

আমদাবাদের পানিপুরি আর রণ ফেস্টিভ্যালের জিলিপি আমি অবশ্যই সবাইকে চেখে দেখতে বলব. শপিং বলতে গুজরাতি কাজের হ্যান্ডব্যাগ, চাদর, ওড়না কিনেছিলাম। ঘাগড়া-চোলি কেনার ইচ্ছে থাকলেও সুটকেসে আর জায়গা ছিল না। সোলো ট্রিপে গেলে ড্রাইভার পাকা হতেই হবে। ওটা আগেই দেখে নিই।

Travel Travel and tourism Gujarat Great Rann of Kutch
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy