কাজের সূত্রে হিল্লি-দিল্লি করতে হয় মাঝেমধ্যেই। সে আলাদা ব্যাপার। কিন্তু পরিবার নিয়ে বেড়ানোর কথা ভাবতে গেলেই মাথায় চাপে বাড়তি চাপ। ছটফটে সন্তানকে চোখে চোখে রাখা, তার স্বাস্থ্যের খেয়াল, গিন্নির মর্জিমতো ঘর, বয়স্কা মায়ের স্বাচ্ছন্দ্যের খেয়াল, তার উপর টিকিট, গাড়ি বুকিং, হোটেল— সে সব তো আছেই!
মনোবিদ মুস্কান মারওয়ার কথায়, বেড়াতে যাওয়া যেমন আনন্দের, তেমনই কখনও কখনও তা মানসিক চাপের কারণ হয়ে ওঠে কারও কারও ক্ষেত্রে। বিমানবন্দর হোক বা ট্রেন, কী ভাবে যাওয়া হবে, যে রকম পরিকল্পনা রয়েছে সেই ভাবে ঘোরা যাবে কি না, সে সব চিন্তা রয়েই যায়। এর সঙ্গে শারীরিক, মানসিক নানা বিষয়ও জুড়ে যায়। অফিস বা পেশাগত চাপ সামলে বে়ড়ানোর সময় বার করা, বড় অঙ্কের খরচ, লম্বা যাত্রার ধকল, ঘুমের অসুবিধা, খাওয়ার বদল, পরিবারের লোকজনের সুবিধা-অসুবিধা দেখা, এগুলিও যুক্ত হয়ে যায় কারও কারও ক্ষেত্রে। বিশেষত উৎসব বা আনুষ্ঠানিক ছুটির সময়ে বেড়ানোর জন্য ভ্রমণার্থীদের চাপ বেশি থাকলে সমস্যা হয় আরও বেশি। তবে এই চাপ সামাল দেওয়া যায় সহজ কয়েকটি শর্তে।
কী সেই শর্ত?
আগাম পরিকল্পনা: অনেক সময় উৎসবের আবহ, জাতীয় ছুটির দিনগুলিতে বাড়তি ভিড় হলেও ছুটির কথা মাথায় রেখে সেই সময়ে ভ্রমণের কথা ভাবতে হয়। কিন্তু এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে আগাম পরিকল্পনা। হুট করে দিন ঠিক করে দ্রুত বেরিয়ে পড়া বন্ধুবান্ধব বা ব়ড়দের নিয়ে সম্ভব হলেও বয়স্ক বা শিশু থাকলে এতে অসুবিধা হতে পারে। তা ছাড়া আগাম পরিকল্পনা করলে সুষ্ঠু ভাবে ট্রেন, বিমানের টিকিট কাটা যায়, বাসেও পছন্দের জায়গা বেছে নেওয়া যায়। যাওয়ার সময় দুম করে টিকিট কাটতে গেলে যে বাড়তি খরচ হয়, তা-ও এ ভাবে এড়ানো সম্ভব। বিশেষত পরিবার নিয়ে গেলে ভাল ঘরের দরকার হয়। হাতে সময় রেখে বেড়ানোর পরিকল্পনা করলে বিষয়টি সহজ হতে পারে।
লম্বা যাত্রায় পছন্দকে গুরুত্ব দিন: লম্বা ট্রেন, বাস বা বিমান যাত্রা বেশির ভাগ সময়েকই ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। এই সময় বরং সঙ্গে পছন্দের গান সংগ্রহ করে নিন। সঙ্গে ল্যাপটপে পছন্দের ওয়েব সিরিজ়, সিনেমাও রাখতে পারেন। সঙ্গে খুদে থাকলে তার পছন্দের কার্টুন, গেম ভরে রাখুন মোবাইলে। সে অধৈর্য হয়ে উঠলে, এগুলি কাজে লাগানো যেতে পারে।
বাস্তবসম্মত মানসিকতা: ঝকঝকে হোটেলের ঘর দেখে বুকিং করলেন, কিন্তু আশাহত হতে হল। চালককে আগাম টাকা দিলেন, দেখা গেল বেড়াতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সমস্যার জেরে মেজাজটাই বিগড়ে গেল। বেড়ানোর আগে কী ভাবে ঘোরা হবে, সবটা নিয়েই আশা তৈরি হয়। কিন্তু মাথায় রাখা প্রয়োজন, যতটা আশা করে যাচ্ছেন তার সব শর্ত পূরণ না-ও হতে পারে।
গোছগাছ: বেড়ানোর ক্ষেত্রে গোছগাছও কখনও কখনও বাড়তি চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত দৈনন্দিন ব্যস্ততার পর ব্যাগ গোছানোর সময় বের করাই কঠিন হয়ে যায়। তাই বেড়ানোর পরিকল্পনা করার সঙ্গে সঙ্গেই পোশাক, প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে এক জায়গায় রাখলে সুবিধা হয়। অতিরিক্ত জিনিসের বদলে আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ট্রলি, রুকস্যাক ব্যবহার করলেও সুবিধা হবে। বেড়াতে যেতে গেলে পরিচয়পত্র, টিকিট সঙ্গে রাখা আবশ্যক। সেগুলিও আগে থেকেই গুছিয়ে রাখলে বেরোনোর সময় কিছুটা চিন্তামুক্ত থাকা যায়।
যত্ন এবং স্বাচ্ছন্দ্য: বেড়াতে গিয়ে কারও লক্ষ্য থাকে শুধুই ঘোরা। প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো। কিন্তু বিশ্রাম না নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাড়িতে ঘোরা, ঠিকমতো না খাওয়া কষ্টকর হতে পারে। তাই হাতে বাড়তি সময় রেখে এমন ভাবে পরিকল্পনা করতে পারেন যেখানে বিশ্রামের সময়, যথাযথ খাওয়া এবং ঘুমের অভাব না হয়।