হিমাচল প্রদেশের স্বল্পচেনা পাহাড়ি গ্রাম জিভি। ছবি: সংগৃহীত।
হিমাচল প্রদেশ বললে প্রথমেই মাথায় আসে শিমলা, কুলু, মানালির নাম। বছর ১০-১৫ পিছিয়ে গেলেও কলকাতার বাঙালি হিমাচল বলতে এই জায়াগুলি বুঝতেন। থাকার জায়গা হিসাবে বেছে নিতেন শিমলার কালীবাড়ি। তবে এখন ভ্রমণের পরিসর বেড়েছে। হিমাচল প্রদেশে ঘোরার তালিকায় জুড়েছে সারাহান, সাংলা, কল্পা, মণিকরণ, ভুন্টার, নাকো, টাবো, কাজা-সহ আরও অনেক স্থান। তবে এই সবের বাইরেও যদি হিমাচলকে উপভোগ করতে চান, ঘুরে নিতে পারেন অল্প চেনা আরও কয়েকটি স্থান।
জিভি, কুলু
নিবিড় ভাবে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে পারেন জিভি। চেনা কুলুর অন্তরালেই রয়েছে পাইন ঘেরা, ছোট্ট সুন্দর গ্রাম জিভি। কুলুর বাঞ্জার উপত্যকায় তার অবস্থান। গত কয়েক বছর ধরে এই গ্রাম ও আশপাশে ক্রমশ পর্যটকদের আনোগানা বাড়ছে। কুলু শহর থেকে মোটামুটি ৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে গ্রামটি। এই গ্রামটিকে কেন্দ্র করেই বর্তমানে পর্যটনের বিকাশ হয়েছে। এখানে ঝাঁ চকচকে হোটেল পাওয়া যাবে না ঠিকই, তবে এখানে থাকার জন্য রয়েছে হোম স্টে, অতিথি নিবাস। জিভি থেকে ঘুরে নিতে পারেন জিভি জলপ্রপাত, জলোরি পাস-সহ বেশ কয়েকটি জায়গা।
জিভি জলপ্রপাত
জঙ্গলের মধ্যে হাঁটা পথে কিছুটা গেলে পৌঁছনো যায় জিভি জলপ্রপাতের কাছে। পাতা ঝরার শব্দ, পাখির ডাক ছাড়া সেখানে আর কোনও শব্দ নেই। জিভি জলপ্রপাতে যাওয়ার একটি প্রবেশ দ্বার রয়েছে। তার আগে পর্যন্ত গাড়ি যায়। সেই প্রবেশ দ্বার দিয়ে চড়াই পথে মিনিট ১৫ হেঁটে পৌঁছনো যায় জলপ্রপাতের কাছে। পথে পড়বে কাঠের ছোট্ট সেতু। সেই সব পার জলের শব্দ শুনতে শুনতে এগিয়ে গেলে পৌঁছনো যাবে জলপ্রাপতের কাছে। পাথেরর ফাটল দিয়ে সশব্দে ঝরে পড়ছে অবিস্রান্ত জলধারা। সেখানে খানিক চুপটি করে বসে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারেন।
গ্রীষ্মের সময় জিভির আবহাওয়া থাকে বেশ মনোরম। তবে শীতে এখানে বরফও পড়ে। গরম হোক বা শীত, বছরভরই জিভি সুন্দর। এখন গ্রাম্য জীবন, সরল জীবনযাত্রা ভুলিয়ে দিতে পারে শহুরে ক্লান্তি।
জালোরি পাস
জিভি থেকে ঘুরে নিতে পারেন জালোরি পাস। মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরেই আর জলোরি পাসও নিরালা ভ্রমণের আর এক স্থান। জালোরি পাসের মাথায় রয়েছে ছোট্ট একটি মহাকালী মন্দির।
জালোরি পাস থেকে একাধিক ট্রেক করা যায়। সরলসার হ্রদ ও রঘুপুর গড়।
সরলসার হ্রদ
জালোরি পাস থেকে সরলসার হ্রদের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। চড়াই-উতরাইয়ে বেয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। শরীর ফিট থাকলে, ঘণ্টা দুই-তিনেকের মধ্যেই পাহাড় ঘেরা ছোট্ট হ্রদের ধারে পৌঁছনো যায়। জল এখানে কাচের মতো স্বচ্ছ। সেই নিসর্গের সামনে দাঁড়ালে মনে হবে এতটা পথ হাঁটা সার্থক। সময় নিয়ে গেলে, এখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারেন।
হ্রদের চারপাশে গাছ থাকলেও কোনও পাতা জলে পড়ে থাকে না। বলা হয়, এখানকার পাখিরা নাকি সেই পাতা ঠোঁটে তুলে ফেলে দেয়। আসলে সরলসার হ্রদকে ভীষণ পবিত্র বলেই মনে করেন স্থানীয়রা। হ্রদের কাছেই রয়েছে বুড়ি নাগিনের মন্দির। ছোট্ট সেই মন্দিরও যেন প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই।
রঘুপুর গড়
জালোরি পাশ থেকে একটি রাস্তা এসেছে সরলসার হ্রদে। অন্য একটি রাস্তা চলে গিয়েছে রঘুপুর গড়ের দিকে। জালোরি পাস থেকে রঘুপুর গড় হাঁটাপথে ৫ সাড়ে ৫ কিলোমিটার। তবে খাড়াই পথে হাঁটতে হয়। খুব সহজ নয় ট্রেক। এখানে রয়েছে ভাঙা দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। জায়গাটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এখানে রয়েছে বিস্তৃত একটি উপত্যকা। সেখানেই ভিউ পয়েন্ট। যেখান থেকে দেখা যায় বহু দূরের শ্বেতশুভ্র পাহাড়চূড়া। দেখা যায় আশপাশ।
এখান থেকে হেঁটে চলে যেতে পারেন রঘুপুর হ্রদ। দূরত্ব সামান্যই। সবুজ উপত্যকায় ছোট্ট একটি জলাশয়। সেখান থেকে আরও কিছুক্ষণ হাঁটলে পৌঁছনো আরও একটি জায়গায়। তার নাম পান্ডুরোপা। পাণ্ডবদের থেকে এই স্থানের নামকরণ। জায়গাটি একেবারে সবুজ।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে বিমানে বা ট্রেনে দিল্লি পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে হিমাচল প্রদেশ পৌঁছতে পারেন। কুলু যাওয়ার জন্য দিল্লি বা চণ্ডীগড় থেকে বাস পাওয়া যায়। চণ্ডীগড়-মানালি হাইওয়ে ধরে পৌঁছনো যায় জিভিতে। বিমানে অথবা ট্রেনে বা গাড়িতে চণ্ডীগড় পৌঁছে সেখান থেকেও সড়কপথে হিমাচলের যে কোনও প্রান্তে পৌঁছনো যায়। হাওড়া থেকে ট্রেনে কালকা গিয়ে, সেখান থেকে টয় ট্রেনে পৌঁছনো যায় শিমলা। শিমলা ঘুরে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে জিভি পৌঁছতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
জিভিতে বিলাসবহুল হোটেল নেই। তবে এখানে অতিথিশালা ও হোমস্টে রয়েছে। গ্রামে স্থানীয় খাবার উপভোগ করতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy