পুজোর ছুটি হোক কিংবা মহালয়া— কাছেপিঠেই ঘুরতে যেতে চান? যাওয়ায় তেমন ঝক্কি নেই, অথচ সে জায়গায় থাকবে না বাড়তি ভিড়, এমনই গন্তব্যের হদিস রইল আনন্দবাজার ডট কম-এ।
সাগর তবে উত্তাল ঢেউ নেই, সৈকতে রাশি রাশি দোকানও গজিয়ে ওঠেনি, সমুদ্রতটের সঙ্গে সমান্তরালে রয়েছে ঝাউ-ম্যানগ্রোভের বন— এমন ঠিকানা রয়েছে এই বঙ্গেই। খুব দূরে নয়। যেতে হয় নামখানা হয়ে। নাম তার লালগঞ্জ।
সাদা বালুতট আর লাল কাঁকড়াই লালগঞ্জের সৈকতের বৈশিষ্ট্য। ঠিকা দিঘা বা পুরীর সঙ্গে সাগরের মিল নেই বটে, তবে এখানেও আছে নিজস্ব সৌন্দর্য। জোয়ারে জলের সঙ্গে ঢেউও বাড়ে। কোমর পর্যন্ত ভেজে বড় জোর। কিন্তু এখানকার নিরালা পরিবেশ, ভোরবেলা জাল ফেলে মাছধরা দেখা, ঘরোয়া খাবারের স্বাদ, অখণ্ড অবসর— সব মিলিয়ে দু’দিনে দারুণ উপভোগ্য হতে পারে জায়গাটি।
কলকাতা থেকে দূরত্ব ১২২ কিলোমিটার। ডায়মন্ড হারবারের রাস্তা ধরে গেলে একে একে পড়বে উস্তি, নিশ্চিন্তপুর, কাকদ্বীপ, নামখানা। সে সব রাস্তা পার করে হাতানিয়া-দোয়ানিয়ার উপর সেতু দিয়ে পথ এগিয়েছে। ভোর ভোর বেরোলে সকাল দশটার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায়।
লালগঞ্জ সৈকত পৌঁছতে দশ মাইল থেকে সৈকতের রাস্তা ধরতে হবে। সমুদ্রতট বেশ নিরালা। সেখানে সময় কাটানোর পাশাপাশি গ্রামের পথে হাঁটতেও নেহাত মন্দ লাগবে না। তবে চড়া রোদের সময়ে হাঁটাহাটি বা ঘোরাঘুরি এড়িয়ে বরং ছায়ায় বসে সমুদ্র উপভোগ করতে পারেন।
দুপুরে খেয়েদেয়ে বেরিয়ে পড়ুন হেনরি আইল্যান্ডের উদ্দেশে। লালগঞ্জের পাশেই এই সৈকত। মাছের ভেড়ি পার করে ম্যানগ্রোভ ঘেরা পথ মিশেছে বালুতটে।বিকালবেলাটা এখানে সময় কাটিয়ে নিন কিছুক্ষণ। তবে সূর্যাস্ত উপভোগ করুন কার্গিল বিচে। হেনরি থেকে ফ্রেজারগঞ্জ হয়ে কার্গিল সৈকত আধ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে। এখান থেকে দারুণ দেখায় সূর্যাস্ত।
পর দিন সকালে ঘুরে নিন বকখালি সৈকত এবং ‘ডিয়ার অ্যান্ড ক্রোকোডাইল পার্ক’। এখানে হাঁটলে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল মনে করাবে সুন্দরবনের কথা। দেখা মিলবে কুমিরের। রয়েছে হরিণও।
বকখালিতে থেকে দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়া করে বেরিয়ে পড়ুন ফেরার পথে। ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে ফেরার সময় ডায়মন্ড হারবারে খানিক ক্ষণ দাঁড়িয়ে গঙ্গার রূপ দর্শন করতে পারেন। কিছুটা সময় এখানে কাটিয়ে নিলে মন্দ লাগবে না। পরের গন্তব্য জোকার কাছে স্বামীনারায়ণ মন্দির। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে মন্দির। নির্মাণশৈলী, সুন্দর বাগিচা, পাথরের কারুকাজ দৃষ্টিনন্দন। বাংলার মন্দির স্থাপত্যের সঙ্গে কোনও মিল নেই এর। বরং খুঁজলে সাযুজ্য পেতে পারেন পশ্চিম ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে। স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের মন্দির রয়েছে গুজরাত-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। তার মধ্যে এটিও একটি। জানা যায়, এই ভক্তিবাদী সম্প্রদায়ের সূচনা হয়েছিল যোগী সহজানন্দ স্বামীর হাত ধরে। তিনিই ‘স্বামীনারায়ণ’ নামে পরিচিত। রাধাকৃষ্ণ-সহ স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সন্ন্যাসীর মূর্তি রয়েছে এখানে। সকাল ৭টা থেকে ১২টা এবং বিকাল ৪টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে। তার পর ফেরার পথ ধরে নিন।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে নামখানা হয়ে এগোতে হবে। দশমাইল থেকে যেতে হবে লালগঞ্জ সৈকত। বাকি সৈকতগুলিও ১০-১৫ কিলোমিটারের মধ্যেই। দু’দিনেই এই জায়গাটি ঘোরা হয়ে যায়।
কোথায় থাকবেন?
লালগঞ্জে একটি হোম স্টে রয়েছে। হেনরি আইল্যান্ডে মৎস্য দফতরের থাকার জায়গা আছে। না হলে বকখালিতে থাকতে হবে। সেখানে বিভিন্ন মানের হোটেল আছে।