বিশ্ব এই পরিবারকে চেনে ধনকুবের হিসাবে। তবে বৈভবেও নিজেদের সংস্কৃতিকে কোনও ভাবেই ভুলে যায়নি মুকেশ অম্বানীর পরিবার। বরং নিয়ম করে পুজোপাঠের প্রচলন রয়েছে এই পরিবারে। বাড়ির প্রত্যেক সদস্যকেই বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে যেতে দেখা যায়। সম্প্রতি বড় ছেলে আকাশ, পুত্রবধূ শ্লোকা, নাতি এবং নাতনি পৃথ্বী এবং বেদাকে নিয়ে গুজরাতের দ্বারকায় দ্বারকাধীশ মন্দিরে গিয়েছিলেন রিলায়েন্স-কর্তা মুকেশ অম্বানী। সাজপোশাকে বিশেষ বাহুল্য ছিল না কারও। বরং ভক্তিভরে সেই মন্দিরে বিগ্রহ দর্শন করে আসেন তাঁরা। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিয়োটি। গুজরাতের জামনগর থেকে মার্চের ২৯ তারিখ হেঁটে যাত্রা শুরু করেছিলেন, ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৬ এপ্রিল দ্বারকা পৌঁছন দেশের অন্যতম বিত্তশালী ব্যবসায়ী মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত অম্বানী। সেই দ্বারকার মন্দিরেই এবার বড় ছেলে আকাশের সঙ্গে গেলেন মুকেশ অম্বানীও।
চাইলে অম্বানী পরিবারের মতো দ্বারকাধীশ মন্দিরে যেতে পারেন, পুজো দিতে পারেন আপনিও। বহু প্রাচীন এই মন্দিরের স্থাপত্য, ভাস্কর্যও চোখে পড়ার মতোই। কী ভাবে যাবেন সেই মন্দিরে, কী তার বিশেষত্ব?

সপরিবারে দ্বারকাধীশ মন্দিরে মুকেশ অম্বানী। ছবি: সংগৃহীত।
গোমতী নদীর তীরে দ্বারকা গুজরাতের একটি শহর। তবে মহাভারতেও শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী হিসাবে দ্বারকার উল্লেখ ছিল। সেই নগরী অবশ্য আজ আর নেই। পরে একই নামে অন্য নগর গড়ে ওঠে। সেই দ্বারকাতেই রয়েছে দ্বারকাধীশ মন্দির। দ্বারকাধীশ অর্থাৎ দ্বারকার যিনি রাজা বা অধিপতি। নামেই প্রকাশ, এই মন্দির শ্রীকৃষ্ণের। হিন্দুদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্রের মধ্যে এটিও একটি। এই মন্দির 'জগৎ মন্দির' নামেও পরিচিত।
দ্বারকার এই মন্দির ঠিক কত সালে নির্মিত হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। তবে জানা যায়, বার বার এই মন্দিরে হামলা হয়েছে। মন্দির পুনর্নির্মিত হয়েছে। ১৪৭৩ সালে গুজরাতের সুলতান মাহ্মুদ বেগাদার আক্রমণে মূল মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমান মন্দিরটি ১৬ শতকে নির্মিত।
স্থাপত্যশৈলী

দ্বারকাধীশ মন্দিরের স্থাপত্য, দেওয়ালের কারুকাজ অপূর্ব। ছবি: সংগৃহীত।
গ্রানাইট এবং বালি পাথরে তৈরি ৫ তলা মন্দির ৭২টি পাথুরে স্তম্ভর উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ নিয়ে অবশ্য বিতর্কও আছে। কেউ বলেন, স্তম্ভের সংখ্যা ৬০। ২৫৬ ফুট উচ্চ মন্দিরের শীর্ষে শোভা পায় ৫০ ফুটের ত্রিকোণ ধ্বজা। দ্বারকা শহরের দূর-দূরান্ত থেকে চোখে পড়ে মন্দির শিখর এবং ধ্বজা। পূর্ব-পশ্চিমে মন্দিরের বিস্তৃতি ২৯ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ২৩ মিটার। মন্দিরের দেওয়াল জুড়ে খোদিত দেবদেবী এবং পশুপাখির মূর্তি। পাথরের গায়ে সুনিপুণ কারুকাজ।
মন্দিরের দুই দরজা। মূল প্রবেশপথকে বলা হয় 'মোক্ষদ্বার'। বেরোনোর পথ হল 'স্বর্গদ্বার'। গোমতীর তীরেই মন্দিরে। মন্দির থেকে ৫৬টি ধাপ নেমে গিয়েছে নদীতে।
দ্বারকাধীশ মন্দিরে কৃষ্ণ পূজিত হন রাজা হিসাবেই। তিথি নক্ষত্র মেনেই হয় পুজোপাঠ, ভোগ নিবদেন।
মন্দিরের সময়সূচি: মন্দির দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় সকাল সাড়ে ছ’টায়। বন্ধ হয় রাত সাড়ে ন’টায়। তবে দুপুরে বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য দর্শন বন্ধ থাকে।
দ্বারকায় আর কী দেখার আছে?
দ্বারকাধীশ মন্দিরের আকর্ষণই সবচেয়ে বেশি। তবে এখানে রয়েছে রুক্মিনী মাতা মন্দির, নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ, দ্বারকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে দ্বীপ বেট দ্বারকা। পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে বেট দ্বারকাও অত্যন্ত জনপ্রিয়। দ্বারকায় আরব সাগরের তীরে রয়েছে সৈকত।
কী ভাবে যাবেন?
দ্বারকার কাছের দু’টি বিমানবন্দরের একটি হল জামনগর এবং অন্যটি পোরবন্দর। দ্বারকাতে রেলস্টেশনও আছে। হাওড়া থেকে ট্রেনেও পোরবন্দর আসা যায়। পোরবন্দর রেলস্টেশন থেকে দ্বারকার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সড়কপথে গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন। গুজরাতের অন্য বড় শহরের সঙ্গেও সড়কপথে যুক্ত দ্বারকা।