Advertisement
E-Paper

বছরশেষের ঘোরাঘুরি, সকালবেলাই বেরিয়ে পড়লে কোথায় কোথায় যেতে পারেন?

বছরশেষে বেড়াতে যাবেন? গন্তব্য কলকাতা হোক বা শহরতলি হিমেল পরশ গায়ে মেখে কোথায় ঘুরতে ভাল লাগবে?

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১১
বছরশেষে ঘুরে বেড়াবেন? কলকাতা থেকে শহরতলি— চটজলদি ঘোরার কয়েকটি ঠিকানা জেনে নিন।

বছরশেষে ঘুরে বেড়াবেন? কলকাতা থেকে শহরতলি— চটজলদি ঘোরার কয়েকটি ঠিকানা জেনে নিন। ছবি: শাটারস্টক।

ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ মানেই ছুটির মেজাজ। কেউ বেড়িয়ে পড়েন লম্বা সফরে, কেউ আবার খোঁজেন দিনমানে সফরের ঠিকানা। নানা বয়সের নানা দাবি। ছোটরা চায় এমন জায়গা, যেখানে খেলাধুলো হবে চুটিয়ে, আবার কেউ চান— এমন কোনও জায়গা যেখানে খানিক বসলে মনের শান্তি মিলবে। আবার যুগলেরা খোঁজেন খানিক নির্জনতা, সেল্‌ফি জ়োনের মতো জায়গা।

দাবি আলাদা যখন, সেই অনুযায়ী ঘোরার স্থান বাছাই প্রয়োজন। ছোট থেকে বড়— তরুণ থেকে প্রবীণ, সকলেই উপভোগ করতে পারবেন কলকাতা এবং শহরের আশপাশে এমনই কয়েকটি বেড়ানোর ঠিকানা জেনে নিন।

সঙ্গী যখন খুদে

বেড়ানোর সঙ্গী যদি খুদেরা হয়, তা হলে তাদের ভাল লাগবে এমন জায়গা বেছে নিতেই হবে। বড় মাঠ, রোপওয়ে, টয়ট্রেন, বোটিং, খেলার জায়গা বা এমন কোনও স্থান বেছে নিন, যা শিক্ষামূলক ভ্রমণের অঙ্গ হতে পারে। ছোটদের ভাললাগার জায়গা মানে বড়দের কাছে তা উপভোগ্য হবে না, এমন কিন্তু নয়।

এয়ারক্র্যাফ্‌ট মিউজ়িয়াম

খুদেকে নিয়ে ঘুরে আসুন এয়ারক্র্যাফ্‌ট মিউজ়িয়ামে।

খুদেকে নিয়ে ঘুরে আসুন এয়ারক্র্যাফ্‌ট মিউজ়িয়ামে। ছবি: সংগৃহীত।

সত্যিকারের যুদ্ধবিমান দেখাতে পারেন সন্তানকে। এয়ারক্র্যাফ্‌ট মিউজ়িয়াম রয়েছে নিউ টাউনে। দেশে এই ধরনের সংগ্রহশালা রয়েছে দু’টি। প্রথমটি বিশাখাপত্তনমে, দ্বিতীয়টি কলকাতায়। এখানে রাখা হয়েছে ২৯ বছরের পুরনো অবসরপ্রাপ্ত যুদ্ধবিমান, টি-ইউ ১৪২। দৈর্ঘ্যে ৫৩ মিটার এবং প্রস্থে ৫০ মিটার বিমানটির ওজন ১৮৫ টন। ভারতীয় নৌসেনার তত্ত্বাবধানে সেটি তামিলনাড়ু থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সংগ্রহশালাটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রয়েছে হিডকো।

নিউ টাউন থানার পাশে ডিজে ব্লকে রয়েছে মিউজ়িয়ামটি। এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেট থেকে অথবা সেক্টর ফাইভ থেকে বাসে আসতে পারেন এই মিউজ়িয়ামে।

সময়: সোমবার বন্ধ। শনি এবং রবিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মিউজ়িয়াম খোলা থাকে। অন্যান্য দিন দুপুর আড়াইটে থেকে সন্ধে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মিউজিয়াম ঘুরে দেখা যায়।

হাওড়া রেল মিউজ়িয়াম: পুরনো দিনের রেল ইঞ্জিন, কামরা কেমন দেখতে ছিল, দেখাতে পারেন খুদেকে। চোখের সামনে এমন ট্রেন দেখে উৎফুল্ল হবে তারা। হাওড়া রেল মিউজ়িয়ামে রয়েছে পুরনো দিনের সিনেমায় দেখা সেলুন কার। ভারতের প্রথম ব্রডগেজ় ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ, হারিয়ে যাওয়া স্টিম ইঞ্জিন, টয়ট্রেন থেকে দুষ্প্রাপ্য বিভিন্ন ছবি দিয়ে সাজানো সংগ্রহশালাও আছে। টয়ট্রেন থেকে টিকিট কাউন্টার কেমন হয়, সবই খুদেরা দেখতে পাবে এখানে এলে। হাওড়া স্টেশন থেকে হাঁটা পথে মিনিট দশেকেই পৌঁছনো যায় সেখানে।

সময়: সোমবার ছাড়া প্রতি দিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

নেহরু চিলড্রেনস মিউজ়িয়াম: নামেই অনুমেয়, এই মিউজ়িয়াম তৈরি হয়েছে শিশুদের কথা মাথায় রেখে। শুধু নতুন কিছু শেখানো নয়, সেই শিক্ষা যাতে আনন্দের সঙ্গে হয়, সেটাই লক্ষ্য কর্তৃপক্ষের। খুদের মনোরঞ্জনে পুতুল এবং রকমারি গাড়ি দিয়ে তৈরি হয়েছে প্রদর্শনী। হরেক দেশের রকমারি পুতুল। বৈচিত্র তাদের সাজপোশাকে। গাড়ির রকমফেরও খুদেরা দেখতে পাবে এখানে এসে। রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনিও এখানে তুলে ধরা হয়েছে মডেলের মাধ্যমে। মডেলের পাশেই ছোট্ট বোর্ডে সহজ বাক্যে মহাকাব্যের কাহিনি বর্ণিত রয়েছে। আর রয়েছে গণেশ গ্যালারি। ছোট, বড়, লম্বা, খাটো বিভিন্ন আকার-আকৃতির গণেশের দেখা মিলবে এখানে।

৯৪/১ চৌরঙ্গি রোডে এই মিউজ়িয়াম। বাসে এলে নামতে হবে থিয়েটার রোডে। রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশন থেকে হেঁটেও যাওয়া যায়।

সময়: সোম এবং মঙ্গলবার মিউজ়িয়াম বন্ধ থাকে। সপ্তাহের অন্য দিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মিউজ়িয়াম ঘোরা যায়। শিশুদের প্রবেশমূল্য ১০ টাকা, বড়দের ২০টাকা।

প্রবীণ-নবীন মেলবন্ধন

প্রবীণ-নবীন মিলিয়ে ঘোরার পরিকল্পনা হলে যাবেন কোথায়? তা হতে পারে মন্দির, হতে পারে কোনও আধ্যাত্মিক স্থানও।

কাচের মন্দির

বরানগরে কাচের মন্দির। সুযোগ মতো ঘুরে আসতে পারেন এই স্থানেও।

বরানগরে কাচের মন্দির। সুযোগ মতো ঘুরে আসতে পারেন এই স্থানেও। ছবি:সংগৃহীত।

বরানগরে কুঠিঘাটের কাছে গঙ্গার পাশেই রয়েছে কাচের মন্দির। আর-পাঁচটা মন্দিরের চেয়ে এই মন্দিরের গঠনশৈলী অনেকটাই আলাদা। অষ্টকোণাকৃতি মন্দিরটি তৈরি কাচ দিয়েই। ভিতরে বিরাজমান চতুর্ভুজা কালীমূর্তি। তারই সামনে রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদাদেবীর মূর্তি।

শোনা যায় মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। স্বামী অভেদানন্দের অন্যতম শিষ্য, সত্যানন্দদেব নির্মাণ করেছিলেন এই মন্দির। তাঁকে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন হিন্দুস্তান সেফটি গ্লাস কোম্পানির কর্ণধার। জানা যায়, মন্দিরের মেঝের নীচে সারদাদেবী এবং শ্রীরামকৃষ্ণের কেশ রয়েছে।

জায়গাটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন। ঘোরার জন্য বেশ মনোরমও। সিঁথির মোড় বা কুঠিঘাট থেকে টোটো করে সেখানে যাওয়া যায়। এখান থেকে নদী পাার হয়ে চলে যেতে পারেন বেলুড় মঠেও।

পরেশনাথ জৈন মন্দির

মানিকতলা থেকে এগিয়ে গৌরীবাড়ির কাছে বদ্রীদাস টেম্পল স্ট্রিটে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন জৈন মন্দির। একসঙ্গে চারটি। মূল মন্দির শীতলনাথজির। তারই ডান পাশে চন্দ্রপ্রভুজির মন্দির। আরও দুই মন্দির রয়েছে তার কাছেই, দাদাওয়াড়ি ও মহাবীর স্বামী মন্দির। মূল মন্দিরে প্রবেশের মুখে বিশাল ফটক। ভিতরে ঢুকলেই সাজানো বাগান। চারপাশে মার্বেলের অপরূপ কারুকাজ, ফুলের বাহার, ফোয়ারা। স্বচ্ছ জলাশয়ে মাছের ঝাঁক। রঙিন পাথর ও আয়নাখচিত শীতলনাথজির মন্দির মনে করিয়ে দেবে রাজস্থানের কোনও দুর্গের শিশমহলের কথা। ১৮৬৭ সালে বদ্রীদাস বাহাদুর মুকিম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের স্মরণে। চন্দ্রপ্রভুজি মন্দিরও বেশ প্রাচীন। দাদাজি মন্দির পুরোটাই সাদা মার্বেলের। তারই পাশে মহাবীর স্বামী মন্দিরের স্থাপত্যও কম প্রশংসনীয় নয়।

শ্যামবাজার বা শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনে নেমে বাসে যান গৌরীবাড়ি। সেখান থেকে হাঁটাপথে মন্দির।

জাপানিজ় গার্ডেন

কলকাতার  বুকেই রয়েছে জাপানি উদ্যান।

কলকাতার বুকেই রয়েছে জাপানি উদ্যান। ছবি:সংগৃহীত।

যে কোনও বয়সিদেরই ভাল লাগার উপকরণ মজুত রয়েছে ইকোপার্কে। সঙ্গী বয়স্ক হলে ব্যাটারিচালিত গাড়ি বা টয় ট্রেনে করে পার্ক ঘোরার পরিকল্পনা করতে পারেন। সুবিশাল পার্ক এক বারে ঘোরা সম্ভব নয়। এখান থেকে ভেসেলে করে জলপথে বিহারেরও ব্যবস্থা আছে। ঘুরে নিতে পারেন জাপানিজ় গার্ডেন। যত্নে সাজানো সেই বাগিচার ভিতরেই রয়েছে জাপানি শৈলীতে নির্মিত মন্দির। প্যাগোডা বললেও ভুল হয় না। ভিতরে রয়েছে বুদ্ধমূর্তি। ইকো পার্কের এক নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করলে এটি কাছে হয়। চত্বর জুড়ে বাগান তৈরি হয়েছে জাপানি দর্শনেই। প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিকতা এখানে মিলেমিশে গিয়েছে। জাপানের সুপ্রাচীন শিন্তো ধর্মের ভাবনা ও দর্শন মিশে রয়েছে এখানে। রয়েছে নানা রকম প্রতীকও। বাঁশবাগান থেকে রকমারি মূর্তি— সব কিছুরই নিজস্ব অর্থ এবং ব্যাখ্যা রয়েছে। ভিতরে জলাশয়ে অবিরাম পড়ে চলেছে জল। সেই শব্দ মনোজগতে প্রশান্তি আনে। প্যাগোডার ধাঁচে তৈরি হয়েছে রোয়ানজি মনাস্ট্রি। ভিতরে রয়েছে ধর্মচক্র। বাগান, আলোর সুপরিকল্পিত ব্যবহার এই স্থানকে একেবারেই পৃথক করে তুলেছে।

হাওড়া থেকে মেট্রো ধরে করুণাময়ী বা সেক্টর ফাইভ। সেখান থেকে অটো বা বাসে আসতে পারেন। বিধাননগর স্টেশনে নেমে সরাসরি অটো বুক করে ইকোপার্ক আসতে পারেন। না হলে বাস পাবেন কলেজ মোড় থেকে। বালি হল্ট থেকেও ইকোপার্ক আসার বাস মিলবে।

যুগলে পাড়ি দেবেন কোথায়?

বর্তির বিল: বর্তির বিলের সৌন্দর্যও কিন্তু কম নয়। খানিকটা সময় নিরালায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানোর জন্য বেছে নিতেই পারেন এই জায়গা। বন্ধুবান্ধব বা যুগলে ঘুরে আসতে পারেন বর্তির বিলে। ফোটোশুটের জন্যও এই জায়গা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিলে জল থাকলে নৌ-বিহারও করা যায়।

ট্রেনে গেলে ব্যারাকপুর স্টেশনে নেমে অটোয় নীলগঞ্জ বাজার হয়ে বারবেরিয়া গ্রাম। সেখান থেকে যেতে হয় বর্তির বিল।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি: কলকাতা ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়তে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি থেকে। কোন্নগর স্টেশন থেকে টোটো বা অটো ধরে বাটা। তার পর মিনিট দশেকের হাঁটা। ভাগীরথীর তীরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাগানবাড়ি সেজে উঠেছে নতুন রূপে। পুরনো নকশা যথাসম্ভব অক্ষুণ্ণ রেখে সংস্কার কাজ হয়েছে।

‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘বুড়ো আংলা’, ‘রাজকাহিনী’-র লেখক, চিত্রকর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বাগানবাড়িটি। স্মৃতিকথা বলছে, কোন্নগরের এই বাড়িতেই এক সময়ে সাঁতার, নৌকা, শিকারে স্বপ্নের মতো কেটেছে অবনীন্দ্রনাথের ছেলেবেলার কিছুটা। জায়গাটি সুন্দর ভাবে সেজে উঠেছে। নদীতীরের এই স্থানটিও চট করে ঘুরে আসা যায়।

ওড়গ্রাম

ঘুরে আসুন ওড়গ্রাম  থেকে।

ঘুরে আসুন ওড়গ্রাম থেকে। ছবি:সংগৃহীত।

প্রিয় মানুষটির হাত ধরে যদি প্রকৃতি উপভোগ করতে চান, তা হলে চলুন ওড়গ্রামে। ইদানীং এখানে ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংও হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমানের ভাতার ব্লকে গ্রামটি। ওড়গ্রামের জঙ্গলে পৌঁছনোর পথের হদিশ পেতে কাছাকাছি গিয়ে গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন।

ঘোরার জায়গা বলতে পাবেন ধানজমি, চাষের ক্ষেত আর পরিত্যক্ত ‘চাতাল’। তবে শহরের কংক্রিটের জঙ্গলের বাইরে যে কোনও খোলা প্রান্তরই ভাল লাগবে, হলফ করে বলা যায়। ওড়গ্রামেই রয়েছে একটি হোটেল এবং রেস্তরাঁ। দিনভর ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা থাকলে এই রেস্তরাঁতেও দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।

ঘণ্টা তিনেকে এই এলাকাটি ঘুরে নিতে পারবেন। সঙ্গী বাইক হোক বা চারচাকা, সকালে গিয়ে রাতের মধ্যেই ফিরতে পারবেন।

Winter Travel Destination Tourist Places
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy