ছানপোনা নিয়ে বসে আছে সিংহী। আর সিংহেরা অলস দুপুর কাটাচ্ছে নিজের মেজাজে। সোমবার গির অরণ্যে সাফারিতে গিয়ে সিংহ পরিবারের মুখোমুখি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ছবি তিনি ভাগ করে নিয়েছেন নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে।
এশিয়াটিক সিংহের অন্যতম বাসভূমি হল গুজরাতের গির জাতীয় উদ্যান। এই স্থান বন্যপ্রাণের নিশ্চিন্ত বিচরণক্ষেত্র। চাইলে প্রধানমন্ত্রীর মতো গির অরণ্যে সাফারি করতে পারেন যে কেউ। কী ভাবে এই অরণ্যে ঘোরা যায়, কখন সাফারি হয়, কী ভাবে বুকিং করতে হয়— জেনে নিন সেই সংক্রান্ত তথ্য।
গুজরাতের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের ১৪১০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে এই অরণ্যের বিস্তৃতি। তার মধ্যে ২৫৮ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল গহীন বন। জানা যায়, এক সময় এই অঞ্চল ছিল জুনাগড়ের নবাবদের শিকারের ক্ষেত্র। রাজারাজড়াদের সময় চলে যাওয়ার পরে ক্রমশ সংখ্যায় কমতে বসা সিংহদের রক্ষার জন্য এই অরণ্যের বেশ কিছু জায়গা জাতীয় উদ্যানের আওতায় আনা হয়। সেখানেই এখন নির্ভয়ে ঘুরতে পারে সিংহ, চিঙ্কারা, চিতাবাঘ, চিতল, নীলগাই। প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখির দেখাও মেলে এখানে।

শাবকের যত্ন নিচ্ছে সিংহী। ছবি: সংগৃহীত।
তবে জঙ্গল ঘুরতে গেলে আগাম পরিকল্পনা করে নিলেই সুবিধা হবে বেশি। তার কারণ, পায়ে হেঁটে এই অরণ্য ঘোরা যায় না। অরণ্যেরও আলাদা ক্ষেত্র থাকে। বিশেষ ভাবে সংরক্ষিত এলাকা পরিচিত ‘কোর এরিয়া’ নামে, বাকিটা বাফার এরিয়া। কোর এরিয়ায় যে কেউ ইচ্ছেমতো যেতে পারেন না। এ জন্য প্রয়োজন হয় অনুমতির।
সিংহদর্শনের সাফারির ব্যবস্থা কোর এরিয়াতেই। আর তার বুকিং শুরু হয়ে যায় মাস দুই-তিন আগে থেকেই। একটি জিপ অথবা জিপসিতে ছ’জনের বসার ব্যবস্থা। ঠিক যেমন প্রধানমন্ত্রী জিপসিতে করে জঙ্গল ঘুরেছেন, সে ভাবেই ঘোরেন পর্যটকেরাও। তবে জেনে রাখা দরকার, অরণ্যে সাফারি করলেই সিংহের দেখা মিলবে, তার কোনও স্থিরতা নেই। জাতীয় উদ্যানে ঘোরা আর চিড়িয়াখানায় বা আবদ্ধ এলাকায় সিংহ দেখায় তফাত অনেক। তবে বরাত ভাল থাকলে চিতাবাঘ থেকে সিংহ— অনেক কিছুরই দেখা মিলতে পারে। চিঙ্কারা, চিতল তো আছেই। আসলে অরণ্য ভ্রমণ করতে গেলে, প্রকৃতি উপভোগের মানসিকতা থাকা দরকার।
আরও পড়ুন:
অক্টোবর থেকে মার্চ গির অরণ্য ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। বর্ষার মরসুমে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি থাকে না। আবার ঋতুবদলের সঙ্গে বদলায় প্রকৃতির রূপও। বসন্তে জঙ্গলে ফোটে পলাশ। আর দুর্গাপুজোর সময় গেলে দেখা পাবেন কাশের। সাফারি হয় তিনটি। গির সাফারি, দেবালিয়া এবং কঙ্কাই মন্দির সাফারি।
গির জ়িপসি সাফারি: হুডখোলা গাড়িতে জঙ্গল ঘোরার সুযোগ মেলে সাফারিতে। সঙ্গে থাকেন গাইড। ঘণ্টা তিনেক সময় নিয়ে নির্দিষ্ট অরণ্যপথে ঘোরাঘুরি করে গাড়ি। বন্যপ্রাণ দেখা এবং সেই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করার অন্যতম শর্তই হল ধৈর্য। জঙ্গলে প্রবেশের প্রতি মুহূর্তে নিঃশব্দে দেখতে হয় চারপাশ। গাড়ি থেকে নামা বারণ। যা দেখতে হবে, আসনে বসেই।
সময়: সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা, সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা— দু’ দফায় কোর এরিয়া সাফারি হয়। বিকেলে সাফারি শুরু হয় ৩টে থেকে। ঘোরানো হয় ৬টা পর্যন্ত। ছ’জনের জিপে ভারতীয়দের জন্য খরচ পড়ে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। বিদশিদের জন্য এই খরচ ১৬,০০০ থেকে ১৭,০০০ টাকা।
বুকিং: কোর এরিয়া সাফারির জন্য অনলাইনে বুকিং করে আসাই ভাল। পর্যটন মরসুমে সমস্ত বুকিং আগাম হয়ে থাকে। এ জন্য গুজরাত জাতীয় উদ্যানের অফিশিয়াল সাইটে গিয়ে অনলাইন বুকিং অপশনে ক্লিক করতে হবে। সেখান থেকে দিন, সময় বেছে কারা কারা যাবেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে ফর্ম ভরতে হবে। নির্দিষ্ট টাকা প্রদান করে দিলেই বুকিং হয়ে যাবে। তবে সাফারির সময় প্রত্যেকের আসল পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক।
কী ভাবে যাবেন?
সোমনাথ থেকে গিরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। জুনাগড় থেকে দূরত্ব ২০৬ কিলোমিটার। অহমদাবাদ থেকে গিরের দূরত্ব ৩২৭ কিলোমিটার।
দেবালিয়া পার্ক: শাসন গ্রাম থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে দেবালিয়া পার্ক। এখানে চিতাবাঘ এবং সিংহদর্শনের সুযোগ অনেকটাই বেশি। ৪১২ হেক্টর জায়গায় রয়েছে সিংহ, চিতাবাঘ এবং অন্যান্য প্রাণী। অরণ্য ভ্রমণের শখ এখানে মিটবে না বটে, সিংহদর্শন হবেই, তা বলা চলে। বিস্তীর্ণ এলাকা বেড় দিয়ে ঘিরে বন্যপ্রাণ রাখা হয়েছে এখানে। তবে তারা খাঁচাবন্দি মোটেই নয়। জিপসি এবং ছোট বাস এখানে পর্যটকদের ঘোরানোর জন্য রাখা থাকে। সময় লাগে ঘণ্টাখানেক।
সময়: দিনে ছ’বার সাফারি হয়। সকাল ৭টা, ৮টা এবং ৯টায়। গরমের মরসুমে এই সময় আধ ঘণ্টা এগিয়ে আসে। ছ’জনের জিপ সাফারির খরচ গাইড-সহ ১৬০০ টাকা।
কঙ্কাই মন্দির সাফারি: গির অরণ্যেই রয়েছে কঙ্কাই মন্দির। শাসন থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। জঙ্গলের ভিতরে এই মন্দিরে পায়ে হেঁটে আসা যায় না। অনুমতি প্রয়োজন হয়। এই সাফারি হয় সকাল ৬টা থেকে ১১টা এবং দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা। অনলাইনে এটি বুক করা যায়।
কী ভাবে যাবেন?
সোমনাথ থেকে গিরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। জুনাগড় থেকে দূরত্ব ২০৬ কিলোমিটার। অহমদাবাদ থেকে গিরের দূরত্ব ৩২৭ কিলোমিটার। জুনাগড় এবং অহমদাবাদে রয়েছে বিমানবন্দর। জুনাগড়ের বিমানবন্দর থেকে জাতীয় উদ্যানের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। গিরের নিকটবর্তী রেলস্টেশন হল জুনাগড় জংশন এবং ভেরাভল জংশন।
কোথায় থাকবেন?
শাসনে একাধকি ছোট-বড় হোটেল রয়েছে। অরণ্যের কাছাকাছি একাধিক বড় রিসর্ট রয়েছে।