Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Purulia

পক্ষীরাজে সওয়ার মন

নিউ নর্মালে দুই বন্ধুর গন্তব্য যখন পুরুলিয়ার ঐতিহাসিক স্থান পাকবিড়া বাঁশবেড়িয়া থেকে আমি ও বন্ধু স্কুটি নিয়ে ভোররাতে বেরিয়ে মগরা গুড়াপের রাস্তা ধরে এগোলাম। শক্তিগড়ে চা, কচুরি, ল্যাংচা খেয়ে বিশ্রাম।

ইতিহাস-নির্ভর: সেই দেউল

ইতিহাস-নির্ভর: সেই দেউল

পুষ্পিতা চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৩৫
Share: Save:

গল্পটা দুই নারীর ভ্রমণপিপাসা বাস্তবায়িত করার। পুরুলিয়া ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব আসে আমার বন্ধু চন্দনার কাছ থেকে। তাও আবার তার পক্ষীরাজকে সঙ্গে নিয়ে। মুহূর্তেই রাজি। কারণ তখন আমার জন্মদিন। সেই সময়টা প্রকৃতির মাঝে কাটাব ভেবেই ভীষণ খুশি।

বাঁশবেড়িয়া থেকে আমি ও বন্ধু স্কুটি নিয়ে ভোররাতে বেরিয়ে মগরা গুড়াপের রাস্তা ধরে এগোলাম। শক্তিগড়ে চা, কচুরি, ল্যাংচা খেয়ে বিশ্রাম। তার পর দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের মাখনের মতো রাস্তা ধরে পৌঁছলাম আসানসোল। পাঁচ-ছ’ঘণ্টার জার্নিতেই পুরুলিয়া। প্রথম দিনেই পাঞ্চেত, গড়পঞ্চকোট, বান্দা দেখে হোটেলে ফিরলাম। পরের দিন দেউলঘাটা, অযোধ্যা পাহাড়, মার্বেল লেক ঘোরা হয়ে গেল। আরও একদিন হাতে। এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম পাকবিড়ার কথা, পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার অন্তর্ভুক্ত। গ্রাম বরাবর প্রিয়, তার উপরে খুব একটা পরিচিত জায়গা নয় শুনে সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে মাথা চাড়া দিল। গ্রাম্য পথে ধানখেত, তাল খেজুরের সারি দু’পাশে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। চতুর্দিকে এক অসীম নির্জনতা বিরাজ করছিল। এই দীর্ঘ সাত মাসের হতাশা, বন্দি জীবন কাটিয়ে নিউ নর্মালে পুরুলিয়া টুর যেন মাস্কহীন শ্বাসবায়ু। সেখানে পৌঁছে তিনটি দেউল দেখতে পেলাম। বাইরে গাছের নীচে একটি মূর্তি প্রায় আট ফুট দীর্ঘ, কষ্টি পাথরে নির্মিত। জানতে পারি, সেটি ভৈরবের মূর্তি, আনুমানিক ষষ্ঠতম তীর্থঙ্কর পদ্মপ্রভ-র। পদ্মের উপরেই মূর্তিটি দণ্ডায়মান। তবে ঝড়-বৃষ্টিতে মূর্তির পা দু’টি ক্ষয়প্রাপ্ত। তিনটে দেউলেই কারুকাজ। হাত দিয়ে স্পর্শ করতে গিয়ে দেখি ইটের খাঁজে একটি সাপ গুটিসুটি হয়ে বসে আছে! হাত গুটিয়ে ধীরে ধীরে পিছিয়ে এলাম।

এই অঞ্চলে আনুমানিক একাদশ শতাব্দীতে জৈন ধর্মের বিকাশ ঘটে। সে সময়ে কলিঙ্গরাজ অনন্ত বর্মণ, পূর্বে ভাগীরথী পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। তিনি জৈন ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে জৈন ধর্মের প্রভাব কমতে থাকে। ১৮৬১ সাল থেকেই এখানকার ঐতিহাসিক নিদর্শন সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এখানে প্রায় একুশটি মন্দির ছিল। তার মধ্যে এখন তিনটি রয়েছে। মন্দিরগুলি অনেকটাই ওড়িশার রেখ দেউলের আদলে গঠিত।

অনাদৃত: সংগ্রহশালার মূর্তি

আমরা এসেছি জেনে ছুটে এলেন নিমাই মাহাতো, সংগ্রহশালার তালা খুলে দিলেন। তিনিই দেখভাল করেন। সেখানে প্রবেশ করে অবাক হয়ে গেলাম, জৈন তীর্থঙ্করদের মূর্তি দেখে, মহাবীর, পার্শ্বনাথ, আদিনাথ, সম্ভবনাথ, অজিতনাথ, সিদ্ধায়িকা, ত্রিশলা- সিদ্ধার্থ, ঋষভনাথ... আরও বেশ কিছু মূর্তি। কিন্তু কিছু মূর্তি প্রায় ধ্বংসের পথে। তা সংরক্ষণেরও ঠিক ব্যবস্থা নেই। এই জায়গা প্রচারবিমুখ, তাই এত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক একটি স্থান এখনও অন্ধকারে রয়েছে।

ফেরার পথেও মন জুড়ে সেই দেউল, চোখে ভাসছে একের পর এক মূর্তি। মনে-মনে ভাবছি, এমন প্রত্নস্থল সংরক্ষিত হোক, এটুকুই কাম্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia New Normal travel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE