Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
Travel

নিসর্গ, স্থাপত্য ও প্রযুক্তির সমাহার...

কুয়ালা লামপুর-লঙ্কাভি-সিঙ্গাপুর ট্রিপ তাই এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা কুয়ালা লামপুর-লঙ্কাভি-সিঙ্গাপুর ট্রিপ এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা

দীপাবলি: আলোয় সেজে রাতের সিঙ্গাপুর

দীপাবলি: আলোয় সেজে রাতের সিঙ্গাপুর

অনিরুদ্ধ রায়
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:১৬
Share: Save:

কুয়ালা লামপুর বেড়ানোর প্ল্যানটা আমরা স্কুলের কয়েক জন বন্ধু বেশ অনেক দিন ধরেই করছিলাম। কারণ আমাদের আর এক বন্ধু দীর্ঘ দিন ধরে কর্মসূত্রে সে দেশে রয়েছে। ওরই আহ্বানে এবং কুয়ালা লামপুর বেড়ানোর আগ্রহে শেষ পর্যন্ত গত নভেম্বরে আমাদের বিদেশে পাড়ি। স্কুলের বন্ধুরা, তাদের পরিবার আর কচিকাঁচার দল মিলিয়ে আমরা মোট ন’জন রওনা দিলাম কুয়ালা লামপুর, লঙ্কাভি এবং সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে।

কলকাতা থেকে রাত ১২টায় আমাদের যাত্রা শুরু। কুয়ালা লামপুর পৌঁছতে সময় লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা। আমাদের সঙ্গে ওখানকার সময়ের ব্যবধান আড়াই ঘণ্টা হওয়ায় সকাল সাতটায় কুয়ালা লামপুরের মাটি ছুঁল আমাদের বিমান। সেখান থেকে সোজা বন্ধুর বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। সেটিই ছিল আমাদের কুয়ালা লামপুরের আস্তানা। সকালটা একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে দেখতে গেলাম এশিয়ার সর্বোচ্চ টুইন টাওয়ার—পেট্রোনাস। ৮৮ তলার শৃঙ্গে ওঠা না গেলেও টিকিট কেটে এলিভেটরে বেশ কয়েক তলা ওঠা যায়। আমেরিকার ওয়র্ল্ড ট্রেড সেন্টার এখন ইতিহাস। দুবাইয়ের বুর্জ খলিফাও দেখার সুযোগ হয়নি। যদিও পেট্রোনাসের চূড়ায় ওঠার অভিজ্ঞতা অতুলনীয়! সেখান থেকে কুয়ালা লামপুরের সিংহভাগই দৃশ্যমান।

আমাদের থাকার দিন নির্দিষ্ট বলে পরের দিন সকালেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়া হল বাটু কেভ ও জেনটিং আইল্যান্ডের উদ্দেশে। ২৭২টি সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় হিন্দু দেবতা মুরুগানের এই মন্দিরে। একটি পাহাড়ি গুহার মধ্যে মানুষের তৈরি এক অদ্ভুত স্থাপত্য এটি।

জেনটিং আইল্যান্ড জায়গাটা নামে আইল্যান্ড হলেও আসলে পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটি সুন্দর শহর। বৌদ্ধ মনাস্ট্রি, ছোটদের জন্য অ্যামিউজ়মেন্ট পার্ক, পাঁচতারা হোটেল, বড় রেস্তরাঁ...সব কিছুরই আধিক্য এই পাহাড়ি শহরে। এ রকমই এক রেস্তরাঁয় খাওয়া রোস্টেড ডাকের স্বাদ আজও আমাদের মুখে লেগে।

দু’দিন কুয়ালা লামপুরে কাটিয়ে, আমরা গেলাম লঙ্কাভিতে। কুয়ালা লামপুরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, এটি একটি ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ। যার প্রধান আকর্ষণ অবশ্যই নিসর্গ এবং বিভিন্ন ধরনের সি ফুড— মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, স্কুইড, শামুক, সিল...কী নেই তাতে! লঙ্কাভির সমুদ্রসৈকতে সাদা বালিতে বসে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা আজও আমাদের স্মৃতিতে অমলিন। লঙ্কাভিতে অবশ্য আরও দুটি দর্শনীয় স্থান আছে। তার একটি তো উড়ন্ত ঈগলের স্ট্যাচু—হিন্দি ও বাংলা সিনেমার শুটিংয়ের জন্য যা ইতিমধ্যেই বেশ বিখ্যাত। আর অন্যটি হল ১২৫ মিটার দীর্ঘ একটি স্কাই ব্রিজ, যার সৌন্দর্য ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়তো সত্যিই অসম্ভব!

অনির্বচনীয়: লঙ্কাভির স্কাই-ব্রিজ

লঙ্কাভির পর্ব শেষ করে পাড়ি দিলাম সিঙ্গাপুরে। এয়ার বিএনবি-র সুবাদে শহরের মধ্যবর্তী এলাকায় এক কমপ্লেক্সে থাকার সুযোগ হয় আমাদের। নেটিজ়েনদের পজ়িটিভ রিভিউয়ের যে কী গুণ, তারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ আমাদের এই নিবাসস্থানটি। যাই হোক, সিঙ্গাপুরে বেড়ানোর পুরো টুর প্ল্যানটাই করা হয়েছিল ইন্টারনেট ঘেঁটে ও চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টুরিস্ট হেল্পডেস্ক থেকে। তাই সময় নষ্ট না করে, সেই রাতেই বেরিয়ে পড়া হল নগরদর্শনে। সঙ্গে নিলাম একজন গাইড, যা সিঙ্গাপুরের সিটি টুরেরই অন্তর্ভুক্ত। প্রথমে পায়ে হেঁটে ঘোরা এবং তার পর ‘সিঙ্গাপুর আই’ থেকে রাতের মায়াবী আলোয় শহর দর্শন।

পরের দিন গেলাম স্যান্টোসা আইল্যান্ড। মূলত এই আইল্যান্ডেই সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ইউনিভার্সাল স্টুডিয়ো অবস্থিত। অ্যালিস যদি আজকের দিনে তার ওয়ান্ডারল্যান্ডে যেত, সেটা নিশ্চয়ই হত এই ইউনিভার্সাল স্টুডিয়ো! শিশুদেরই শুধু নয়, বড়দেরও মুগ্ধ করে এই স্টুডিয়ো। সকাল দশটা থেকে সন্ধে সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকে এটি, যা দু’-এক দিনে ঘুরে দেখে শেষ করা কার্যত অসম্ভব! এখানে মাদাগাস্কার ও ইজিপশিয়ান সিভিলাইজেশন, মিনিয়ন এবং ট্রান্সফর্মার শো বিশেষ উল্লেখ্য। এরই সংলগ্ন সি অ্যাকোয়ারিয়াম। বিভিন্ন প্রজাতির রং-বেরঙের মাছ দেখার অনবদ্য জায়গা। এর পর জুরং বার্ড পার্কে পাখির মেলা ও সিঙ্গাপুর জ়ু-তে নাইট সাফারি— যেখানে জন্তু-জানোয়ারেরা খাঁচার বাইরে আর আপনি একটি ট্রামের ভিতর! এ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার মতো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Travel Tourism Singapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE