এদেশে বেড়ানোর আসল সময় বসন্তের শুরু থেকেই লকডাউন। অগস্টে দীর্ঘ বন্দিদশা কাটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ডার্টমুর ন্যাশনাল পার্কের দিকে। নব্য-স্বাভাবিকের ধাক্কায় বাড়ি থেকেই দু’দিনের রসদ বোঁচকায় বেঁধে গাড়ি বোঝাই করেছি। লকডাউন শিথিল, ছুটি কাটাতে অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন গাড়ির সঙ্গে সাইকেল, নৌকা, ক্যারাভান বেঁধে নিয়ে।
ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ডেভন কাউন্টির প্রায় ১০০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে ডার্টমুর ন্যাশনাল পার্ক। প্রধান নদী ডার্ট-এর নামেই নামকরণ, মুর কথার অর্থ পতিত জমি। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জায়গা গ্রানাইটে আচ্ছাদিত। কঠিন গ্রানাইটের উপরে রয়েছে পিটের আস্তরণ। কিছু জায়গায় নরম মাটির স্তর ভেদ করে বেরিয়ে আসা শক্ত গ্রানাইট টিলার আকার নিয়েছে, যাকে স্থানীয় ভাষায় বলে টর। রুক্ষ ও ন্যাড়া টেবলল্যান্ডের পাশে চোখে পড়বে, ঘন সবুজ উপত্যকা। রয়েছে গভীর অরণ্যও। নানা প্রজাতির ফ্লোরা-ফনা’র বাড়বাড়ন্ত। ওকের গাছের অরণ্যের জমি মস-লাইকেনে আবৃত হয়ে সবুজ গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে যেন! স্কাইলার্ক, কোকিল, স্নাইপ-সহ বহু পাখির বাস। নদীতে রয়েছে স্যামন ও ট্রাউট। প্রকৃতি এখানে অকৃপণ। তাই পর্যটকের আনাগোনাও বেশি।
প্লিমাউথ শহরের ধার ঘেঁষে ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশ করলাম। সময় বিকেল চারটে। গ্রীষ্মকালে এ দেশে অবলীলায় দিনের আলোয় রাত ন’টা পর্যন্ত প্রকৃতিকে উপভোগ করা যায়। রিজ়ার্ভয়ার পৌঁছনোর আগে বার দুয়েক থামলাম, গাঢ় সবুজ উপত্যকা আর সেখানে ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো ঘোড়ার টানে। রাস্তা ভীষণ সরু, তাই ঝুঁকি না নিয়ে মাঠের ধারে গাড়ি পার্ক করে মাইল দুয়েক হেঁটে পৌঁছলাম বুরাটর রিজ়ার্ভয়ার। মাঝে ছোট একটা গ্রাম পেরোতে হল। কৃষিকাজ মুখ্য জীবিকা এখানে। মিভি নদীর উপরে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রায় শেষ সময়ে নির্মিত হয় শিপসটর ড্যাম, তার পিছনে এই বুরাটর রিজার্ভয়ার। প্লিমাউথ ও সংলগ্ন গ্রামগুলির পানীয় জলের সরবরাহ এখান থেকেই হয়।