পাহাড় বললেই প্রথমে হিমালয়ের কথা মাথায় আসে। বিশালত্বে, সৌন্দর্যে, বৈচিত্রে তা তুলনাহীন। ভারতের পর্যটনের প্রসারেও রয়েছে হিমালয়। তবে বিশালত্বে হিমালয়কে ছুঁতে না পারলেও, সৌন্দর্যে কম যায় না নীলগিরি পর্বতমালাও।
ভারতের পশ্চিম উপকূলের সমান্তরালে রয়েছে দীর্ঘ পর্বতশ্রেণি, যা পশ্চিমঘাট পর্বতমালা নামে পরিচিত। তারই অংশবিশেষ নীলগিরি পর্বতমালা। তামিলনাড়ু, কেরালা এবং কর্নাটকের বিশেষ কিছু অংশ নিয়ে এর অবস্থান। জীববৈচিত্র, সৌন্দর্যই এই পাহাড়কে আলাদা মান্যতা দিয়েছে। ঘটেছে পর্যটনের প্রসারও।
নামে নীলগিরি হলেও, বর্ষাস্নাত পাহাড় ঘন সবুজ। উচ্চতা বেশি নয়। তবে ঢেউখেলানো অনুচ্চ পাহাড়ের রূপ চক্ষু সার্থক করে। নীলগিরি অর্থাৎ নীল পাহাড়। নীলগিরির পার্বত্য অঞ্চলে নীলকুরিঞ্জি ফুল ফোটে। গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ এটি। ১২ বছরে এক বার ফোটে সেই ফুল। যখন ফোটে, নীলগিরির বিস্তীর্ণ অংশে মনে হয় নীলরঙা চাদর বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা থেকেই এমন নাম বলে অনেকে মনে করেন।
তবে নীলকুরিঞ্জি ফুল দেখার সৌভাগ্য না হলেও, নীলগিরির সান্নিধ্য পেতে যাওয়া যায় দক্ষিণ ভারতে। নীলগিরিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্রগুলি। ঘুরে নিতে পারেন তার মধ্যেই কয়েকটি।
উটি
পাহাড়ি শহর উটি। ছবি: সংগৃহীত।
তামিলনাড়ুর নীলগিরি জেলায় রয়েছে শৈলশহর উটি। এই শহরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে থাকবে একাধিক ছবিতে। মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আরামদায়ক আবহাওয়ার জন্য শৈলশহরটি পর্যটকমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়। গ্রীষ্মে এখানকার আবহাওয়া বেশ মনোরম। তবে জানুয়ারিতে তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে যায়। উটি থেকেই দেখে নিতে পারেন নীলগিরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দোদাবেতা। রোজ় গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, থ্রেড গার্ডেন, উটি হ্রদ, পাইকারা হ্রদ, জলপ্রপাত, চা-বাগান, চকোলেট তৈরির কারখানা, কফি বাগিচা— অনেক কিছুই আছে এখানে ঘোরার জন্য। উটি এলে এখানকার চকোলেট কিন্তু খেয়ে দেখতেই হবে।
উটি এলে ভ্রমণ তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে টয়ট্রেন। নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ের অন্তর্গত ‘হেরটিজ’ টয় ট্রেনটি শুধু দেশ নয়, বিদেশি পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয়। মেট্টুপালায়াম থেকে নীলগিরি পাহাড়ের উধগমণ্ডলম বা উটি পর্যন্ত রেলপথ বিস্তৃত।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে বেঙ্গালুরু। বিমানেও যাওয়া যায়। সেখান থেকে সড়কপথে উটি। ট্রেনে কোয়েম্বত্তূর জংশন স্টেশন হয়ে সড়কপথেও যাওয়া যায়।
বান্দিপুর ন্যাশনাল পার্ক
বান্দিপুর জাতীয় উদ্যান হরিণ, বাঘ, হাতি অসংখ্য বন্যপ্রাণের আশ্রয়স্থল। ছবি: সংগৃহীত।
নীলগিরি পর্বতমালার কোলে অবস্থিত জাতীয় উদ্যানটি। ১৯৮৬ সাল থেকে এটি নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজ়ার্ভের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৩১ সালে মহীশূরের মহারাজা ৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ‘বেণুগোপাল ওয়াইল্ডলাইফ পার্ক’ নামে একটি অভয়ারণ্য তৈরি করেন। ১৯৭৩ সালে এটি ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়। বাঘ, গউর, হাতি, চিতল, অ্যান্টিলোপ-সহ একাধিক বন্যপ্রাণের বিচরণক্ষেত্র এটি। রয়েছে সাফারির ব্যবস্থা। মহীশূর প্যালেস ভ্রমণের পাশাপাশি এই জাতীয় উদ্যান ঘুরে নিতে পারেন।
কী ভাবে যাবেন?
বিমানে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর। সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে বান্দিপুর জাতীয় উদ্যান।
মুন্নার
মুন্নারের সৌন্দর্য অনুপম। ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে যাবেন?
বিমানে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর। সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে বান্দিপুর জাতীয় উদ্যান।
ইডুক্কি জেলায় কেরলের জনপ্রিয় শৈলশহর মুন্নার। ৫,২০০ ফুট উচ্চতায় সাহেবি আমলের এই হিলস্টেশনটিতে সারা বছর হালকা শীত অনুভূত হয়। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এখান থেকে দৃশ্যমান। নীলগিরি পর্বত তারই অংশবিশেষ।মুন্নার পৌঁছোনোর ৪৬ কিলোমিটার আগেই পথের ধারে ভালারা জলপ্রপাত। এ ছাড়া ৯ কিলোমিটার দূরে দেখে নিতে পারেন আট্টুকাল জলপ্রপাতও। মুন্নারের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে চা-বাগিচা। এখানেও পাবেন স্থানীয় চকলেট। দেখে নিতে পারেন পোথোমেডু ভিউ পয়েন্টে, মাত্তুপেট্টি জলাধার।
কী ভাবে যাবেন?
বিমানে গেলে নামুন কোচিন বিমানবন্দরে। সেখান থেকে গাড়িতে পৌঁছন মুন্নার। হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে এর্নাকুলাম এসে বাকিটা সড়কপথে যাওয়া যায়। তিরুঅনন্তপুরম হয়েও যেতে পারেন।