কুতুব মিনার থেকে লোটাস টেম্পল, লাল কেল্লা, লোদি গার্ডেন-সহ অনেক কিছুই দেখার আছে দিল্লিতে। সেখান থেকে আরও খানিক গেলেই আগরায় রয়েছে বিশ্বের বিস্ময় তাজমহল। তবে এ সব যদি আগে থেকেই ঘোরা হয়ে যায়, তা হলে বরং শহরের আশপাশটাও ঘুরে নিন।
দিল্লির অবস্থান এমনই, যেখান থেকে রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, কাশ্মীর-সহ যে কোনও রাজ্যেই সহজে যাওয়া যায়। তবে যদি রাজধানীর কাছাকাছি ভ্রমণ করতে চান, তা হলে বেছে নিতে পারেন ৩ জায়গা।
দিগ, রাজস্থান

দিগের দুর্গও দেখার মতো। জাঠরাজাদের স্থাপত্যকীর্তির নিদর্শন বয়ে চলেছে এখানকার প্রাসাদ। ছবি: সংগৃহীত।
রাজস্থান বললে জয়পুর, উদয়পুর, জয়সলমীরের নামই লোকের মুখে আসে। তবে ভরতপুরের দিগ রাজস্থানের অতি প্রাচীন শহর। জানা যায়, 'স্কন্দপুরাণ'-এও এর উল্লেখ ছিল। এক সময় এই জায়গার নাম ছিল দীর্ঘপুর। জাঠ রাজা বদন সিংহের প্রথম রাজধানী ছিল দিগ। রাজার দুর্গ এখনও বর্তমান। সেই টানেই এখানে আসেন বহু পর্যটক। ভরতপুর শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে দিগ।
শহরটি দীর্ঘ প্রাচীর এবং পরিখা বেষ্টিত। মূল প্রবেশদ্বার পরিচিত ‘শাহ বুর্জ’ নামে। এই শহরের অন্যতম আকর্ষণ দিগ দুর্গ। ভরতপুরের রাজা সুরজমল ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করিয়েছিলেন এটি। রয়েছে রাজপ্রাসাদও। প্রাচীন রাজত্বের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে সেই দুর্গ। সেই চত্বরেই রয়েছে সুউচ্চ নজরমিনার, যেখান থেকে পাহাড় ঘেরা শহর, দুর্গের বিভিন্ন মহল দৃশ্যমান হয়। এখানার প্রাসাদের নির্মাণশৈলী, জাঠ রাজত্বের শৈল্পিক নিদর্শন প্রশংসার দাবি রাখে। মহল ঠান্ডা রাখতে অত্যন্ত সুকৌশলে তৈরি করা হয়েছিল রূপ সাগর এবং গোবিন্দ সাগর নামে দুই জলাধার। এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় কেবলাদেও জাতীয় উদ্যান এবং ভরতপুর বার্ড স্যাংচুয়ারি। ৩০০-র বেশি প্রজাতির পক্ষী, বন্যপ্রাণের দেখা মেলে সেখানে। শীতে উড়ে আসে পরিযায়ী পাখিরা।
কী ভাবে যাবেন?
রাজস্থান থেকে দিগের দূরত্ব ১৭০ কিলোমটার। বাস, ট্রেন, ট্যাক্সিতে যাওয়া যায়। সময় লাগে ঘণ্টা চারেক।
সরিস্কা, আলওয়ার

ইতিহাস এবং প্রকৃতি দু’টিতেই আকর্ষণ থাকলে আলওয়ার, সরিস্কা অবশ্যই ঘুরে নিতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত।
নয়াদিল্লি থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে আলওয়ার রাজস্থানের একটি জেলা। আলওয়ার শহরটি পড়ছে রাজধানী দিল্লি সংলগ্ন এলাকার মধ্যেই। পাহাড় ঘেরা আলওয়াড়ে রয়েছে পুরনো দুর্গ, অরণ্য, ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প।
আরাবল্লি পাহাড়ের মাথায় রয়েছে বালা কেল্লা বা আলওয়ার দুর্গ। সেখান থেকে সমগ্র শহর দেখা যায়। ঘুরে নিতে পারেন মুসি মহারানির ছত্রী। পাহাড় ঘেরা এই স্থানও বেশ মনোরম। শহরের মধ্যে রয়েছে ‘হিল টপ’ বা ছোট পাহাড়। তার মাথায় মোতি ডুংরি। এখানে স্থানীয়েরা হাঁটাহাটি করতে, হাওয়া খেতে আসেন। সেখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন শিলিসের হ্রদ। তবে এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হল সরিস্কা ব্যাঘ্র প্রকল্প, সরিস্কা হ্রদ। ব্যঘ্র প্রকল্পে সাফারির বন্দোবস্ত রয়েছে। পাহাড়ি পথ, গাছপালা ঘেরা অরণ্য। বাঘের দেখা মিলুক না মিলুক, ময়ূর চোখে পড়বেই। হরিণ, রকমারি পাখি, খরগোশ দৃশ্যগোচর হতে পারে। আর আছে প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্য। একপাশে পাহাড়, তার গা দিয়ে অরণ্যের পথ।
কী ভাবে যাবেন?
নয়াদিল্লি থেকে সড়কপথ এবং রেলপথে আলওয়ার যাওয়া যায়। ঘণ্টা তিন থেকে চারেকেই সেখানে পৌঁছতে পারবেন।
বরসনা, মথুরা

বরসনা শ্রীরাধার জন্মস্থান বলেই পরিচিত। ছবি: সংগৃহীত।
নয়াদিল্লি থেকে ১৫৪ কিলোমিটার দূরে মথুরার বরসনা শ্রীরাধার জন্মস্থান বলেই পরিচিত। এখানেই রয়েছে প্রাচিন রাধারানির মন্দির। ঘুরে নিতে পারেন কীর্তি মন্দির। বিশেষত দোলের মরসুমে এই জনপদের রূপ বদলে যায়। অলিতে গলিতে রং খেলা হয়। দূরদূরান্ত থেকে আসেন ভক্ত, পর্যটকেরা। বরসনা থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে নন্দগাঁও। সেখানে রয়েছে নন্দবাবা মন্দির।
কী ভাবে যাবেন?
নয়াদিল্লি থেকে সড়কপথে গাড়িতে মথুরা যেতে পারেন। মথুরা জংশন রেলস্টেশনও রয়েছে। ট্রেনেও যাওয়া যায়।