Advertisement
E-Paper

বৃষ্টিভেজা রূপসী বগুরান

নির্জন সৈকতের বগুরান থেকে ঘুরে আসতে পারেন জুনপুট-বাঁকিপুট-দরিয়াপুর-পেটুয়াঘাট। লিখছেন শ্রেয়সী লাহিড়ীনির্জন সৈকতের বগুরান থেকে ঘুরে আসতে পারেন জুনপুট-বাঁকিপুট-দরিয়াপুর-পেটুয়াঘাট। লিখছেন শ্রেয়সী লাহিড়ী

লাগেজপত্র ঘরে ঢুকিয়েই মন ছুটল সাগর অভিমুখে।

লাগেজপত্র ঘরে ঢুকিয়েই মন ছুটল সাগর অভিমুখে।

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ১৩:২৮
Share
Save

বাসটা সজোরে ব্রেক কষতেই তন্দ্রা কেটে গেল। জানলার উপর রাখা কনুইটা ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে একনাগাড়ে ভিজে যাচ্ছে।সকালের গুমোট গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে সাময়িক স্বস্তি।হাল্কা ঠান্ডা বাতাসে আবহাওয়া এখন বেশ আরামদায়ক। চলেছি বগুরান, সঙ্গী বলতে বন্ধু ঊর্মি।ভরা মরসুমে শেষ সময়ে টিকিট কাটার ফলে বাসের একেবারে পিছনের সিটে জায়গা মিলেছে। ৯৫ ভাগ আসন দখল করে আছেন দিঘাগামী পর্যটকেরা। এছাড়া স্থানীয় মানুষের ওঠানামা তো আছেই।

অগস্ট মাসের মাঝামাঝি। বৃষ্টিস্নাত রূপসী বাংলার চেনা মুখ দেখতে দেখতে আমাদের ঘণ্টা চারেকের যাত্রাপথ শেষ হলকাঁথি সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে। ঘড়ির কাঁটা তখন ১০টা ছাড়িয়ে সামান্য এগিয়েছে। বৃষ্টি থেমেছে। এক টুকরো কালো মেঘের আড়াল থেকে এক চিলতে রোদ্দুর উঁকি দিচ্ছে।ব্যস্ত কাঁথি বাসস্ট্যান্ডের একপাশে দাঁড়িয়ে আছি। “দিদি, বগুরান যাবেন তো? গেস্ট হাউজ থেকে আমাকে পাঠিয়েছে।” হাসিমুখে যে মানুষটা এগিয়ে এলেন, তাঁর নাম রামশংকর দিন্দা ওরফে বাবু।কোনও সংশয় না রেখে চেপে বসলাম বাবুর অটোতে।

দিঘা বাইপাস মোড় থেকে রাস্তা ভাগ হল। ডানদিকের রাস্তা গেছে দিঘা, আমরা বাঁ দিকের পথ ধরলাম। সমান্তরালে বয়ে চলেছে খাল। মাঝে মাঝে জাল দিয়ে ঘেরা। জমিতে ধান বোনা হয়েছে। পথের দু’পাশে সবুজের সমারোহ। বৃষ্টিতে ধুয়ে তার ভরপুর লাবণ্য। কানায় কানায় পূর্ণ পুকুরগুলোয় জালের ঘেরাটোপে চিংড়ির আঁতুর তৈরি হয়েছে। ৭ কিলোমিটার পথ চলার পর আলাদারপুটে পৌঁছে আটকে পড়লাম জ্যামে। সদ্যবিবাহিত বর-কনের গাড়ির পিছন পিছন চলেছে ব্যান্ডপার্টি ও শোভাযাত্রা। সেই শোভাযাত্রায় সবার নজর কাড়ছে বহুরূপী ও তার বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি।

বালুকাবেলার চিত্রকল্প।

আবার পথ বিভাজন। পিচের রাস্তাটা সোজা চলে গিয়েছে জুনপুটের দিকে। সেদিকে না গিয়ে অটো এবার ডানদিকের পথ ধরল।আর ৬ কিলোমিটার পথ বাকি। গ্রামের বুক চিরে তৈরি হয়েছে সরু সিমেন্টের ঢালাই রাস্তা। গ্রামজীবনের ছবি দেখতে দেখতে সংক্ষিপ্ত যাত্রাপথ শেষ হল উঁচু প্রাচীরে ঘেরা ‘সাগর নিরালায়’ গেস্ট হাউসের দোরগোড়ায়...আমাদের দু’দিনের অস্থায়ী ঠিকানা।

চটপটে সুমন এখানকার কেয়ারটেকার। বছর ষোলো বয়স। দিদিদের দেখভালে তার আন্তরিকতার কোনও অভাব নেই। লাগেজপত্র ঘরে ঢুকিয়েই মন ছুটল সাগর অভিমুখে। এখান থেকে মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ। একটু ছ্যাঁকছ্যাঁকে রোদ উঠেছে।গাছগাছালি ঘেরা সরু কাদামাখা পথ ধরে চলেছি। পথের ধারে মাছ ধরার জাল শুকোচ্ছে। পাশেই একফালি জমিতেবাচ্চাদের হুটোপুটি।

আরও পড়ুন: পায়ে পায়ে সান্দাকফু

কাঁচা পথ এসে মিশে গেলবেলাভূমিতে। শান্ত, নির্জন সৈকত ধরে হাঁটতে লাগলাম। মসৃণ বেলাভূমিতে স্থানীয় বাইক আরোহীরা সমুদ্রের ধার ঘেঁসে অনায়াসে যাতায়াত করছে। ঝাউবনের সারি, ঢেউয়ের ধাক্কায় ডিঙি নৌকার দুলুনি, জেলেদের জীবনসংগ্রাম আর লাল কাঁকড়ার মিছিল...টুকরো টুকরো ছবিগুলো নিয়েই একটা কোলাজ তৈরি হয়েছে। লাল কাঁকড়ার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হল পায়ের আওয়াজ পেলেই তারা লুকিয়ে পড়ে ছোট ছোট গর্তের নিরাপদ আশ্রয়ে। বালির গায়ে তাদের তৈরি নকশা দেখার মতো। জেলে-বউরা হাঁড়ি পাহারা দিচ্ছে সাগর পাড়ে। আর তাদের স্বামীরা দূরে বুক জলে নেমে জাল গুটোচ্ছে।

আশ্রয়হীন সেই কাঁকড়া

একচিলতে রোদ্দুর আকাশ থেকে মিলিয়ে গেছে। ছাইরঙা মেঘের দল কখন যেন মাথার ওপর উঠে এসেছে খেয়াল করিনি। রিসর্ট থেকে বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছি। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ফিরে চললাম। ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। তার সঙ্গে বিদ্যুতের ঝলকানি আর মেঘের গর্জন।

জামাই আদরের স্টাইলে লাঞ্চ পরিবেশিত হয়েছে। ভাতের থালার চারপাশে ছোট ছোট বাটিতে সাজানো হয়েছে ডাল, আলুভাজা, স্যালাড, পটলের তরকারি, ভাজা ইলিশ, ভাপা ইলিশ, চাটনি, পাঁপড়। এই মহাভোজের সঙ্গে মিশে আছে অকৃত্রিম আতিথেয়তা।

আরও পড়ুন: ঈশ্বরের আপন দেশে

তৃপ্তিদায়ক ভোজন, জার্নির ধকল আর ঠান্ডা জোলো হাওয়ায় দিবানিদ্রা ভালই হল। প্রবল বর্ষণে চারপাশ সাদা হয়ে গেছে। ঘুম ভাঙল সুমনের ডাকে। বিকেলের চা নিয়ে সে হাজির। বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। এখন শুধু গাছের পাতা থেকে টুপটুপ জল পড়ার শব্দ। প্রায় ৬টা নাগাদ এলাম সমুদ্রের ধারে। জল ভাটার টানে অনেকটা দূর সরে গিয়েছে। লক্ষ্য করলাম, একটা কাঁকড়া অনেকক্ষণ ধরে এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। মাঝে মাঝে নড়াচড়া করলেও, ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে না। হয়তো সে তার লুকনোর গর্তখানা খুঁজে পাচ্ছে না। আমার স্বার্থপর মন সেই সুযোগটুকু ছাড়তে রাজি নয়। চটপট ফ্রেমে বন্দি করে ফেললাম সেই আশ্রয়হীন কাঁকড়াটাকে।

জীবনসংগ্রাম

সূর্য বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফড়েরা এসে জড়ো হয়েছে মাঝ সমুদ্র থেকে আসা জেলে নৌকার অপেক্ষায়। জেলেদের থেকে মাছ কিনে তারা বিক্রি করবে বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে। এই বেচাকেনা দেখার খুবইসাধ জেগেছিল। কিন্তু আলো নিভতেই নির্জন বেলাভূমি একেবারে শুনশান হয়ে গেল। সুমন আমাদের ডাকতে চলে এসেছে। সে কিছুতেই আর আমাদের এখানে থাকতে দেবে না। তক্ষকের ডাক শুনতে শুনতে ফিরে চললাম। কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ। অন্ধকার দানবের মতো চারপাশকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।

ভোরেপাখির ডাকে ঘুম ভাঙল। মেঘলা আকাশ মাথায় নিয়ে বিচ ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছলাম ভান্ডারা খাল। সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে এই লেগুনের সৃষ্টি হয়েছে। বগুরান বিচ এই পর্যন্তই। ওপারটাকে বলা হয় সৌলা বিচ। জোয়ারের জল নেমে যাওয়ার পর ভেজা বালির ক্যানভাসে সৃষ্টি হয়েছে অসাধারণ শিল্পকর্ম। একটা নৌকা আটকে রাখা আছে এপারে।কিন্তু, মাঝি ওপারে নিয়ে যেতে রাজি হল না।মহিলারা লেগুনে নেমে জাল টানছে। তাদের দেখে মনে হল, জল প্রায় কোমর পর্যন্ত।ভাটার সময় যখন হাঁটুর নীচে জল থাকে তখন ওপারে হেঁটেই যাওয়া যায়। অগত্যা খাল পেরনোর বাসনা ত্যাগ করে ফিরে চললাম।

প্রাতরাশের পর তৈরি হচ্ছি। আজ যাব বাঁকিপুট, দরিয়াপুর আর পেটুয়াঘাট দেখতে। কিন্তু, কপাল মন্দ। সাড়ে দশটা নাগাদ ঝমঝমিয়ে শুরু হল বৃষ্টির অবিরাম ধারাপাত। এবেলার সফর বাতিল করে মন খারাপ করে শুয়ে রইলাম বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়। দরজা হাঁ করে খোলা। কখন যে অবেলায় দু’চোখের পাতা বুজে এসেছে, খেয়াল নেই।

ট্রলারের সারি

ঘুম ভেঙে দেখি, দুপুর দেড়টা।বৃষ্টি অনেকটাই ধরে এসেছে। ঠিক করলাম, লাঞ্চের পরেই বেরিয়ে পড়ব সকালের বাতিল হওয়া গন্তব্যস্থলে। আজকের মেনুও বেশ লোভনীয়। ভাতের সঙ্গে আছে কলাইয়ের ডাল, আলুভাজা, ঝিঙে-আলুপোস্ত, বড় পমফ্রেট মাছের ঝাল, কাঁকড়া, চাটনি, পাঁপড়। রাঁধুনির রান্নার হাতটাও চমৎকার।আগেরদিন রাতে ঝাল ঝাল চিকেনটাও বেশ ভালই জমেছিল।

বাবু অটো নিয়ে অপেক্ষা করছিল। প্রায় ৩টে নাগাদ বেড়িয়ে পড়লাম জুনপুট হয়ে বাঁকিপুটের পথে। রাস্তার অবস্থা বড়ই করুণ। একবার তো কর্ণের রথের মতো অটোর চাকাটাও কাদায় আটকে গেল। সে চাকা তোলার সবিস্তার বিবরণে নাইবা গেলাম। বাঁদিকে পরপর মাছের ভেড়ি। বৈদ্যুতিন চাকা ঘুরিয়ে চিংড়ি চাষে অক্সিজেন যোগান চলছে। এক কোণে মৎস্যচাষিদের অস্থায়ী ঘর। ২৪ ঘণ্টা তাঁরা পাহারা দেন।

আরও পড়ুন: অপার মুগ্ধতার কয়রাবেড়া

বগুরান থেকে জুনপুট পেরিয়ে বাঁকিপুট প্রায় ৩৪ কিলোমিটার পথ। এখানে বেশ একটু উঁচু জায়গা থেকে দেখা যায় সাগরের বিস্তৃত রূপ। অনেক দূরে ভেসে থাকা নৌকাগুলো ছোটবেলার জলরং আর তুলিতে আঁকা ছবিগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। চারপাশে শুঁটকি মাছ শুকোচ্ছে। বেশ নিরিবিলি পরিবেশ।

আবার অটোতে উঠে এগিয়ে চললাম দরিয়াপুরে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত কপালকুণ্ডলা মন্দির দর্শনে। পথের ধারেই একটি মন্দির ও পাঠাগার। তার পাশ দিয়েই গ্রামের ভিতর রাস্তা চলে গিয়েছে।ডানপাশের শিবমন্দিরটা পিছনে ফেলে মাত্র ২ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। ইতিহাসের সাক্ষী এইমন্দিরটার নতুন করে সংস্কার হয়েছে।

‘সাগর নিরালায়’ গেস্টহাউসে তাঁবু।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের উৎস এই দরিয়াপুর। কাঁথি মহকুমার অতীতে নাম ছিল নেগুঁয়া মহকুমা। ১৮৬০ সালে বঙ্কিমচন্দ্র যশোহর থেকে বদলি হয়ে নেগুঁয়া মহকুমায় আসেন ডেপুটি কালেক্টর হয়ে। নেগুঁয়া মহকুমার সেচবাংলোয় তিনি থাকতেন। সেখানে একজন সন্ন্যাসী কাপালিক প্রতিদিন রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। তখন এ অঞ্চলে সমুদ্রতীরে গভীর জঙ্গল ছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের ধারণা হয়েছিল, ওই সন্ন্যাসী সেই বনে বাস করতেন। এই কাপালিক বঙ্কিমচন্দ্রের মনে গভীর রেখাপাত করেন এবং পরে সৃষ্টি হয় এই বিখ্যাত উপন্যাস।

কিছুটা এগিয়েই দরিয়াপুর লাইটহাউস।১০১টা সিঁড়ি ভেঙে উঠে পড়লাম একেবারে মাথায়। গঙ্গাসাগর, হলদিয়া, গেঁওখালি, নয়াচর ছাড়াও রসুলপুর নদী ও হলদি নদীর মোহনা দেখা যায়।আগে লাইট হাউসের চারপাশে গভীর জঙ্গলে অনেক জন্তু-জানোয়ার ছিল। কিন্তু, এখন সেই সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে।

লাইটহাউস থেকে বেরিয়ে অটোতে উঠে চললাম পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে। বিশাল এই মৎস্যবন্দরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর ট্রলার। মাছ নিলাম হচ্ছে। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে রসুলপুর নদী। ওপারে আছে হিজলি নামে একটি দর্‌গা। স্থানীয় হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলের কাছেই এটি বিশ্বাসের জায়গা। হিজলির নাম অনুসারে রসুলপুর নদীর স্থানীয় নাম হয়েছে হিজলি নদী।

দিনের আলো প্রায় নিভু নিভু। ফিরে চললাম লজের পথে। ছোট্ট সফরের এখানেই ইতি। নির্জন সৈকতকে বিদায় জানিয়ে কালই ফিরে যাব। আবার কখনও ক্লান্ত মনে ছুটে আসব এই শান্তির ঠিকানায়।

যাত্রাপথ:

কলকাতা থেকে দিঘাগামী বাসে নামতে হবে কাঁথি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনালে। ট্রেনে এলে নামতে হবে কাঁথি স্টেশনে। টোটো, অটো ও গাড়ি রিজার্ভ করে বগুরান যেতে হবে।

ভাড়া:

টোটো ২০০ টাকা, অটো ৩০০ টাকা, মারুতি ওমনি ৪০০ টাকা।আগে বলে রাখলে গেস্ট হাউস থেকেও গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাঁকিপুট-দরিয়াপুর বেড়ানোর অটোভাড়া ৭০০ টাকা ও ওমনির ভাড়া ১০০০ টাকা।

রাত্রিবাস:

রাত্রিবাসের একটাই ঠিকানা ‘সাগর নিরালায় গেস্ট হাউস’।

যোগাযোগ: ৯৪৩৪০১২২০০

এসি ঘরের ভাড়া: ১৮০০-২৮০০ টাকা, নন-এসি ঘরের ভাড়া: ৯৯০-১৬০০ টাকা, টেন্ট ভাড়া ১৫০০-১৬০০ টাকা।

ছবি: লেখক

Baguran Sea Beach
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy