ঠিক এক বছর পরে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। বিগত প্রায় দশ মাস কার্যত গৃহবন্দি। আমি ও আমার স্বামী দু’জনেই ঘুরতে ভালবাসি। আমেরিকায় করোনার বাড়াবাড়ির জন্য বেড়াতে যাওয়ায় বিরতি দিতে হয়েছিল। কিন্তু ভয়-দ্বিধাকে সঙ্গী করেই এ বার ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম। নভেম্বরের শেষে এক সপ্তাহব্যাপী থ্যাঙ্কসগিভিং হলিডে থাকে আমেরিকায়। করোনার কথা ভেবেই এমন জায়গা বেছে নিলাম, যেখানে অতিমারির দাপট কম। টিমে আমি, বর, পাঁচ বছরের ছেলে ও আমার দুই বোন। গন্তব্য ক্যালিফর্নিয়ার উত্তরে মাউন্ট শ্যাস্টা।
ফ্রিমন্ট থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৩০০ মাইল, রাস্তায় দু’বার কফি ব্রেক নিয়ে পৌঁছতে সময় লাগল প্রায় ৫ ঘণ্টা। থাকার জন্য এয়ার বিএনবির হোমস্টে বুক করা ছিল ডান্সমিয়ার নামে ছোট্ট শহরে। যাওয়ার পথে রেডিং শহরে সান ডায়াল ব্রিজ দেখে যখন আস্তানায় পৌঁছলাম, তখন ঘড়িতে সন্ধে সাতটা। শীতের সময় বলে তাড়াতাড়ি অন্ধকার। তাই শেষের দিকের যাত্রাপথের কোনও দৃশ্যই দেখার সুযোগ পেলাম না। বাইরের তাপমাত্রা তখন প্রায় ৫ ডিগ্রি। ডান্সমিয়ার শহরে আমাদের থাকার জায়গার কাছাকাছি পৌঁছে দেখতে পেলাম, সব বাড়ি ক্রিসমাসের আলোয় সাজানো। আমার ছেলে বেশ মজা পেল। বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই দরজার হাতল থেকে ঘরের বেশ কিছু জায়গা স্যানিটাইজ় করলাম। তার পর রাতের রান্নার আয়োজন। গরম গরম মাংস-ভাত খেয়ে সে দিন রাতে বাড়িতেই বিশ্রাম।
পর দিন ভোরবেলায় হাঁটতে বেরিয়ে প্রথম চমক, পাইন গাছের ফাঁক দিয়ে সুপ্রভাত বলছে সাদা বরফের চাদরে মোড়া মাউন্ট শ্যাস্টা। করোনাভীতি যেন নিমেষে উধাও। এখানে বলে রাখি, মাউন্ট শ্যাস্টা একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। উচ্চতা ১৪১৮০ ফুট, ক্যালিফর্নিয়ার পঞ্চম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয় ১৭৮৬ সালে।