Advertisement
E-Paper

ঝটিতি সফর নয়, বেড়ানোয় ‘ধীরে চলো’ নীতি, জনপ্রিয় হচ্ছে ভ্রমণের নতুন ধারা

চর্চা স্লো ট্যুরিজ়ম এবং ট্র্যাভেল নিয়ে। কী এই ভ্রমণ রীতি? কারা সেটি অনুসরণ করেন?

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৮

ছবি: সংগৃহীত।

ছুটি মোটে ৫ দিন। মোটা টাকা দিয়ে বিমানভাড়া দিয়ে কাশ্মীর যাতায়াত। সময় নষ্ট করলে চলবে কেন? যে ক’টা দিন হাতে আছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা ঘুরে নেওয়াই ভাল।

এমন ভাবনাতেই বিশ্বাস করেন বেশির ভাগ পর্যটক। ভ্রমণ সংস্থাগুলিও এ ভাবেই ঘোরায়। যিনি যাচ্ছেন, তিনি হিসাব কষেন। কত দিনের ঘোরা, কতগুলি জায়গা দেখা হবে, যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা ঘুরে উসুল হবে কি না।

ঝটিতি সফরেই তাঁরা বিশ্বাস করেন। বেড়াতে গিয়ে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করা তাঁদের না-পসন্দ। আবার কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা ছুটিতে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে আয়েস খোঁজেন। কোথাও না ঘুরে বিলাসবহুল হোটলে অলস দিন কাটিয়ে আনন্দ খুঁজে পান।

তবে এই দুই ধরনের মানুষের বাইরে আরও এক দল রয়েছেন, যাঁদের কাছে ভ্রমণের অর্থ প্রকৃতি, সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়া। একটি অঞ্চলের ইতিহাস, ভূগোল, শিকড়কে জানার চেষ্টা করা। ভাবনাচিন্তায় গুনে গুনে পর্যটনস্থল দেখার বাসনা তাঁদের থাকে না, বরং তাঁরা ভ্রমণকে উপলব্ধি করতে চান একেবারে অন্য আঙ্গিকে। ঘড়ি ধরে ঘোরা নয় বরং তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি ভ্রমণে বিশ্বাস করেন। বেড়ানোয় এমন ‘ধীরে চলো’ নীতি বিশ্ব জুড়ে পরিচিত ‘স্লো ট্র্যাভেল’ বা ‘স্লো ট্যুরিজম’ নামে।

কী এর বিশেষত্ব? কারাই বা যান?

কেউ বিদেশ গেলেন। মিউজ়িয়াম, চার্চ, দ্রষ্টব্য জায়গাগুলি ঘুরলেন। ভালমন্দ খেলেন। চলে এলেন। আবার এমন মানুষও আছেন, যিনি বিদেশ গেলেন, তবে পর্যটকেরা যে সব জায়গায় ভিড় করেন তার ধারকাছ ঘেঁষলেন না। হাতে যতটা সময় রয়েছে, শহরগুলি ঘুরলেন। স্থানীয় খাবার খেলেন। সেই জায়গার গণপরিবহণ ব্যবহার করলেন, দোকানে গেলেন। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে গল্পগুজবের মাধ্যমে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করার চেষ্টা করলেন তাঁদের ভাবনা, জীবনবোধ, প্রতি দিনের যাপন। পর্যটক দু’জনেই। তবে ভ্রমণের ধরন এবং উদ্দেশ্যে বিস্তর ফারাক।

ভাবনার এই বদলই ‘স্লো ট্র্যাভেল’-এর জন্ম দিয়েছে। জীবনের ব্যস্ততা সরিয়ে রেখে জানার চেষ্টা, গভীর অনুধাবনই এমন ভ্রমণের প্রতিপাদ্য।

কেউ গোয়া গেলেন। তাঁর লক্ষ্যই হবে সমুদ্রসৈকতগুলি ঘোরা, গোয়ান খাবার খাওয়া, সেখানকার নৈশজীবন উপভোগ করা। কিন্তু গোয়ার সংস্কৃতিকে জানতে হলে, প্রাচীন সমুদ্রতীরবর্তী এই জনপদের আনাচকানাচ ঘুরতে হবে। এই শহরেও ‘হেরিটেজ় ওয়াক’-এর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে ক’জনই বা ভাবেন?

কেন জনপ্রিয় হচ্ছে এই ধরনের ভ্রমণ?

১. যে কোনও জায়গার সঙ্গে একাত্ম হতে সাহায্য করে ‘স্লো ট্র্যাভেল’। সময় ধরে কোনও একটি জায়গা ঘুরে চলে আসার ব্যাপার নেই, বরং কোনও একটি স্থান ভাল লাগলে সেখানে ইচ্ছেমতো সময় কাটানো যায়। তাড়াহুড়ো না থাকায় সেই জায়গাটি অনেক ভাল ভাবে ঘোরা সম্ভব হয়।

২.সেই জায়গার সংস্কৃতি, খাবার নিয়ে উৎসাহ থাকলে কেউ সারা দিন স্থানীয় খাবারের সন্ধানে কাটিয়ে দিতে পারেন, ভাল লাগার পদের উৎস সন্ধান করতে পারেন—এটাই ধীরে চলো নীতির প্রাপ্তি।

৩. পরিবহণও এ ক্ষেত্রে হয়ে উঠতে পারে ভ্রমণ-সহায়ক। বিমানে চাপলেন আর ঘণ্টাখানেকেই পৌঁছে গেলেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তবে বিমানের বদলে বিভিন্ন রাজ্য ছুঁয়ে ট্রেন সফর করলে স্থানীয় মানুষজন, তাঁদের যাপন, খাওয়া, ঘোরা নিয়ে জানা যায় ঢের বেশি। বিলাসবহুল নয়, ভ্রমণে ‘ধীরে চলো’ নীতি স্থানীয় মানুষের অনেক কাছে আসার সুযোগ তৈরি করে।

৪. অনেককেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে ‘স্লো ট্র্যাভেল’। এমনই এক পর্যটক অংশু গুপ্ত। ১৫ বছরে ৭০টি দেশ ঘুরেছেন। তিনি এখন বাকিদের পরামর্শ দেন কী ভাবে কম খরচে, কম লাগেজ় নিয়ে, পরিবেশের কম ক্ষতি করে ঘোরা যায়। কেউ খোঁজার চেষ্টা করেন দেশের কোনও এক প্রান্তের সংস্কৃতি, কেউ জানার চেষ্টা করেন সঙ্গীত। সেই জানাই অনেকে তাঁর পেশাগত ক্ষেত্রেও কাজে লাগান।

কী ভাবে শুরু করবেন ‘স্লো ট্র্যাভেল’?

প্রথমেই জায়গাটি সম্পর্কে বিশদে জানুন। তার পর হাতে যথাসম্ভব বেশি সময় নিয়ে জায়গাটি ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করুন। থাকার জন্য বেছে নিতে পারেন হস্টেল। এতে আর পাঁচজনের সঙ্গে সংযোগের সুযোগ বাড়ে। জানা যায় বিভিন্ন জায়গার সংস্কৃতি, চেনা যায় বিভিন্ন ধরনের মানুষ। স্থানীয় সংস্কৃতির সন্ধানও করতে পারেন সেখানে গিয়ে। পুরোটাই নির্ভর করছে ব্যক্তিগত আগ্রহ, কৌতূহলের উপর।

Travel Tips Travel Trend
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy