Advertisement
E-Paper

নাথাং, জুলুখের প্রবল ঠান্ডায় থাকতে আপত্তি? সিল্ক রুট ভ্রমণে আর কোথায় রাত্রিবাস করা যায়?

রেশম পথ ভ্রমণের সময় অনেকেই রাত্রিবাস করেন জুলুখে। কেউ আবার থেকে যান নাথাং-এও। দু’টি জায়গা সুন্দর ঠিকই, কিন্তু বেশ উঁচুতে। ঠান্ডা প্রবল। উচ্চতা এবং ঠান্ডা এড়াতে চাইলে রেশম পথ ভ্রমণের সময় থাকতে পারেন আর কোন স্থানে?

গানেক ভিউ পয়েন্ট থেকে সিল্ক রুট।

গানেক ভিউ পয়েন্ট থেকে সিল্ক রুট। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৫ ১২:০৪
Share
Save

পাহাড়ের কোলে সর্পিলাকার পথ। সেই পথেরই দুর্দমীয় আকর্ষণ। শোনা যায়, এক সময় এই পথ ধরেই রেশম তন্তু নিয়ে যাওয়া হত ভিন্ দেশে। জেলেপ লা দিয়ে এ দেশের সঙ্গে তিব্বত ও মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য চলত। রেশম তন্তুর এই বাণিজ্যপথই এখন জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ‘সিল্ক রুট।’ পূর্ব সিকিমের এই ‘জিগ্জ‌্যাগ’ রাস্তা দেখতেই সেখানে বছরভর ভিড় জমান পর্যটেকরা। শীতের দিনে বাড়তি আকর্ষণ বরফ। আর বরফ গললে, রূপ হয় এক্কেবারে আলাদা। শুধু তো পথ নয়, উদীয়মান সূর্য, ঝর্না, নদী— বিস্তীর্ণ সিল্ক রুট বা রেশম পথের পর্যটন আকর্ষণ কিছু কম নয়। থাম্বি ভিউ পয়েন্ট, গানেক ভিউ পয়েন্ট, কুপকুপ লেক, ছাঙ্গু, নাথুলা রেশম পথ বেড়াতে এলে দ্রষ্টব্যের তালিকায় থাকে এমন অনেক কিছুই। রেশমপথ ভ্রমণের সময় দুই বা তিন দিন রাত্রিবাস করলে, সময় নিয়ে ঘোরা যায়। যাত্রাপথের ধকলও এতে কমে। কেউ রেশমপথ ভ্রমণ শুরু করেন সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে, কেউ আবার ঋষিখোলা বা আরিটারে থেকেও এই পথ ঘুরে নেন। তবে রেশম পথের যাত্রায় অনেকেরই পছন্দের তালিকায় থাকে জুলুখ এবং নাথাং। ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত জুলুখ ছবির মতো সাজানো একটি জনপদ। এর কাছেই থাম্বি ভিউ পয়েন্ট। জুলুখের বিভিন্ন ভিউ পয়েন্ট থেকে রেশমপথের সর্পিল বাঁক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে জুলুখের সমস্যা হল, এর উচ্চতা এবং প্রবল ঠান্ডা। নাথাংয়ের ক্ষেত্রেও তাই। নাথাংয়ের উচ্চতা ১৩ হাজার ৪০০ ফুট। সঙ্গে বয়স্ক মানুষ এবং শিশু থাকলে, অনেকেই জুলুখ এবং নাথাংয়ের রাত্রিবাস এড়িয়ে চলতে চান। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকে, এই পথে ঘুরতে গেলে আর কোথায় রাত্রিবাস করা যায়, যেখান থেকে জুলুখ বেশি দূ্রে হবে না, অথচ অপেক্ষাকৃত কম উঁচু স্থানে, কম ঠান্ডায় সাচ্ছন্দ্যে সময় কাটানো যায়?

সিল্ক রুট ভ্রমণের পরিকল্পনায় অনেকেই রাতে থাকার জন্য সিলারিগাঁও, ঋষিখোলা, আরিটার রাখেন। পাহাড়ি হলেও কিন্তু এই জায়গাগুলি তুলনামূলক নিচুতে। ফলে গ্রীষ্মে এখানে ঠান্ডা অপেক্ষাকৃত কম। সে ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন, আরও কয়েকটি জায়গা, যেখানে থাকলে সিল্ক রুট ভ্রমণ সহজ যেমন হবে, তেমনই রয়ে যাবে সুন্দর স্মৃতি।

পদমচেন

রেশম পথ ভ্রমণের সময় দু’দিন কাটিয়ে যেতে পারেন পদমচেনেও। এখান থেকেও সিল্ক রুট ঘুরে নেওয়া যায়।

রেশম পথ ভ্রমণের সময় দু’দিন কাটিয়ে যেতে পারেন পদমচেনেও। এখান থেকেও সিল্ক রুট ঘুরে নেওয়া যায়। ছবি: প্রতীকী।

ঘন বনানীতে ঢাকা পাহাড়ি গ্রাম পদমচেন। নামটি যেমন সুন্দর, এই জনপদও ঠিক তেমনই। সিল্ক রুট সার্কিটের এই ছোট্ট জনপদটি ক্রমশ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জায়গাটির উচ্চতা ৯০০০ ফুট। ঠান্ডা থাকলেও, শীতের কামড় জুলুখ বা নাথাংয়ের মতো নয়। পদমচেন এমন একটি শান্ত, সুন্দর গ্রাম, যেখানে অলস যাপনেই কাটিয়ে দেওয়া যায় দু'য়েকটি দিন। কেউ যদি রেশম পথের নির্দিষ্ট ভিউ পয়েন্টে না-ও যেতে চান, তিনিও কিন্তু ভ্রমণের তালিকায় রাখতে পারেন পদমচেন। আঁকাবাঁকা পথ, পথের ধারে রঙিন পতাকা, পাখির কলতান, গ্রামবাসীদের সরল জীবনযাত্রা— এই সব কিছুই এই স্থানের আকর্ষণ। এই গ্রাম পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। পদমচেন থেকে থাম্বি ভিউ পয়েন্টের দূরত্ব মোটামুটি ১৮ কিলোমিটার। মেঘমুক্ত দিনে থাম্বি ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখা মেলে শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার।

আগমলোক

আগমলোকে থেকেও সমগ্র সিল্ক রুট ঘুরে নিতে পারেন।

আগমলোকে থেকেও সমগ্র সিল্ক রুট ঘুরে নিতে পারেন। —নিজস্ব চিত্র।

লিংতামকে সিল্করুট বা রেশমপথের প্রবেশদ্বার বলা যেতে পারে। লিংতাম থেকেই শুরু হয় রেশমপথ পরিক্রমা। আগমলোকের অবস্থান হল আপার লিংতামে। উচ্চতা ৬০০০ ফুট। প্রবল ঠান্ডা যেমন নেই, তেমনই গরমও নেই এখানে। নিবিড় ভাবে প্রকৃতির সান্নিধ্য চাইলে আগমলোক হল আদর্শ জায়গা। পর্যটকের ভিড় নেই এখানে। থাকার জায়গা বলতে হাতে গোনা কয়েকটি হোম স্টে। লিংতাম জায়গাটি ইদানীং কিছুটা জনবহুল হয়ে পড়েছে। তবে লিংতাম ছাড়িয়ে খানিক উপরে আগামলোকে চলে এলে সে ঝঞ্ঝাট একেবারেই নেই। এই জায়গা থেকে শোনা যায় অনবরত জলস্রোতের শব্দ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে যায়, অদূরেই রয়েছে বকুটার নদী, তার উপরে ঝুলন্ত সেতু। আগামলোকে পাহাড়ের মাথায় রয়েছে এক ছোট্ট গুম্ফা। সেই ছোট্ট গুম্ফাই এখন আড়ে-বহরে বড় হচ্ছে। নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় হোম স্টে ব্যবসায়ীদের আশা, গুম্ফা পুরোদস্তুক তৈরি হয়ে গেলে পর্যটক মহলে আগমলোকের আকর্ষণ আরও বাড়বে। রেশম পথ ভ্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চতার সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নেওয়াও খুব জরুরি। সে ক্ষেত্রে আগামলোকে রাত্রিবাস করে তার পর জুলুখ এবং নাথাং গেলে, উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সুবিধা হবে। আগমলোক থেকে জুলুখের দূরত্ব মোটামুটি ১৮ কিলোমিটার। লিংতাম থেকে ঘুরে নেওয়া যায় কিউখোলা জলপ্রপাত। সেখানে জিপ লাইন-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের সুযোগ রয়েছে।

রোলেপ

ক্যালেন্ডারের ছবির মতোই সুন্দর রোলেপ।

ক্যালেন্ডারের ছবির মতোই সুন্দর রোলেপ। ছবি: সংগৃহীত।

পূর্ব সিকিমের রংলি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রোলেপও ছবির মতো সুন্দর । পাহাড়ি এই গ্রাম পক্ষীপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের। রোলেপের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে খরস্রোতা রংপো খোলা। এখানে থেকে দেখা নেওয়া যায় বুদ্ধ জলপ্রপাত, শোকে খোলা। সিল্ক রুট বা রেশম পথে যাওয়া অথবা ফেরার সময় অন্তত দু'টি দিন রাখতে পারেন রোলেপে থাকার জন্য। এখানে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু। হেঁটে ঘোরার জন্যও বেশ কিছু জায়গা আছে। আর রয়েছে গুহা, বৌদ্ধ মঠ। রোলেপে থাকার জন্য হোটেল নয়, বেশ কয়েকটি হোম স্টে রয়েছে। সিল্ক রুট ভ্রমণের পরিকল্পনা না থাকলেও, শুধু রোলেপ রাখতে পারেন পর্যটন তালিকায়। ধীরে সুস্থে রেশমপথ বেড়ানোর পরিকল্পনা থাকলে রোলেপ, আগমলোক, পদমচেন, এই তিনটি জায়গাতেই এক থেকে দুই রাত করে কাটাতে পারেন। এতে যাত্রাপথের ধকল যেমন কমবে, তেমনই প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য মিলবে।

মনে রাখা দরকার: পূর্ব সিকিমের রেশম পথ বেড়ানোর জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। স্থানীয় গাড়ি চালকেরাই সেই ব্যবস্থা করে দেন। এ জন্য প্রয়োজন হয় ভোটার কার্ড এবং ছবির।

কী ভাবে যাবেন? নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে রোলেপের দূরত্ব ১৩৭ কিলোমিটার। নিউ জলপাইগুড়ি আগমলোকের দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ৩৫০০-৪৫০০ টাকা । কম খরচে আসতে চাইলে, এনজেপি বা শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকগামী শেয়ার জিপ কিংবা বাসে রংপো নেমে, সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। পেতে পারেন শেয়ার গাড়িও।

Travel Tips Travel Spots Tourist Spots Sikkim Tour

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।