Advertisement
E-Paper

আলফা, বিটা গামা সিগমা-র দেশে

মার্চের এলোপাথাড়ি ঠান্ডা হাওয়া সত্ত্বেও ঘড়ির কাঁটা যখন ‘সামার টাইম’ ছুঁই ছুঁই, তখন মন আর বাঁধ মানল না। আবহাওয়ার পাতা থেকে মন তখন নিজেকে মেলে দিল কবিতার খাতায়। স্কুলে যখন ইতিহাস পড়তাম, তখন মনের ভেতর নিজের মতো করে গড়া একটা ইতিহাসের দেশ ছিল। তার নাম গ্রিস। কল্পনার ভূগোলের সঙ্গে মানচিত্রের ভূগোল এর কোনও মিল ছিল না। যত বারই ইতিহাস আর ভূগোলের মধ্যে পারষ্পরিক সংযোগের চেষ্টা করেছি, তত বারই হয় ইতিহাসটা পাতিহাঁস হয়ে গিয়েছে, নয়তো ভূগোলটা তালগোল পেকে গিয়েছে। ভাবলাম এ বেলা তা হলে এই দুইয়ের সংযোগ স্থাপন করি। তাই গ্রিসে যাওয়াই ঠিক করলাম।

অন্বেষা চট্টোপাধ্যায় (চট্টরাজ)

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০০:০০

মার্চের এলোপাথাড়ি ঠান্ডা হাওয়া সত্ত্বেও ঘড়ির কাঁটা যখন ‘সামার টাইম’ ছুঁই ছুঁই, তখন মন আর বাঁধ মানল না। আবহাওয়ার পাতা থেকে মন তখন নিজেকে মেলে দিল কবিতার খাতায়।

স্কুলে যখন ইতিহাস পড়তাম, তখন মনের ভেতর নিজের মতো করে গড়া একটা ইতিহাসের দেশ ছিল। তার নাম গ্রিস। কল্পনার ভূগোলের সঙ্গে মানচিত্রের ভূগোল এর কোনও মিল ছিল না। যত বারই ইতিহাস আর ভূগোলের মধ্যে পারষ্পরিক সংযোগের চেষ্টা করেছি, তত বারই হয় ইতিহাসটা পাতিহাঁস হয়ে গিয়েছে, নয়তো ভূগোলটা তালগোল পেকে গিয়েছে। ভাবলাম এ বেলা তা হলে এই দুইয়ের সংযোগ স্থাপন করি। তাই গ্রিসে যাওয়াই ঠিক করলাম।


এজিয়স গরদিয়স

গ্রিসের পশ্চিম দিকে অনবদ্য সুন্দর সমুদ্রমেখলার মধ্যে পাহাড় আর পাহাড়তলি— যেখানে চুপিসাড়ে মাথা তুলে আছে সেই ছোট্ট ভূখণ্ড। নাম তার কর্ফু। গ্রিক মাইথোলজিতে কর্ফুকে করকিরা বা কারকিরা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সমগ্র দ্বীপ জুড়ে রয়েছে ছোট ছোট গ্রাম। কোনওটা পাহাড়ের মাথায়, কখনও পাহাড়ের ঢালে আবার কোনওটা বা পাহাড়ের অপেক্ষাকৃত সমতল পাদদেশে।

সারা দিন লেগে গেল চিপ ফ্লাইট খুঁজতে। এর পর তো তার বুকিং! শেষে হোটেল বুকিং সারার পর দেখা গেল দিন কাবার হয়ে গিয়েছে। এর পরের তিনটে দিনের অনেকটা সময় কেড়ে নিল লিস্ট তৈরি, কেনাকাটা আর প্যাকিং।

আমাদের যাত্রা শুরু হল। কর্ফুতে নামতে চলেছি জানবার পরে প্লেন থেকে নীচের দিকে তাকাতেই বুকটা ধড়াস করে উঠল! এয়ারপোর্ট কই? রানওয়ে কোথায়? চার পাশে সবুজ পাহাড় আর ফাঁকে ফাঁকে নীলচে সবুজ জলের আলপনা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছিল না। নামবার সময় দেখলাম, পাতলা একচিলতে রানওয়ে সমুদ্রের বুকচিরে চলে গিয়েছে।


বরবটি

কর্ফুতে যখন নামলাম, তখন সূর্য প্রায় পাটে বসেছে। এখানে বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা নির্ভরযোগ্য নয়। দ্বীপের প্রায় পুরোটাই পাহাড়। তাই, হয়তো পরিবহণ ব্যবস্থা ভাল ভাবে গড়ে ওঠেনি। আমরা গাড়ি বুক করে রেখেছিলাম। তার কাগজপত্র দেখানো, চাবি নেওয়া— সব মিলিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতে অনেকটা সময় লেগে গেল। যখন গাড়ি নিয়ে রওনা দিলাম, তখন সন্ধের অন্ধকার ঘন হতে শুরু করেছে।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই চমক! কিছু স্ন্যাক্স আর এক বোতল জল কিনতে গিয়ে দেখি, গোটা পৃথিবীটাই পাল্টে গিয়েছে। দোকানের নাম বেশির ভাগই গ্রিক অক্ষরে। অঙ্ক-ফিজিক্সের আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা চিহ্নেরা সব সচল হয়ে জীবন্ত পৃথিবীতে নেমে এসেছে। অবাক কিছু মুহূর্ত পেরিয়ে গেল। তার পর স্থানীয় এক জনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, দোকানে নেপো বললেই জলের বোতল দেবে। বোতলে নেপো লেখা ছিল, তবে সেটা জলের নাম না জল উত্পাদক কোম্পানির সেটা বুঝতে পারিনি। পরে জল কিনতে গিয়ে ‘নেপো’ বললেই পেয়েছি।

প্রথম দিন গ্রিক শব্দগুলো পড়তে না পারলেও, পরের দিন একটা মজার জিনিস আবিষ্কার করলাম। গ্রিক অক্ষরের বদলে ইংরেজি বসালে শব্দটা মোটামুটি পড়ে ফেলা যায়। তার পর থেকে এটা আমাদের একটা খেলা হয়ে গিয়েছিল। যেমন, করকিরা বা কর্ফু লেখা আছে Κέρκυρα; একে বদলে নিলাম KERKURAতে।


ডাইং এচিলিস

আমাদের হোটেল যেখানে, সেই বিচের নাম অনুসারে জায়গাটার নাম এজিয়স গরদিয়স। নেভিগেটরের র্নির্দেশিত পথে আমরা চলতে লাগলাম। খানিকটা যেতেই রাস্তা হয়ে উঠল অনেকটা দার্জিলিং থেকে টাইগার হিলের দিকের রাস্তার মতো বা অনেকটা গ্যাংটক থেকে বাবামন্দিরের দিকের রাস্তার মতো। বার বার বাঁক আর পাহাড়ি রাস্তায় অনভ্যস্ত আমার স্বামীর হাতে স্টিয়ারিং থাকায়, আমাদের মা-ছেলেকে পুরো পথটা বাকরুদ্ধ করে রেখেছিল। রাত্রি আটটা নাগাদ হোটেলে পৌঁছলাম। ব্যালকনি থেকে দেখলাম অন্ধকারকে ঠেলে এগিয়ে আসা সাদা ফেনার স্তূপ আর শুনতে পেলাম গর্জন।

খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল। আকাশ তখনও অন্ধকার। ব্যালকনিতে বেরোলাম। বেশ ঠান্ডা! অগত্যা সূর্যোদয়ের জন্য ঘরেই অপেক্ষা করতে হল। আলো ফুটতে দেখলাম, আমাদের হোটেল যে পাহাড়ে তার পাশে আর একটি পাহাড়ের মাথা। আর সমুদ্রের মাঝে জেগে আছে অনেক ছোট-বড় টিলা। সূর্যের নরম আলো একে একে তাদের মাথা স্পর্শ করল।


প্যালিয়কাস্ত্রিত্সা

প্রথম দিনের গোটাটাই কেটে গেল এজিয়স গরদিয়সেই। সমুদ্রের মাঝে যে টিলাগুলো হোটেল থেকে দেখেছিলাম, সেগুলো বিভিন্ন আকার আর রঙের মসৃণ পাথর আর ঝিনুকের যুগলবন্দি। সমুদ্রের ঢেউ দিনের অনেকটা সময় জল দিয়ে ঘিরে রাখে এগুলোকে। তাই কাছে যাওয়া যায় না। স্থানীয়দের কাছে জানতে পারলাম, বিকেলের দিকে জল কমবে, তখন যাওয়া যাবে। আমরা সারাদিন অপেক্ষার পর সেই সুযোগ পেয়েছিলাম। বালির চরে লতানো ঝোপে রং-বেরঙের বাহারি ফুল আর লক্ষ লক্ষ নুড়ির সঙ্গে ঢেউয়ের মাতামাতির শব্দ নিয়ে সন্ধ্যা ঘনালো।

সবুজ পাহাড় আদতে অলিভ এর জঙ্গল। মাঝে মাঝে ক্রিপ্টমেরিয়া-থুজারা আছে বটে! তবে অলিভের তুলনায় তারা অনেক কম। উপত্যকা এবং পাহাড়ের অনেকটা অংশে মাঝে মাঝে কমলালেবু আর আপেলের বাগান চোখে পড়ছিল। এজিয়স গরদিয়সের বিচের উপর এক ডাক্তারের বাড়ির সংলগ্ন এলাকায় বাগান চোখে পড়ল। আমরা দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। গোটা বাগানটাই বিভিন্ন রকমের এবং আকারের কমলালেবুর গাছে ভরা। আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি নিজের বাড়িতে ডেকে বসলেন। গল্পগুজব হল। কফি পান শেষে একঝুড়ি কমলালেবু এনে আমাদের হাতে দিলেন। ওঁর কাছেই শুনলাম কর্ফুর নিজস্বতা দেখতে হলে মার্চ খুব ভাল সময়। আর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর হল জমাটি কর্ফু। তখন ছোট ছোট জাহাজে করে বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরে আসা যায়। অনেক সি-স্পোর্টস উপভোগ করা যায়। পাহাড়ের গায়ে গায়ে অনেক ছোট-বড় সুপার মার্কেট, রেস্তোরাঁ, প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসের দোকান রয়েছে। মানুষজন মিশুকে এবং অন্যকে সাহায্য করতে উত্সাহী। মাঝে মাঝে ভাষার বাধা আগল টানলেও তা ততটা প্রবল নয়।


এচিলিয়ন প্যালেসের ভিতর

এখানকার রেস্তোরাঁর স্থানীয় খাবারের জুড়ি নেই। প্রধানত পিতা ব্রেডের সঙ্গে বিভিন্ন সব্জি এবং মাংস গ্রিল করে ফিতা চিজ এবং নানা ধরনের সস দিয়ে পরিবেশিত গাইরস এখানকার একটি জনপ্রিয় খাবার। এ ছাড়া ‘কতপাওলো মি রাইজি’ মানে ভাত-চিকেনও আর একটি জনপ্রিয় পদ। এদের খাবারে অলিভের চল খুব। স্টার্টার থেকে শুরু করে ডেজার্ট পর্যন্ত প্রায় সমস্ত প্রকার পদেই কম-বেশি অলিভ জিভে পড়বেই।

দ্বিতীয় দিন আমরা সিদারি-র দিকে রওনা হলাম। কর্ফুর একেবারে উত্তরে এই সমুদ্র তট। অসাধারণ এর রূপ। ন্যাড়া পাথরের মাঝে মাঝে সবুজের ছোপ। অনেক জায়গায় পাথরের ফাঁক দিয়ে সমুদ্র ঢুকে পড়ে দু’ভাগ করে দিয়েছে। এ রকমই সমুদ্রের মাঝখানে দু’টি বড় টিলার মাঝখান দিয়ে ঢুকে পড়েছে সমুদ্র— নাম ক্যানেল-দ্য-আমুর। একটি ছোট্ট নাম না-জানা নদীর মোহনা দেখলাম এখানে।

সিদারিতে জনবসতি বেশ ঘন। সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে বেশ কিছু হোটেলও চোখে পড়ল। সারা দিন বালির উপর দিয়ে দৌড়ে, বড় বড় লাঠি দিয়ে বালির উপর কাটাকুটি খেলে আর ফোটো তুলে ক্লান্ত হয়ে হোটেলমুখী হলাম। ফেরার পথে এ রোডায় থামলাম। এটি একটি প্রাচীন ফিশিং ভিলেজ। অপেক্ষাকৃত বেশি জনবহুল। তবে এখানেও সুরম্য সমুদ্র তটের বালুকাবেলা।


পেলেকাস

পর দিন গেলাম কাসিয়পি ও নিসাকি। কাসিয়পি একটি সমুদ্রতট এবং সেই সংলগ্ন গ্রামের নাম। এটি কর্ফুর উত্তর পূর্বে অবস্থিত। অসাধারণ সুন্দর নীল জল আর বালুতট।

এর পর গেলাম নিসাকি। এখানকার সমুদ্র তট ও অসাধারণ। অনেকেই স্নান করছিল এখানে। পা ডোবাতেই দেখি জল খুব ঠান্ডা। তাই সে রসে বঞ্চিত থেকেই হোটেলে ফিরলাম।

চতুর্থ দিন পাড়ি দিলাম প্যালিয়কাস্ত্রিত্সা-র দিকে। শুনেছিলাম বে অফ প্যালিওকাস্ত্রিস্তা অসাধারণ সুন্দর। তাই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের হোটেলে ডেনমার্ক থেকে আসা একটি পরিবারের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তাদের সঙ্গে নিয়ে সে দিন বেড়াতে যাওয়া হল।

এখানে সমুদ্র সৈকত সমতল। তাই নীল জলের নীচে মাছেদের আনাগোনা পরিষ্কার ভাবে সমুদ্র তটে বসে দেখা যায়। আমরা মুগ্ধ চিত্তে দেখলাম। দুপুরে লাঞ্চ সেরে পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগলাম বিখ্যাত মনাস্ট্রির উদ্দেশে। যত উপরে উঠছি তত সুন্দরী হয়ে উঠছে উপর থেকে দেখা প্যালিয়কাস্ত্রিত্সা। একবারে উপরে নির্জন পাহাড়ের চূড়ায় এই মনেস্ট্রি ভার্জিন-মেরির উদ্দেশ্যে নির্মিত। এর ভিতরে একটি ছোট অথচ অসাধারণ মিউজিয়াম রয়েছে। তাতে একটি এত বড় ঝিনুক রয়েছে যে এক জন মানুষ তার ভেতরে অনায়াসে ঢুকে থাকতে পারে। এরই আর এক পাশে প্রাচীন পদ্ধতিতে অলিভঅয়েল তৈরির যন্ত্র রাখা আছে। আমরা সে সব দেখে অলিভ এর মোরব্বা কিনে ফিরে এলাম।

পঞ্চম দিনে আমাদের মূল দ্রষ্টব্য ছিল এচিলিয়ন প্যালেস। গ্রীষ্ম অবকাশ কাটানোর জন্য কর্ফু শহর থেকে অনতিদূরে গাস্তউরিতে এই প্যালেস জার্মানির রানু এলিজাবেথ এটি তৈরি করেছিলেন। লাল কার্পেটে মোড়া সিঁড়ির দু’পাশে এবং হলের ভিতর সাজানো আছে বিখ্যাত সব সৃষ্টি, কখনও রং-তুলির আঁচড়ে, কখনও বা পাথরের গায়ে খোদাই হয়ে। প্যালেসের সিলিং-এর আঁকা ও কারুকাজ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

বাগানের প্রায় মাঝখান জুড়ে রয়েছে ডাইং এচিলিস-এর মূর্তি। আর বাগানের চতুর্দিকে ফুল আর পাম গাছের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড়িয়ে রয়েছে গ্রিক মাইথোলজির অজস্র মূর্তিরা। এই সবের ঘোর কাটিয়ে যখন নীচের দিকে তাকালাম তখন কর্ফু শহর এক ফ্রেমে চোখে ধরা দিল।

অনেক ক্ষণ সময় পেরিয়ে গিয়েছে। বিকেল হব হব যখন, আমরা বেনিটসেস-এর দিকে রওনা হলাম। এখান থেকে বেনিটসেস-এর দূরত্ব দু’মাইলটাক।


সিদারি

এক দিকে পাহাড় আর অন্য দিকে সমুদ্রঘেরা খুব জনপ্রিয় আর একটি ফিশিং ভিলেজ— বেনিটসেস। মে-জুনে যখন টুরিস্টদের সংখ্যা বাড়ে, তখন কলরব মুখর হয়ে ওঠে এই জনপদ। আমরা অবশ্য বেনিটসেস-এর শান্ত সমাহিত রূপ দেখেই ফিরে এলাম।

কর্ফু অজস্র নয়নাভিরাম সমুদ্রবেলায় সাজানো। এজিয়স গরডিয়স প্যালিওকাস্ত্রিস্তা, সিদারি, নিসসাকি, এজিয়স জরজিয়স, বরবটি, দাসসিয়া, ইপসস, পেলেকাস, পেরামা, আরমনেস, জিয়ালিসকারী এ রকম আরও অনেক। প্রত্যেকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আর বৈচিত্রে স্বতন্ত্র। আমরা উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিমুগ্ধ বিস্ময়ে ছুটে বেড়িয়েছি। সবগুলিই আলাদা। সবগুলিই অসাধারণ।

ষষ্ঠ দিনে আমরা কর্ফু শহরের কেন্দ্রস্থল ঘুরে দেখলাম। কর্ফু শহরের দু’টি ভাগ। পুরনো শহর ওল্ড ফোর্ট। আর নতুন শহরের প্রায় মাঝে নিউ ফোর্ট। ওল্ড ফোর্ট সমুদ্রের উপরে কৃত্তিম দ্বীপ এর মতো। গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোজ অসংখ্য পড়ুয়া-ভর্তি বাস আসে এই ফোর্টগুলি ঘুরে দেখিয়ে নিয়ে যেতে। তাই সব সময় জায়গাটা সরগরম থাকে। এবং পার্কিং মেলাও দুষ্কর হয়ে ওঠে। আমরা অলিভ কাঠের তৈরি কিছু সুভেনিয়র সংগ্রহ করলাম সে দিন।

সাত দিন অতিক্রান্ত, এ বার ঘরে ফেরার পালা। সারা দিন প্রাণ মন ভরে উপভোগ করলাম এজিয়স গরডিয়সের সকাল, রোদ ঝলমলে দুপুর। দুপুর গড়াতেই যাত্রা শুরু। চড়াই-উত্‌রাই বেয়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হবে এয়ারপোর্টে।

বিষণ্ণ লাগছিল কি না বলতে পারি না! কিন্তু, বার বার মনে হচ্ছিল আরও এক বার আসব।

কর্ফুর প্রাকৃতিক প্রাচুর্যের সঙ্গে নম্রতা, সৌন্দর্যের সঙ্গে দুর্গমতার যে অপূর্ব রূপ আমি দেখেছি তা আমাকে আবার টেনে আনবে।

যখন বিমান মাটি ছাড়ছে তখন অনুভব করলাম আনন্দে পরিপূর্ণ আমার মন, বিমুগ্ধ আমার দৃষ্টি।

বিস্ময় আমার সহস্রাধিক ক্যামেরাবন্দি ফোটোতে। জানলা দিয়ে তাকিয়ে মনে হল আবার আসতে নিমন্ত্রণ জানালো কর্ফু।

পরিচিতি: আসানসোলের কল্যাণপুরে বেড়ে ওঠা। প্রথমে শ্যামাপ্রসাদ বিদ্যালয় পরে উমারানি গড়াই মহিলা কল্যাণ গার্লস হাই স্কুল। পরে বি বি কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক। বিনোবা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতকোত্তর। স্পনসরড টিচার্স ট্রেনিং কলেজ পুরুলিয়া থেকে বিএড। এর পর ধাদকা নারায়ণচন্দ্র লাহিড়ি বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতা। বি বি কলেজে আংশিক সময়ের শিক্ষকতা। বিবাহ সূত্রে কলকাতায় স্থানান্তর। শ্যামপুর সিদ্ধেশ্বরী কলেজে আংশিক সময়ের শিক্ষকতা, পরে জামশেদপুর থেকে স্বামীর কর্মসূত্রে আমস্টারডামে যাওয়া। সেখানে আমস্টারডাম ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি স্কুলে শিক্ষকতা এবং বর্তমানে স্বামীর কর্মসূত্রে পুত্র-সহ সলিহুল (বার্মিংহাম, ইউ কে)-এর বাসিন্দা। শখ— বেড়ানো, কবিতা লেখা, গান শোনা এবং কাছের জনদের রান্না করে খাওয়ানো।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy