Advertisement
E-Paper

পর্যটক টানতে সাজানো হচ্ছে বড়দি পাহাড়

কংসাবতী নদীর তীরে ছোট্ট একটা পাহাড়। শাল মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা সারেঙ্গার সেই বড়দি পাহাড়তলিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে চড়ুইভাতি করতে শীতকালে অনেকে আসেন। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যা আর পরিকাঠামোর অভাবে পর্যটকদের বড়দি পাহাড়ে পৌঁছতে ভুগতে হচ্ছে। কংসাবতী নদীর তীরে ছোট্ট একটা পাহাড়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৭:১০
কংসাবতীর কোল ঘেঁষা এই পর্যটনকেন্দ্র সেজে উঠছে। ছবি: উমাকান্ত ধর।

কংসাবতীর কোল ঘেঁষা এই পর্যটনকেন্দ্র সেজে উঠছে। ছবি: উমাকান্ত ধর।

কংসাবতী নদীর তীরে ছোট্ট একটা পাহাড়। শাল মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা সারেঙ্গার সেই বড়দি পাহাড়তলিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে চড়ুইভাতি করতে শীতকালে অনেকে আসেন। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যা আর পরিকাঠামোর অভাবে পর্যটকদের বড়দি পাহাড়ে পৌঁছতে ভুগতে হচ্ছে।

অবশেষে জঙ্গলমহলের এই পর্যটনকেন্দ্রকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করতে এ বার একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে সারেঙ্গা ব্লক প্রশাসন। এই পর্যটনকেন্দ্রকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার কাজও শুরু হয়েছে। সারেঙ্গার বিডিও হীরকজ্যোতি মজুমদার বলেন, “কংসাবতী নদী তীরবর্তী বড়দি পাহাড় দেখতে পর্যটকেরা আসেন। শীতের মরশুমে চড়ুইভাতির জমাটি আসর বসে। কিন্তু পরিকাঠামোয় ঘাটতি রয়েছে। পর্যটকদের সুবিধা বাড়ানোর জন্যই একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, এ জন্য অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় সাহায্য তহবিল থেকে আপাতত ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে।

বাঁকুড়া থেকে রাইপুরের রাস্তায় পড়ে পিড়রগাড়ি মোড়। সেখান থেকে খাতড়া যাওয়ার রাস্তায় ছ’কিমি দূরে চুয়াগাড়া মোড়। ওই মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা ধরে চার কিমি গেলেই পাওয়া যাবে নেতুরপুর পঞ্চায়েতের কালাপাথর গ্রাম লাগোয়া বড়দি পাহাড়। তার কোলঘেঁষে বয়ে চলেছে কংসাবতী নদী। নদীর তীরে কালাপাথর গ্রামে রয়েছে একটি ঝর্ণা। স্থানীয় মানুষের কাছে তা কালাঝর্ণা নামে পরিচিত।

বিডিও জানান, পরিকল্পনা মাফিক পাহাড়ে ওঠার চারিদিকে চারটি রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। পর্যটকদের থাকার জন্য দু’টি ঘর, শৌচাগার, পাহাড়তলিতে একটি বাগান তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পানীয় জলের জন্য নলকূপের পাশাপাশি সাব-মার্সিবল পাম্প বসানো হবে। অদূর ভবিষ্যতে এখানে রোপওয়ে তৈরির ভাবনাও রয়েছে। এই কাজ শেষ হয়ে পর্যটকেরা এখানে এসে স্বচ্ছন্দে পিকনিক করতে পারবেন।

একসময়ে মাওবাদী আতঙ্কে জঙ্গলমহলে পর্যটকেরা আসতে ভয় পেতেন। গত তিনবছরে সেই পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। এ বছর জঙ্গলমহলের প্রায় প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যা ও পরিকাঠামোর অভাব থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাটতি রয়েছে বলে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ পর্যটকদের। এ বার তাই পরিচিত পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি স্বল্প পরিচিত পর্যটনকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নেও জোর দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

সম্প্রতি বড়দি পাহাড়ে গিয়ে দেখা গেল, পাহাড়ে ওঠার জন্য চারদিকে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। পায়ে হেঁটে পাহাড় দর্শনের পাশাপাশি চারচাকা গাড়ি ওঠার রাস্তাও তৈরি করা হচ্ছে। পর্যটকদের থাকার জন্য ঘর, শৌচাগার নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। পাহাড়ের নিচে পিকনিক করতে আসা খাতড়ার সাবুবাইদ গ্রামের অনুপ পাত্র বললেন, “কংসাবতী নদীর তীরে বড়দি পাহাড় আর ঝর্ণা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। এত সুন্দর মনোরম একটা পরিবেশের দৃশ্যপটকে প্রশাসন সাজিয়ে তুলছে দেখে ভাল লাগছে। ভবিষ্যতে বাড়ির সবাইকে নিয়ে আবার আসব।” রাইপুরের সোনামণি দুলে, অসিত দুলেরা বলেন, “এতসুন্দর একটা পিকনিক স্পট। কিন্তু শুধু পাহাড় আর নদী ছাড়া কিছুই নেই। বিশ্রামাগার, শৌচাগার না থাকায় আমাদের অসুবিধা হল। তবে প্রশাসন এ সবের ব্যবস্থা করছে জেনে আমরা খুশি।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শীতকালে কংসাবতী নদীর তীরে, বড়দি পাহাড়ে সারেঙ্গা, রাইপুর, রানিবাঁধ, খাতড়া, সিমলাপাল এলাকার বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন। কিন্তু নানা অব্যবস্থার জন্য তাঁদের সমস্যা হয়। এখানে থাকার ব্যবস্থা হলে বহু দূর দূরান্তের পর্যটকেরাও এ বার আসবেন। এলাকার অর্থনীতিও ভাল হবে। স্থানীয় কালাপাথর গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ কিস্কু, শিবলাল মাণ্ডি বলেন, “প্রশাসন এতদিনে যে কাজ শুরু করেছে তাতে আগামী শীতকাল থেকে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়বে বলে আমরা আশাবাদী।” নেতুরপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের দীপালি দুলে বলেন, “১০০ দিনের প্রকল্পে আমরা ওই পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এর ফলে যাতায়াতের সুবিধা হবে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য আমরা আরও কিছু কাজের পরিকল্পনা নিচ্ছি।”

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy