Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

হাতি বোঝে আবহাওয়ার হালচাল

সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।কুলোর মতো কান আর মূলোর মতো দাঁতেই কেল্লাফতে! না দাঁত এখানে তেমন ভূমিকা না নিলেও কানের গুরুত্ব অবশ্যই মানতে হবে। বড় বড় কান থাকায় অনেক সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম শব্দও শুনতে পায় হাতিরা। তা সে বিপদ সঙ্কেত হোক বা মাইলখানেক দূর থেকে ঝড়ের আওয়াজ। এমনটাই দেখলেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ সাত বছর ধরে হাতিদের সঙ্গে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করে তাদের এই ‘সিক্রেট’টা জেনে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

• চিন যাযাবর সম্রাটদের বিশাল আস্তানার খোঁজ

চিনে খোঁজ মিলল যাযাবরদের হাজার বছরের পুরনো একটি আস্তানার। লিয়াও সাম্রাজ্যের সময়ের এই আস্তানার খোঁজ মিলেছে চিনের জিলিন প্রদেশের উত্তর-পূর্বে কিয়ান কাউন্টিতে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত আস্তানাগুলির মধ্যে এটিই প্রাচীনতম। লিয়াও সাম্রাজ্যের বেশির ভাগ শাসকই ছিলেন এই যাযাবর গোষ্ঠীর আন্তর্গত। এদের মধ্যে খিতান বংশের প্রশাসনিক রাজধানী ছিল এই কিয়ান। যদিও তাদের মূল রাজধানী ছিল মঙ্গোলিয়ার ভিতরে। প্রত্নতাত্ত্বিক দলটির অন্যতম প্রধান জিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেং এনসুয়ে জানিয়েছেন, যাযাবর জাতির এই লিয়াও বংশের রাজাদের বছরের চার মরসুমের জন্য চারটি আস্তানা থাকত। গ্রীষ্ম ও বসন্তকালের জন্য রাজ্যের উত্তরে এবং শীত ও শরতের জন্য দক্ষিণে ‘ঘর’ বাঁধত তারা। শরতের এমনই এক সাময়িক আস্তানার খোঁজ মেলে বছর পাঁচেক আগে। শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি। প্রথমে আস্তানাটি কত বড় সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না বিজ্ঞানীদের। পাঁচ বছর পর চলতি বছরের অগস্টে শেষ হয় খনন। তখনই জানা যায় এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত আস্তানাগুলির মধ্যে এটিই বৃহত্তম। মোট চারটি ভাগ ছিল আস্তানাটির। সবচেয়ে বড়টির প্রস্থ ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার। এর মধ্যে ন’শোটি ছোট ছোট কুটীর ছিল। আস্তানাটির মধ্যে থেকে শতাধিক প্রাচীন মূর্তি, তামার মুদ্রা, পোর্সেলিন এবং বুদ্ধ মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। লিয়াও সাম্রাজ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে এই আবিষ্কার সাহায্য করবে বলে দাবি প্রত্নতাত্ত্বিকদের।

• ভ্রূণের প্রাচীনতম অস্ত্রোপচারের হদিশ

বিজ্ঞানের দৌলতে এখন বিভিন্ন জটিল অস্ত্রোপচার নিমেষেই করে ফেলছেন চিকিত্সকেরা। সারিয়ে তোলা হচ্ছে ভ্রূণের দেহের বিভিন্ন সমস্যাও। কিন্তু এই ধরনের চিকিত্সার সূচনা তো এই হাল আমলে। দেড় থেকে দু’শো বছর আগে কি ভাবা যেতে এই ধরনের কিছু? কিছু দিন আগে পর্যন্ত এর উত্তর ছিল— না। কিন্তু এই না-কেই হ্যাঁ-তে পরিণত করেছে কয়েক সেকেন্ডের এক ভূমিকম্প। যা কিনা কেড়ে নিয়েছিল শতাধিক মানুষের প্রাণ।

৬ এপ্রিল ২০০৯। ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মধ্য ইতালির লা অ্যাকুইলা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল প্রায় গোটা শহর। সরকারি ভাবে মৃত্যু হল তিন শতাধিক মানুষের। বহু বাড়ির সঙ্গে ভেঙে পড়ল ঐতিহাসিক সেন্ট জন দ্য ইভানজেলিস্ট গির্জার একাংশ। ধ্বংসস্তূপ সরাতে গিয়ে মেঝের ফাটলের নীচে আবিষ্কার হয় একটি বড়সড় সমাধির। একাধিক মমির সঙ্গে খোঁজ মেলে একটি ভ্রূণের। রেডিওগ্রাফ করে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা দেখেছেন, মমিগুলি ১৮৪০ সালের কাছাকাছি সময়ের। পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, ২৯ সপ্তাহের ভ্রূণটির হাত, পা-সহ দেহের একাধিক অংশই সঠিক জায়গায় নেই। খুলির বেশ কিছু অংশ এবং মেরুদণ্ড ছিল কাটা। বিজ্ঞানীদের দাবি, জন্মের বেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই কোনও বিশেষ কারণে অস্ত্রোপচার করা হয় ওই ভ্রূণের। তবে তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। প্রায় দু’শো বছর আগে হওয়া ভ্রূণের অস্ত্রোপচারের এটাই প্রাচীনতম নিদর্শন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

• হাজার বছরের পুরনো গ্রামের খোঁজ অ্যারিজোনায়

আমেরিকার অন্যতম বড় জাতীয় উদ্যান পেট্রিফায়েড ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা এই জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ৩৮০ বর্গ কিলোমিটার। বছর খানেক আগে উত্তর অ্যারিজোনার মরুভূমির একটি বড় অংশ এই জাতীয় উদ্যানের দখলে আসে। গবাদি পশু প্রজননের জন্য ব্যবহৃত এই অঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে অভাবনীয় ভাবে ইতিহাস খুঁজে পান সংস্থার কর্মীরা। এর পর শেষ দু’বছর ওই অঞ্চলে খোঁড়াখুঁড়ি করে পাশাপাশি দু’টি যমজ গ্রামের হদিশ পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে গ্রাম দু’টির ‘বয়স’ কমপক্ষে তেরোশো বছর। ঘাসে ঢাকা বিশাল বালিয়াড়ির নীচে গত বছরই মিলেছিল বাড়ি-ঘরের কিছু চিহ্ন। খোঁড়াখুঁড়ির পরে খোঁজ মেলে এক বিশাল শস্যাগারের। পাওয়া যায় ৫০-৭৫টি বাড়ির অংশবিশেষ। বেশির ভাগ বাড়ির দেওয়াল এবং মেঝে বেলে পাথরের তৈরি। বিশেষজ্ঞদের মতে বেলে পাথর তো দূর, এই অঞ্চলে কোনও রকম পাথরেরই অস্তিত্ব নেই। ফলে প্রাচীন এই গ্রামে খোঁজ পাওয়া সব পাথরই বাইরে থেকে আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রামে একটি বহুতলেরও খোঁজ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। মরুভুমির এই অংশে থাকা যাযাবর গোষ্ঠীর লোকেরা পাথরের এই কাঠামোগুলিকে বহু দিন ধরেই শ্রদ্ধার চোখে দেখে আসছে। বহু দিন ধরে চালু রয়েছে কিছু লোকগাথাও। তবে গ্রাম দু’টি কবে ধ্বংস হল, কেনই বা বাসিন্দারা এগুলি ছেড়ে চলে গেলেন, তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এই অঞ্চলের হারানো ইতিহাস জানতে এই আবিষ্কারের গুরুত্ব অপরিসীম বলে দাবি তাঁদের।

ঐতিহ্য

• বিপন্ন ভেনিস

বিপন্ন ভেনিসের অস্তিত্ব! ছবির মতো সাজানো এই ইতালীয় শহর বলতে প্রথমেই মনে পড়ে অসাধারণ নির্মাণস্থাপত্য, শিল্পকলা এবং অবশ্যই গন্ডোলায় ভেসে বেড়ানোর ছবি। কিন্তু ভেনিসের সেই ছবি কত দিন অক্ষুণ্ণ থাকবে, তা নিয়ে এখনই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইউনেস্কোর বিপন্ন স্থাপত্যকীর্তির তালিকায় নাম উঠতে পারে ভেনিসের। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও পাস করেছে সংগঠনের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি। ইতালি সরকার যদি এ বিষয়ে উদ্যোগী না হয়, তবে হয়তো সত্যিই এক দিন ওই তালিকায় ঠাঁই হবে ভেনিসের।

ইতালির উত্তর-পূর্বের এই শহরটি ১১৮টি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে তৈরি। দ্বীপগুলিকে জুড়েছে শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য সেতু। ভেনিসকে এক অনন্য সাধারণ ধ্রুপদী স্থাপত্যকীর্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে ইউনেস্কোর কমিটি। শহরের জলপথে প্রমাণ মাপের জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিলে তা পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও এ বিষয়ে ইউনেস্কোর মত খুবই স্পষ্ট। শহরকে বাঁচাতে এখানে বড় সাইজের জাহাজ চলাচল এখনই বন্ধ করা উচিত বলে মনে করছেন সংগঠনের বিশেষজ্ঞরা। বন্দরশহর তথা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাওয়া ভেনিসের পরিবেশ বিপন্ন হতে পারে এমন পরিকল্পনা এড়িয়েই চলা উচিত বলে মত তাঁদের। শুধু তাই নয়, কোনও রকম পরিকল্পনা নেওয়ার আগে শহরের পরিবেশে তার প্রভাব সম্পর্কেও সমীক্ষা করা উচিত বলে মনে করে তাঁরা। শহরের পরিবেশবিদ এবং পর্যটন শিল্পে উদ্যোগীদের মধ্যে এ নিয়েই তরজা শুরু হয়েছে। তবে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটাতে এখানে যে কোনও প্রকল্পই যাতে সহজে ছাড়পত্র না পায়, তা শহর কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে বলে মত পরিবেশবিদদের। প্রাথমিক ভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গত মার্চেই শহরের জলপথে চার হাজার টন ওজনের জাহাজ চলাচলে বাধা উঠিয়েছে সরকার। এমনকী, জলপথে জাহাজের রুট বদলাতে একটি অগভীর খালের ড্রেজিংও করতে চায় সরকার। তবে এর ফলে ওই খালের নাব্যতা চার গুণ এবং তা চওড়ায় সাত গুণ বাড়বে। কিন্তু এতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। ১৯৬০ সালে এই খালেই ড্রেজিংয়ের ফলে শহরে বন্যা হয়েছিল বলে সরব হয়েছেন বহু মানুষ। পরিবেশবিজ্ঞানীদের দাবি, ওই খালে ফের ড্রেজিং করলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অন্তত ২৭ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এমনকী, এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পার্লামেন্টের ৪০ জন সেনেটরও। তবে এ বিষয়ে ইতালির সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা জানার অপেক্ষায় রয়েছেন ভেনিসবাসী।

• ক্ল্যাসিক কার

গাড়ি সংগ্রহ করাও তাঁর আর এক নেশা! তিনি জেমস হাল। তবে যে সে সংগ্রহকারী নন। নয় নয় করে তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল ৫৪৩টি গাড়ি। তা-ও আবার জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভারের ক্ল্যাসিক-সহ অন্যান্য ব্রিটিশ গাড়ি। সংখ্যার নিরিখে তিনি ব্রিটেনের অন্যতম বড় সংগ্রহকারী। পেশায় দন্তচিকিত্সক ও উদ্যোগপতি জেমস সম্প্রতি সংবাদের শিরোনামে। কারণ, ব্রিটিশ গাড়ি নির্মাতা জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার সম্প্রতি জেমসের ওই ৫৪৩টি গাড়ি কিনেছে। আর এতে জেমসের ব্যাঙ্কের খাতায় বেড়েছে আরও একশো মিলিয়ন পাউন্ড! তবে এই সংগ্রহকে ‘বাক্সবন্দি’ করে না রেখে তা জনসমক্ষে আনল জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার সংস্থা। তবে সব ক’টি নয়, ওই সংগ্রহের থেকে বাছাই করা ১৬টি ক্ল্যাসিক গাড়ি এই প্রথম প্রদর্শিত হল। গত নভেম্বরে ব্রিটেনের ওয়ারউইকশায়ারে হেরিটেজ মোটর সেন্টারে ওই ক্ল্যাসিক গাড়িগুলি দেখতে ভিড় করেছিলেন বহু উত্সাহী।

প্রদর্শিত গাড়িগুলির মধ্যে চারটি ছিল জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার ক্ল্যাসিক এবং বাকি ১২টি অন্যান্য ব্রিটিশ সংস্থার তৈরি। চারটি জাগুয়ার-ল্যান্ড রোভারের একটি হল ই-টাইপ মডেল। গত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি যে মডেলে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছিলেন গিলফোর্ডের জাগুয়ার-ডিলার কুমবেস। এ ছাড়া, ১৯৩০-এর এস এস ‘এয়ারলাইন’ সালোঁ অ্যালুমিনিয়াম বডির অ্যালভিস কনভার্টিবল এবং এম কে-২ ৩.৮ মডেল।

জাগুয়ার ছাড়াও প্রদর্শনীতে বেন্টলি আর-টাইপ কন্টিনেন্টাল, অ্যালভিস কনভার্টিবল, অ্যালার্ড পি-২ উডলি এস্টেট এবং একটি মিনি ট্র্যাভেলার মডেল রাখা হয়েছে।

• বাইবেল হাউসের সংস্কার

পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশন চত্বর ছাড়িয়ে এসপ্ল্যানেডের দিকে ফুটপাথ ধরে এগোতে থাকলে হাতের ডান দিকে চোখে পড়তে পারে বাড়িটি! এগারো শতকের পশ্চিম ইউরোপীয় ধাঁচে তৈরি বড় বড় থামওয়ালা বাড়িটির প্রবেশপথের উপরে গোটা গোটা ইংরেজি হরফে লেখা ‘বাইবেল হাউস’। চোখে পড়ার সম্ভাবনা কম, কারণ হকারের ভিড়ে প্রায় চাপা পড়েছে বাড়িটির আগাপাশতলা। তবে এ অঞ্চলে নিত্য যাতায়াতকারীদের ভুল হওয়ার কথা নয়। জওহরলাল নেহরু রোডের এই বাড়িটি এ দেশের খ্রিস্টধর্মাব‌লম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। এ দেশে বাইবেল সোসাইটি আন্দোলন শুরুই হয়েছিল বাইবেল হাউস থেকে। গত দু’শতক ধরেই দেশে বাইবেলের অনুবাদ ও প্রকাশনার কাজে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ হেন ঐতিহ্যময় বাড়িটির এ বার সংস্কারের প্রয়োজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাইবেল হাউসের জীর্ণ দশা ক্রমশ প্রকট হতে শুরু করেছে। এত দিন জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হলেও এ বার এর সম্পূর্ণ সংস্কার করা হবে। প্রকল্পের কাজে অর্থসাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে দেশের বহু চার্চ। সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে।

১৮১১ সালে বাইবেল হাউসের নির্মাণ হয়েছিল। সে বছরই ‘ক্যালকাটা অক্সিলিয়ারি বাইবেল সোসাইটি’-র স্থাপনা হয়েছিল। এর ৩৩ বছর পরে দেশে বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার স্থাপনা হয়। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বাইবেল হাউস। লন্ডনে বিশ্বের প্রথম বাইবেল হাউস নির্মাণের প্রায় সাত বছর পরে এর ভিত্তিপ্রস্তর রাখা হয়েছিল। এমনকী, গত শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্তও শ্রীলঙ্কা এবং তত্কালীন মায়ানমার কলকাতার বাইবেল হাউসের এক্তিয়ারে ছিল। ‘ক্যালকাটা অক্সিলিয়ারি’ বা বাইবেল সোসাইটি-র কলকাতা শাখার চেয়ারম্যান বিশপ অশোক বিশ্বাস সে কারণেই বলেন, “এ দেশের খ্রিস্টধর্মের আঁতুরঘর এই বাইবেল হাউস।”

বাইবেল হাউসের সংস্কার প্রকল্পের প্রধান পরামর্শদাতা কনজারভেশন আর্কিটেক্ট মণীশ চক্রবর্তী এর চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ দেখাশোনা করছেন। বাড়িটির বেশ কয়েকটি অংশের সংস্কার করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মণীশবাবু জানান, প্রথমেই বাড়িটির থামগুলি সারাই করা প্রয়োজন। এর পরে মেঝের বিভিন্ন জায়গায় কাঠের থাম এবং স্টিলের সংযোগস্থলগুলিকে সারানো হবে। বাড়িটির ছাদ ফুটো হয়ে জল চুঁইয়ে পড়ছে বহু দিন। ফলে তা সংস্কারের পরে বাড়িটির দরজা-জানালাও সারানো হবে। এ ছাড়া, বর্মা টিকের কাঠের সিঁড়িটিও পরিষ্কার করে পালিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সংস্কারের পাশাপাশি বাড়িটিতে বেশ কিছু নয়া সংযোজন হবে। অক্সিলিয়ারির এক শীর্ষকর্তা সজলকুমার সরকার জানান, বাড়ির তিন-চতুর্থাংশে ভাড়াটেরা রয়েছেন। বাকি অংশে বাইবেল সোসাইটির কাজকর্ম হয়। এই অংশের ভিতরের দিকেও সংস্কার করা হবে। দোতলায় ১৮০টি আসনবিশিষ্ট একটি আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করা হবে। এ ছাড়া, এখানে সংগ্রহালয়, লাইব্রেরি, রিডিং রুম-সহ অনুবাদকদের মিটিংয়ের জন্য একটি বিশেষ ঘরের ব্যবস্থা করা হবে। তিনতলার চারটি ঘরে অতিথিদের থাকার জন্য বন্দোবস্ত করা হবে। বাইবেল সোসাইটি-র প্রকাশিত বই ও অনূদিত বাইবেল রাখার জন্য বাড়িটির পিছন দিকে একটি অগ্নি-নির্বাপক গুদামঘর তৈরি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। শীঘ্রই এই প্রকল্পে কলকাতা পুরসভার ছাড়পত্র মিলবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন বাইবেল সোসাইটি কর্তৃপক্ষ।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ

• সারা দিনের খাদ্য-তালিকা বানায় ভোজন-রসিক শিম্পাঞ্জি

আপনি কি রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঠিক করে রাখেন সকালে উঠে ঠিক কী দিয়ে প্রাতঃরাশ সারবেন? সারা দিনের রুটিন মাফিক হাল্কা জলখাবারে দিন শুরু হবে না কি থাকবে বেশ ভারী পুষ্টিকর কিছু। যদি এমনটা হয় তা হলে আপনার আর শিম্পাঞ্জির মধ্যে কোনও তফাত্ নেই। সম্প্রতি এমনটাই যে জানিয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা। শুধু জলখাবার নয়, সারা দিনের মিল ঠিক কখন কখন হবে, কোথায় বসে হবে এবং কখন কী মেনু থাকবে সবই আগে থেকে ঠিক করে রাখে শিম্পাঞ্জিরা। দলের মহিলারাই এই কাজে সব থেকে পারদর্শী। ভোরের আলো ফোটার আগেই মাদী শিম্পাঞ্জিরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। জঙ্গলের যেখানে সবচেয়ে মিষ্টি পাকা ফল পাওয়া যায় সেগুলি তাড়াতাড়ি হাতিয়ে নিয়ে ফের বাসায় ফিরে আসে। শিকারি প্রাণিদের ঘুম ভাঙার আগেই এই কাজটি সেরে নেয় তারা। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কারলিন জানমাত জানালেন, পাকা ডুমুর খেতে খুব পছন্দ করে শিম্পাঞ্জিরা। তাই দেখা গিয়েছে অন্যান্য ডুমুর-লোভী প্রাণি বা পাখিদের জাগার আগেই তারা ডুমুরের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। এদের কয়েক জনকে তো তাড়াতাড়ি খাবার সংগ্রহের জন্য ডুমুর গাছের কাছাকাছি জায়গায় রাতে বাসা তৈরি করে থাকতেও দেখা গিয়েছে। তাই সকালে ঘুম ভেঙে দাঁত মেজে কিচিরমিচির করতে করতে পাখি এবং কাঠবিড়ালীর দল যখন পাকা ডুমুরের লোভে যাবে, দেখবে ইতিমধ্যেই শিম্পাঞ্জি পরিবার পা ছড়িয়ে বসে ফল খেয়ে ঢেকুড় তুলছে।

শুধু প্রাতঃরাশ নয়, সারা দিনের তিন বেলার খাবারের তালিকাও বানিয়ে নেয় দলের সবচেয়ে বয়স্কা ঠাকুমা শিম্পাঞ্জি। ডুমুর দিয়ে শুরু হয় দিন, শেষ হয় বড় রসালো ফল দিয়ে। তবে হ্যাঁ, দলের বাচ্চাদের জন্য পুষ্টিকর ফলের নামও ঢোকানো থাকে সেই লিস্টে। পশ্চিম আফ্রিকার ‘তাই জাতীয় উদ্যানে’ পাঁচটি পূর্ণবয়স্ক মাদী শিম্পাঞ্জি ও তাদের পরিবারের উপর নজর রেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স-এ প্রকাশিত একটি বিজ্ঞানপত্রিকায় বেশ ফলাও করে বেরিয়েওছিল সেই তথ্য। দেখা গিয়েছিল, দলের সবচেয়ে চটপটে পাঁচটি মা-শিম্পাঞ্জি তাদের ছানাদের নিয়ে সূর্য ওঠার আগেই বেরিয়ে পড়ে। সমস্ত জঙ্গল যখন নাক ডাকিয়ে ঘুমোয় চুপিসাড়ে অভ্যস্ত হাতে এই ফল-সাফাইয়ের কাজ সেরে তারা অত্যন্ত ভালমানুষের মতো মুখ করে আবার বাসায় ফিরে আসে।

• আবহাওয়ার গতি বোঝে হাতিরা

কুলোর মতো কান আর মূলোর মতো দাঁতেই কেল্লাফতে! না দাঁত এখানে তেমন ভূমিকা না নিলেও কানের গুরুত্ব অবশ্যই মানতে হবে। বড় বড় কান থাকায় অনেক সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম শব্দও শুনতে পায় হাতিরা। তা সে বিপদ সঙ্কেত হোক বা মাইলখানেক দূর থেকে ঝড়ের আওয়াজ। এমনটাই দেখলেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ সাত বছর ধরে হাতিদের সঙ্গে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করে তাদের এই ‘সিক্রেট’টা জেনে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ১৫০ মাইল (২৪১ কিলোমিটার) দূর থেকেও বাতাসের গতি এবং বৃষ্টির রিনরিন শব্দ শুনতে পায় হাতিরা। সেই মতো বৃষ্টির জলের খোঁজে দূর থেকে দূরে পাড়ি দেয় তারা। হাতিদের এই স্থানান্তর সবচেয়ে বেশি দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়ায়।

উষ্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চল নামিবিয়া। গোটা নভেম্বর মাস জুড়ে আবহাওয়া অত্যন্ত রুক্ষ্ম ও শুষ্ক থাকে। আকাশে মেঘেদের টিকিটিও দেখা যায় না। ডিসেম্বর থেকে হাওয়া তার গতি বদলাতে থাকে। মাঝমাস থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা দেখলেন, হাওয়ার গতি বুঝে হাতিরা তাদের বাসস্থান পরিবর্তন করে দলে দলে সেই জায়গার দিকেই যেতে থাকে যেখানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বহু দুর থেকে ঝড়ের আওয়াজ ঠিক টের পেয়ে যায় তারা। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী অলিভার ফ্রনফেল্ড জানিয়েছেন, দীর্ঘ সাত বছর ধরে একট দলের ন’টি হাতির উপর তাঁরা নজর রেখেছিলেন। ‘জিপিএস ট্র্যাকিং’ পদ্ধতিতে হাতিদের গতিপথে নজর রেখে বিজ্ঞানীরা দেখলেন, কোন মাসে আবহাওয়ার পরিস্থিতি কেমন থাকবে তা আগে থেকেই টের পেয়ে যায় হস্তিবাহিনী। এমনকী, হাওয়ার হঠাত্ ভোলবদলও তাদের নজর এড়ায় না। খামখেয়ালি আবহাওয়ার সঙ্গে সমতা রেখে খেয়ালি হাতিরা ঠিক তাদের পথ চিনে নেয়।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, হাতিদের এই গতিবিধি আয়ত্তে আনতে পারলে গোটা বিশ্বজুড়েই তাদের সংরক্ষণ অনেক সহজ হয়ে যাবে। চোরাশিকারিদের হামলা থেকেও তাদের রক্ষা করা সম্ভব হবে। শুধু তাদের সঙ্গে আরও বেশি করে সই পাতাতে হবে। তাহলেই হয়তো জায়গা বদলানোর সময় নিদেন পক্ষে তারা ঠিকানা লিখে একটা ছোট চিঠি ছেড়ে যাবে বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের।

• রহস্যময় নাচুনে গাছ

আজীবন কাল ধরে সে নেচে চলেছে। নাচার কোনও বিরাম নেই। নাচতে নাচতে পায়ে ব্যথা হয়ে গেলেও সে থামবে না। কারণ থামতেই তো জানে না সে। এমনই এক রহস্যময় নাচুনে গাছের সন্ধান পেলেন এক মার্কিন দম্পতি। রহস্যের কারণ এই গাছের নাম, ধাম কিছুই জানা নেই বিজ্ঞানীদের। কারও কারও মতে কোনও অজানা গ্রহ থেকে হয়তো আমদানি হয়েছে এই গাছের। আদপে কোথা থেকে এল এই গাছ? কী বা তার বৈশিষ্ট্য? বিজ্ঞানীদের কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তরে শুধুমাত্র নিজেদের অভিজ্ঞতার কথাই জানালেন ওই দম্পতি।

১৭ এপ্রিল, ২০১৩। ছুটি কাটাতে দক্ষিণ ক্যারোলিনার হিলটন হেড দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিলেন জেসন ফ্রিম্যান ও তাঁর স্ত্রী। সেখানেই এই রহস্যময় গাছের সঙ্গে তাদের পরিচয়। জেসনের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তাঁর স্ত্রী জানালেন, প্রথম দেখাতেই তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন তিনি। হোটেলের পিছনে কিছুটা জঙ্গলে ঘেরা জায়গায় অনেকটা বন্ধ ছাতার মতো দেখতে একটি ছোট গুল্মের মতো দেখতে গাছ নিজে থেকেই দুলে যাচ্ছিল। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ঠিক পেন্ডুলামের মতো এক বার ডান দিকে ও এক বার বাঁ দিকে দুলছে। জেসন পত্নী জানালেন, প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন হাওয়ায় দুলছে গাছটি। কিন্তু সন্দেহ হওয়াতে বেশ কিছু ক্ষণ গাছটিকে লক্ষ করলেন তাঁরা। দেখা গেল, যখন আশেপাশের গাছগুলির নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে, একটা পাতাও নড়ছে না কোথাও অর্থাত্ তিলমাত্র হাওয়া নেই, এমন পরিস্থিতিতেও গাছটা দুলে যাচ্ছে। আর সে দোলারও একটা অদ্ভুত ছন্দ রয়েছে। অনেকটা দুষ্টু বাচ্চার জোরে জোরে মাথা নাড়ানোর মতো কখনও খুব দ্রুত ডান দিক-বাঁ দিকে আবার কখনও ধীরে ধীরে নাচের ভঙ্গিতে যেন সুর, লয়, ছন্দ মিলিয়ে দুলে যাচ্ছে। এ বার একটা কাণ্ড করলেন জেসন পত্নী। গাছের মাথাটিকে আলতো করে ধরে রাখলেন। এখানেও টুইস্ট। যত ক্ষণ গাছটকে তিনি ধরে রেখেছিলেন ঠিক বাধ্য ছেলের মতো গাছটিও তার নড়াচড়া বন্ধ করে চুপ করেছিল। কিন্তু হাত সরানোমাত্র ফের আগের মতোই তার দোলা শুরু হয়ে গেল। ঠিক একই ছন্দে কখনও দ্রুত আবার কখনও ধীরে।

এশিয়ায় এই রকম গাছের খোঁজ আগেও পাওয়া গিয়েছিল যার নাম ডেসমোডিয়াম জিরানস বা ‘টেলিগ্রাফ প্ল্যান্ট’। এই গাছের পাতাগুলিও অবিরাম ঘুরতে থাকে। কিন্তু এই ঘূর্ণনের জন্য প্রয়োজন হয় সূর্যালোক, তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং কিছু ক্ষেত্রে কম্পন। রাতের বেলা এই ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হিলটন হেডের অজানা এই গাছের নাচ তো কখনওই থামে না। বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ বললেন চুম্বকীয় তরঙ্গ, কেই বা কাণ্ডের ভারসাম্য নিয়ে কথা তুললেন, কিন্তু ঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারলেন না কেউই। তা সে যাই হোক, নিজের রহস্য নিয়ে আজীবন কাল ধরে এই ভাবেই বেঁচে থাকুক এই নাচুনে গাছ।

পর্যটন কেন্দ্র

• পাখির স্বর্গরাজ্য সিংলিং

পশ্চিম সিকিমের ছোট্ট একটি গ্রাম সিংলিং। একে পাখিদের স্বর্গরাজ্য বলা হয়ে থাকে। ব্লু টেইলড মিনলা, চেস্টনাট-বি ইটার, রুফাস সিবিয়া, ফায়ার ব্রেস্টেড ফ্লাওয়ার পেকার, রুফাস বেলিড নিলটাভা, স্কারলেট মিনিভেটের মতো নানা জাতের পাখির দেখা মেলে এখানে।

রাজ্য রাজধানী গ্যাংটক থেকে মাত্র ৪৮ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামে সরাসরি কোনও ট্রেন বা বাস যায় না। নিউ জলপাইগুড়ি অথবা শিলিগুড়ি থেকে কোনও গাড়ি বা জিপ ভাড়া করে প্রথমে জোরথাং আসতে হবে। তার পর সেখান থেকে সোরেং হয়ে পৌঁছনো যায় সিংলিং।
পাহাড়ি ঢালের কোলে এক-আধটা ছোট বাড়ি আর চারি দিকে ঘন আর হাল্কা সবুজের সমারোহ— এই নিয়েই সিংলিং। বার্ড ওয়াচিং-এর পাশাপাশি হিলে-ভারসে ও জোংরি-গোচেতে ট্রেকিংও করা যেতে পারে। সিংলিং-এ আসার পথেই পড়ে সোরেং গ্রাম। ফুলের উপত্যকা বার্সে রডোডেনড্রন অভয়ারণ্যের অন্যতম প্রবেশদ্বার এটি। ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় ছোট্ট এই অভয়ারণ্যটি ১০৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর দক্ষিণে রয়েছে সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান এবং উত্তরে কাঞ্চনজঙ্ঘা বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ। এপ্রিল-মে মাসে রডোডেনড্রনের শোভা নজর কাড়ার মতো।

কর্নাটকে উত্তর কন্নড় জেলার পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পাদদেশে গোকর্ণ। এক দিকে খাড়া পাহাড়, অন্য দিকে আরব সাগরের নীল জল। প্রকৃতি যেন তার সবটুকু উজাড় করে গোকর্ণকে রচনা করেছে।

পানজিম, বেঙ্গালুরু, ম্যাঙ্গালোর শহর থেকে ১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাস অথবা গাড়ি করে পৌঁছনো যায় গোকর্ণ। বেঙ্গালুরু থেকে গোকর্ণের দুরত্ব ৫৮৩ কিলোমিটার। কাছের আঙ্কোলা শহর থেকে গোকর্ণের দুরত্ব ২৬ কিলোমিটার। কাছের রেল স্টেশন গোকর্ণ রোড। সেখান থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার।
প্রাকৃতিক শোভা যেমন অসাধারণ, ধর্মপ্রাণ মানুষদের কাছে গোকর্ণের মাহাত্ম্যও তেমনি অপরিসীম। পুরাণ মতে ভগবান শিবের জন্ম হয়েছিল পৃথিবী বা জগদম্বার কর্ণ বা কান থেকে। গো শব্দের এক অর্থ পৃথিবী। পৃথিবীর কর্ণ রূপে পুরাণ বর্ণিত এই গোকর্ণ স্থানটি বন্দিত।
গোকর্ণের আছে এক ধ্রুপদী সৌন্দর্য। আধুনিক আর পুরাণ-এই দুইয়ের মিলন সেতু যেন গোকর্ণ। তাই এখানকার টোল চতুষ্পটিতে নিয়মিত চলে সংস্কৃত ভাষার নিবিড় অধ্যয়ন।
শৈব ধর্মালম্বীদের কাছে কাশীর পরেই গোকর্ণের স্থান। এখানকার মহাবালেশ্বর মন্দিরটি তীর্থযাত্রী তো বটেই পর্যটকদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। শিবরাত্রিতে বড় করে উত্সব এবং মেলা বসে মন্দির প্রাঙ্গনে।
মহাদেবের মন্দির ছাড়াও একাধিক মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গোকর্ণে। দক্ষিণ ভারতীয় রীতিতে নির্মিত মন্দিরগুলির স্থাপত্যকর্মগুলিও অনন্য— মহাগণপতি মন্দির, ভদ্রকালী মন্দির, ভেঙ্কটরমন মন্দির।
বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় সৈকতও আছে গোকর্ণে। ওঁ আকৃতির ওম বিচ ছাড়াও হাফমুন এবং প্যারাডাইস বিচ দু’টিও তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অসাধারণ।

• ওড়িশার কৈলাস

ওড়িশার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন ও তীর্থক্ষেত্র কপিলাস। সমুদ্র সমতল থেকে ২২৩৯ ফুট উচ্চতায় এই পর্যটনস্থলের এখানে-ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর মন্দির। সে কারণেই মন্দিরময় কপিলাসকে ওড়িশার কৈলাস বলেও ডাকা হয়। জেলা সদর ঢেঙ্কানল থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দূরে কপিলাস স্বাস্থ্যকর জায়গাও বটে! স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, এখানের ঝর্নার জলে নানা রোগের উপশম হয়। পূর্বঘাট পর্বতমালায় ঘেরা কপিলাসের প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করার মতো। শাল, সেগুন, কেন্দু, জারুল এবং মহুয়ার বন চোখে পড়ে এখানে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, কপিলাস শিবের বাসস্থান। পাহাডের উপরে মূল মন্দিরটি রয়েছে। ১৩ শতকে গঙ্গা সাম্রাজ্যের রাজা প্রথম নরসিংহদেব নির্মাণ করেন এটি। অসাধারণ কারুকার্যময় চন্দ্রশেখরের এবং শ্রীনারায়ণের মন্দির ছাড়াও কপিলাসের অন্য দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে ডিয়ার পার্ক সায়েন্স পার্ক , সপ্তশয্যা। কপিলাস থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে অরণ্যময় পরিবেশে সপ্তঋষির তপস্যাস্থল সাত পাহাড়, গুহা এবং ঝর্না পরিবেষ্টিত এই স্থানটিও অসাধারণ। এখানে রয়েছে সপ্তর্ষী রঘুনাথ মন্দির। কথিত, এখানেই পাণ্ডবরা লুকিয়ে ছিলেন। এ ছাড়াও কপিলাসের অন্যতম আকর্ষণ গুহা। প্রচুর প্রাচীন গুহা রয়েছে এখানে।

ঢেঙ্কানল থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে জোরান্ডায় রয়েছে মহিমা ধর্মের সদর দফতর। এই ধর্মের শুরু ওড়িশাতেই। এর প্রতিষ্ঠাতা গুরু মহিমা গোঁসাইয়ের সমাধি রয়েছে এখানে। এ জন্য কপিলাস থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জোরান্ডার খ্যাতি।

• কর্নাটকের ফানুস উত্সব

পাখির মতো আকাশে ওড়ার ইচ্ছে মানুষের নতুন নয়! বিমান আবিষ্কারের আগে ফানুসে চড়েই মানুষের এই স্বপ্ন সফল হয়। ১৯০৩ সালে আমেরিকার রাইট ব্রাদার্সের হাত ধরে বিশ্বের প্রথম ছোট বিমান তৈরি হয়। কিন্তু এই ঘটনার ১২০ বছর আগেই অর্থাত্ ১৭৮৩-তে প্যারিসের মন্টগলফিয়ার ব্রাদার্সের আবিষ্কৃত ফানুসে চড়েই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন মানুষের পূরণ হয় মানুষের।

মন্টগলফিয়ার ব্রাদার্সের সেই সৃষ্টিকে জিইয়ে রাখতে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক, অ্যালাবামা, সাসেক্স, অ্যারিজোনা, ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল, মেক্সিকোর গুয়ানাজুয়াতো, ফ্রান্সের লোরেনে-সহ বিশ্বের নানা জায়গায় পালিত হয় ফানুস উত্সব।
ভারত এই উত্সব পালনে পিছিয়ে নেই। কর্নাটকের তিনটি শহর— হাম্পি, মহীশূর এবং বিদারে এই উত্সব পালন করা হয়। চার দিন ধরে চলা উত্সবে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। এই অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসকে সামনে রেখেই রাজ্যের পর্যটন প্রসারে জোর দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর আকর্ষণীয়তা বাড়াতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে এই উত্সব অনুষ্ঠিত হয়। ফানুসের সঙ্গে একটা বিশাল আকারের ঝুড়ি জুড়ে দেওয়া হয়। সেটায় করে মহীশূর, হাম্পি এবং বিদারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়। সন্ধ্যার আকাশে হাজার হাজার ফানুস একসঙ্গে ওড়ানো হয়। সন্ধের আলো-আঁধারিতে সে এক অপূর্ব দৃশ্য।

• গুয়াতেমালার ‘বার্নিং দ্য ডেভিল’

মধ্য আমেরিকার একটি দেশ গুয়াতেমালা। প্রতি বছর ৭ ডিসেম্বর ঠিক সন্ধে ৬টায় অশুভ শক্তিকে দূর করতে প্রতিকী পুতুল পোড়ানো হয় সেখানে। ভারতে যদি দশেরা বা রাবণ পোড়ানো হয়, গুয়াতেমালায় এর নাম ‘বার্নিং দ্য ডেভিল’।

এই দেশটির পুরনো নাম ছিল এল কারমেন। ১৬২৮ সালে স্পেনীয় উপনিবেশের একটি ছোট জনপদ হিসেবে গড়ে ওঠে এল কারমেন। ১৮২১ সালে এটি স্বাধীন হয়। জনশ্রুতি, স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই ‘বার্নিং দ্য ডেভিল’ উত্সব পালন করে আসছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ঘড়ির কাঁটায় সন্ধে ৬টা হলেই অগ্নিসংযোগ করা হয় অশুভ শক্তির প্রতিকী পুতুলে। ওই দিন বাড়ির সামনে রঙিন কাগজের সুন্দর লন্ঠন দিয়ে সাজান বাসিন্দারা। তবে যাঁদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই তাঁরা বাড়ির অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, আবর্জনা জড় করে তাতে অগ্নিসংযোগ করেই পালন করেন ‘বার্নিং দ্য ডেভিল’। দেশবাসীর মতে, এই উত্সবের মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে ক্রিসমাসকে আহ্বান জানানো হয়।

প্রথম দিকে অশুভ শক্তির মূর্তি তৈরিতে কাগজ ব্যবহার করা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কাগজের পরিবর্তে ব্যবহার শুরু হয় রবার ও প্লাস্টিকের। ফলে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা থেকে ২০০৮ সালে সে দেশের পরিবেশমন্ত্রক রবার ও প্লাস্টিকের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে আবার সেই কাগজের ব্যবহার শুরু এই উত্সবে। প্রায় ৩০-৪০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট কাগজের মূর্তিগুলোর গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় নানা ধরনের আতসবাজি। তার পর ঘড়ির কাঁটা দেখে শুধু আগুন লাগানোর পালা।

পরিষেবা

• দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্রেল অক্ষরের নির্দেশিকা

দৃষ্টিহীন যাত্রীদের সুবিধার্থে ব্রেইল পদ্ধতির সাহায্য নেবে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের কামরায় ব্রেইল অক্ষরের মাধ্যমে দিক নির্দেশ-সহ বিভিন্ন নম্বর লেখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে রেল। গত বছরের গোড়ার দিকে দিল্লি-পুরী সুপার ফাস্ট ট্রেন পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসে এই পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেও নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অবশেষে সে বাধা কাটতে চলেছে বলে জানিয়েছে রেল।

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে দরপত্রও ডাকা হয়। রেলের এক শীর্ষকর্তা অলোক জোহরি জানিয়েছেন, এই প্রথম দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে ব্রেইল অক্ষরে লেখা নির্দেশিকা থাকবে। ভিনাইল স্টিকার বা ধাতব প্লেটের মধ্যে আসনের নম্বর-সহ বিভিন্ন নির্দেশিকাগুলি ব্রেইল অক্ষরে খোদাই করা থাকবে। এতে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে দৃষ্টিহীনদের সুবিধা হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ।

কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ গবেষণা সংস্থা রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন-এর (আরডিএসও) সহায়তায় এই নির্দেশিকাগুলি তৈরি করবে আইসিএফ। এ কাজে দৃষ্টিহীনদের জন্য কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার পরামর্শও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।

• সবরিমালায় যেতে ১৩২টি বিশেষ ট্রেন

হায়দরাবাদ থেকে সবরিমালার জন্য ১৩২টি বিশেষ ট্রেন চালু করল দক্ষিণ-মধ্য রেল। কেরলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার জঙ্গলের মধ্যে সবরিমালা মন্দির দর্শনে সারা বছরই পুণ্যার্থীরা ভিড় করেন। সেই ভিড় সামলাতেই এই পরিষেবা চালু করা হল বলে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। গত ২১ নভেম্বরে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই বিশেষ পরিষেবার ঘোষণা করে রেল। ওই দিন রাত ৮টা থেকেই ট্রেনগুলিতে বুকিং শুরু হয়।

হায়দরাবাদ ছাড়াও বিশেষ ট্রেনগুলি নিজামাবাদ, কাকিনাড়া, নারসাপুর, বিজয়ওয়াড়া, মছলিপত্তনম, সিরপুরকাগজনগর, করিমনগর, ঔরঙ্গাবাদ, আকোলা, আদিলাবাদ থেকে কোল্লাম পর্যন্ত যাতায়াত করবে। ৫ ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এই পরিষেবা চালু থাকবে বলে জানিয়েছে রেল।

সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE