তিন বছর আগে এক প্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি পান তরুণ। সেখানেই তাঁর প্রথম চাকরি। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই অফিসের পরিবেশ ভাল লাগত না তাঁর। তরুণের দাবি, অধিকাংশ জুনিয়র সহকর্মী অফিসের কাজ ছেড়ে তাঁদের ঊর্ধ্বতনদের তোষামোদ করতেই ব্যস্ত থাকতেন। কাজ না করেও তোষামোদ করার কারণে তাঁরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাও পেতেন। কিন্তু কোনও কালেই সে সবের ধার ধারেননি তরুণ। তিনি নিজের মতো কাজ করে যেতেন। টানা দু’বছর অফিসের এমন বিষাক্ত পরিবেশে কাজ করার পর হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি।
চাকরি ছাড়বেন বলে ইস্তফাপত্রও দিয়ে বসেন তিনি। কিন্তু অফিসের কয়েক জন ঊর্ধ্বতন কর্মী তাঁকে ইস্তফাপত্র ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। বছরশেষে মূল্যায়নের সময় তাঁর বেতন ৫৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন তাঁরা। ঊর্ধ্বতনদের কথা শুনে ইস্তফাপত্র ফিরিয়ে নেন তরুণ। কিন্তু মূল্যায়নের সময় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। ঊর্ধ্বতনেরা তাঁদের প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়েছিলেন। এমনকি, তরুণ তাঁর বিয়ে এবং বাবার শেষকৃত্যের জন্য ছুটিতে ছিলেন বলে তাঁকে কটূক্তি করতেও ছাড়েননি ঊর্ধ্বতনেরা। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাই সমাজমাধ্যমে লিখে জানিয়েছেন তরুণ (যদিও তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)।
আরও পড়ুন:
‘আর/ডেভেলপর্সইন্ডিয়া’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে রেডিটের পাতায় একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেই পোস্টে নাম গোপন রেখে এক তরুণ তাঁর অফিসের তিক্ত পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছেন। তরুণ জানিয়েছেন যে, ২০২২ সালে প্রথম চাকরি শুরু করেছিলেন তিনি। প্রযুক্তি সংস্থার সেই অফিসের পরিবেশ প্রথম দিন থেকেই তরুণের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। তাঁর দাবি, অফিসের কাজকর্ম বাদ দিয়ে ঊর্ধ্বতনদের তোষামোদ করতেই অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতেন জুনিয়র সহকর্মীরা।
বছরে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা বেতন পেতেন তরুণ। তবুও অফিসের এমন পরিবেশে কাজে মন দিতে পারছিলেন না তিনি। তাই ২০২৪ সালে ইস্তফাপত্র দিয়ে ফেলেন তরুণ। তাঁর দাবি, বছরশেষে কর্মীদের মূল্যায়নের সময় নিজের সব কাজ তালিকাভুক্ত করেছিলেন তিনি। কয়েক জন ঊর্ধ্বতন তরুণের কাজের প্রশংসা করলেও এক জন ঊর্ধ্বতন তাঁর কাজের কোনও তোয়াক্কাই করেননি।
তরুণের দাবি, সেই ঊর্ধ্বতন অফিসের ‘বিশেষ’ ব্যক্তিও বটে। তাঁকে তোষামোদ করে চললেই জুনিয়র সহকর্মীরা লাভবান হন। তরুণ সেই ‘বিশেষ’ ব্যক্তিকে তোষামোদ করে চলেন না বলে তাঁর বেতনও বৃদ্ধি হয়নি। এমনটাই দাবি তরুণের। তাই রাগ করে ইস্তফাপত্র দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তরুণকে বাধা দিয়ছিলেন অন্য ঊর্ধ্বতনেরা। পরের বছর তরুণের বেতন ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণকে ইস্তফাপত্র ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন সকলে।
বেতনবৃদ্ধির আশায় আরও এক বছর অপেক্ষা করতে রাজি হয়েছিলেন তরুণ। কিন্তু তা তো মুখের কথা! ঊর্ধ্বতনেরা তরুণের সঙ্গে বেতনবৃদ্ধির বিষয়ে কোনও লিখিত চুক্তিই করেননি। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইস্তফাপত্র ফিরিয়ে নিয়ে আবার সেই অফিসেই কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন তরুণ। সেই বছর ডিসেম্বর মাসে বাগ্দান পর্ব সারেন তিনি।
আরও পড়ুন:
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে করেন তরুণ। দুর্ভাগ্যবশত বিয়ের দু’মাস পর তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যান। ব্যক্তিগত কারণে তাই অফিস থেকে সেই বছর মাঝেমাঝেই ছুটি নিতে হয়েছিল তরুণকে। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতনেরা যে তাঁকে কথা শোনাতে পারেন তা কল্পনাও করেননি তরুণ। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তরুণ লিখে জানিয়েছেন, চলতি বছরের মে মাসে অফিসে বছরশেষের মূল্যায়ন হয়েছিল। কিন্তু ঊর্ধ্বতনেরা তাঁদের প্রতিশ্রুতি রাখেননি।
তরুণের দাবি, ৫৫ শতাংশের পরিবর্তে তাঁর বেতন ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বিরক্ত হয়ে আবার ইস্তফাপত্র দেন তরুণ। তার পর সেই তরুণকে একটি মিটিংয়ে ডেকে তাঁর বস্ বলেন, ‘‘তুমি যখন বিয়ে করেছিলে তখনই তোমার চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত ছিল। তার পর তোমার বাবা মারা গেলেন। কত দিন তুমি ছুটি নিয়েছ সে সম্পর্কে তোমার কোনও ধারণা রয়েছে? তোমার এ সব কারণে ছুটি নেওয়ার জন্য কত ক্ষতি হয়েছে জানো? তোমার জন্য সময়মতো কাজ শেষ করতে পারিনি আমি।’’
আরও পড়ুন:
বসের কথা শুনে খেপে যান তরুণ। তিনি বলেন, ‘‘কী বলছেন তা এক বার ভেবে দেখুন। পরের কথাগুলোও বলার আগে ভাল করে চিন্তা করে বলবেন।’’ ঊর্ধ্বতনের এই ব্যবহারের পর তরুণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে, তিনি আর এই অফিসে চাকরি করবেন না। চলতি মাসে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন তিনি। বর্তমানে তরুণ চাকরিহারা। চাকরি পাওয়া যে সহজ নয়, তা-ও খুব ভাল করেই জানেন তিনি। তাই নেটব্যবহারকারীদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন তরুণ। তাঁর অভিজ্ঞতা শুনে নেটাগরিকদের অধিকাংশই তরুণকে সহানুভূতি জানিয়েছেন। কোনও চাকরির খোঁজ পেলে তরুণের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন সেই আশ্বাসও দিয়েছেন অনেকে।