বছর পনেরোর এক কিশোর ছাড়া বাকি দশ জনই বয়স্ক এবং তাঁদের সকলেই কমবেশি কোমর্বিডিটিতে আক্রান্ত ছিলেন। তবু চলতি মাসের শেষ ১১ দিনে পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হওয়ায় চিন্তা বাড়ছেই। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসকেরা আবার বয়স্ক ও কোমর্বিডিটিতে আক্রান্তদের বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকার কথা বলছেন।
চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা, ওমিক্রনের যে-উপপ্রজাতি এখন বঙ্গে সংক্রমণের নেপথ্যে রয়েছে, তাতে মৃদু উপসর্গে আক্রান্ত হচ্ছেন অল্পবয়সিরাও। তাঁদের থেকেই সংক্রমিত হচ্ছেন বয়স্কেরা। সেই বয়স্কদের যে-সব কোমর্বিডিটি রয়েছে, সেগুলি আরও মাথাচাড়া দিচ্ছে। সব মিলিয়ে তাঁদের অবস্থা দ্রুত সঙ্কটজনক হয়ে পড়ছে, অনেক ক্ষেত্রে ঘটছে মৃত্যু। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে হাওড়ার বাসিন্দা জহরলাল রায়ের (৬৮)। শুক্রবার সকালে ওই হাসপাতালেই দমদম ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা বিদেশ দত্ত (৭৭) করোনা-আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১। তাঁদের মধ্যে ৯০ বছরের ঊর্ধ্বে আছেন দু’জন, ৮০ বছরের বেশি চার জন, সত্তোরোর্ধ্ব দু’জন। তাঁদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ডায়াবিটিস-সহ বিভিন্ন সমস্যা মিলছে। কিশোরটি বহু দিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিল।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বয়স্ক রোগ-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, “বয়স্ক ও কোমর্বিডিটিতে আক্রান্তদের শরীরের কোনও না-কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্যদের থেকে কম। করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে আরও বেশি পরিমাণে সমস্যা তৈরি করছে।” তিনি জানাচ্ছেন, ওই সব রোগীর পূর্ববর্তী সমস্যার সঙ্গে করোনা সংক্রমণ যুক্ত হয়ে সঙ্কট বাড়াচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বঙ্গে করোনা পরীক্ষার হার কম। বেশির ভাগই পরীক্ষা করাতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে প্রকৃত চিত্র ঠিক ভাবে বোঝাও সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৪১ জন। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা দু’হাজারের ঘরে প্রবেশ করেছে। পজ়িটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার ১৩.৪৮। এ দিন হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা একশোর ঘরে প্রবেশ করেছে। হাসপাতালে ভর্তিদের অধিকাংশই বয়স্ক।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)