Advertisement
E-Paper

রাজ্য জুড়ে বন্যার বলি আরও ১৪

বেশির ভাগ জায়গায় বৃষ্টি বন্ধ হলেও ডিভিসি জল ছাড়ায় রাজ্যে এ বার বন্যা। অব্যাহত দুর্যোগের জেরে মৃত্যুও। কোথাও বজ্রপাতে, কোথাও দেওয়াল চাপা পড়ে, কোথাও জলে ডুবে শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৮
হুগলির কামারপুকুর-বদনগঞ্জ রাস্তায় প্রবল স্রোত এড়িয়ে এ ভাবেই পারাপার। রবিবার সাতবেড়ে এলাকায় মোহন দাসের তোলা ছবি।

হুগলির কামারপুকুর-বদনগঞ্জ রাস্তায় প্রবল স্রোত এড়িয়ে এ ভাবেই পারাপার। রবিবার সাতবেড়ে এলাকায় মোহন দাসের তোলা ছবি।

বেশির ভাগ জায়গায় বৃষ্টি বন্ধ হলেও ডিভিসি জল ছাড়ায় রাজ্যে এ বার বন্যা। অব্যাহত দুর্যোগের জেরে মৃত্যুও। কোথাও বজ্রপাতে, কোথাও দেওয়াল চাপা পড়ে, কোথাও জলে ডুবে শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। প্লাবিত জেলাগুলিতে সব্জি চাষ আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ধান চাষেও আর আশা দেখছেন না চাষিরা। যথারীতি সর্বত্রই ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দুর্গতদের। রামকৃষ্ণ মিশন জানিয়েছে, গত ২৬ জুলাই থেকে তারা ব্যাপক ভাবে বন্যাত্রাণে কাজ শুরু করেছে। মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া জেলায় প্রাথমিক ত্রাণকার্য চালানো হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় প্লাবিত অঞ্চলগুলিতেও ত্রাণকার্যে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

তারকেশ্বর মন্দিরে জল

সংলগ্ন রনের খাল এবং ডাকাতিয়া খাল উপচে তারকেশ্বর পুর এলাকা কার্যত পুরোটাই জলমগ্ন। জলমগ্ন তারকেশ্বর মন্দিরের চাতাল এবং সামনের রাস্তাও। শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে এখন সেখানে সব সময়েই পুণ্যার্থীদের ভিড়। জমা জলের কারণে তাঁদের দুর্ভোগ বেড়েছে। সকাল থেকে বৃষ্টি বন্ধ হলেও বন্যার জেরে এ দিন হুগলির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আরামবাগ মহকুমার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ডিভিসি-র ছাড়া জলে মহকুমার দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর এবং রূপনারায়ণ— চার নদীই বিপদসীমা ছাড়িয়ে চূড়ান্ত বিপদসীমার কাছে পৌঁছেছে। মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো শুরু করেছে প্রশাসন। শনিবার গোঘাটে জলের তোড়ে তলিয়ে যাওয়া স্কুলছাত্রের দেহ এ দিন মিললেও রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি আর এক জনের। হরিপাল, জাঙ্গিপাড়া, বলাগড়, পাণ্ডুয়া, তারকেশ্বরের মতো এলাকাগুলিরও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি।

কালনা-কাটোয়া

অজয় ও ভাগীরথীর জল বাড়তে থাকায় কালনা, কাটোয়া-সহ বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। অজয়ের জল ঢুকছে কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, আউশগ্রামের বেশ কিছু এলাকায়। বন্ধ বর্ধমান-সিউড়ি, কাটোয়া-করুই নানা রাস্তা। ভাগীরথীর জল বাড়তে থাকায় পূর্বস্থলীর ঝাউডাঙা পঞ্চায়েতের নানা গ্রাম ভেসে গিয়েছে। রবিবার ওই এলাকার কিছু গ্রামে আটকে পড়া দুর্গতদের উদ্ধারে সেনা নামানো হয়। কাটোয়ার অর্জুনডিহি গ্রামে নতুন বাড়ি পাহারা দিতে গিয়ে টিনের চাল পড়ে মৃত্যু হয়েছে দুই ভাইয়ের। কালনায় ত্রাণ শিবিরে অসুস্থ হয়ে এক মহিলা ও জলে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়। ভাতারে ও গলসির পারাজে মাটির বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান এক বৃদ্ধা ও এক বধূ। খড়ি নদী উপচে জল ঢুকে বুদবুদে কয়েকটি গ্রামও জলমগ্ন। ভেঙে পড়ে কিছু মাটির বাড়ি।

নাটমন্দিরে হাঁটুজল

নদিয়ায় ইস্কনের নাটমন্দিরের সামনে হাঁটু জল জমেছে। একটু এগিয়ে দু’ধাপ নীচে নামলেই জল একেবারে কোমর ছুঁইছুঁই। শুধু নবদ্বীপেই এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল জলের তলায় চলে গিয়েছে। দুর্যোগের জেরে শনিবার পর্যন্ত নদিয়া-মুর্শিদাবাদে জেলায় মৃতের সংখ্যা ছিল পাঁচ। রবিবার আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদে। এই জেলার সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কান্দি মহকুমা এবং বহরমপুরের সাটুইয়ের। দ্বারকা ও বাবলা নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ভাগীরথীও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাবলা নদীর জল ভাগীরথীতে না পড়ে উল্টো দিকে বইতে শুরু করেছে। তার জেরে নতুন করে বহু এলাকা জলমগ্ন। তিলপাড়া, বৈধরা ও দেওচা জলাধার থেকে দফায় দফায় জল ছাড়ায় ময়ূরাক্ষী, দ্বারকা এবং ব্রাহ্মণী নদীতে জলস্তর বেড়েছে।

নাকাল ঘাটাল

ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি রবিবারও। ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টি, চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের চারটি, চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের তিনটি ও দাসপুর-১ ব্লকের চারটি পঞ্চায়েতের লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। এ দিন জলমগ্ন এলাকা ঘুরে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘ঘাটাল মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। তবে প্রশাসন দুর্গতদের পাশে থাকার জন্য প্রস্তুত।’’ দাসপুরের কাছে শিলাবতী ও পাঁশকুড়ার কাছে রূপনারায়ণ বিপদসীমার উপরে বইছে। ডিভিসি-র জল ছাড়ার পরিমাণও কমেনি। এই পরিস্থিতিতে কয়েক দিনেও ঘাটালের পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হবে না বলেই মনে করছে জেলা প্রশাসনের একাংশ।

উদয়নারায়ণপুর

রবিবার সকালে ডিভিসি ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ে। তার জেরে উদয়নারায়ণপুরে দামোদরের বাঁধ উপচে ডিহিভুরসুট থেকে বকপোতা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাকে প্লাবিত হয়েছে। সেচ দফতরের আধিকারিকরা জানান, ডিভিসি আরও বেশি জল ছাড়লে উদয়নারায়ণপুর এবং লাগোয়া আমতা-২ ব্লকে অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতই প্লাবিত হয়ে যাবে। আমতা-১ ব্লকের রসপুর, চন্দ্রপুর, ঘোষালপুর, বসন্তপুর প্রভৃতি এলাকার জমা জল না নামায়, মানুষদের দুর্ভোগ কাটেনি।

ভাঙল বাঁধ, বাড়ি

বনগাঁ মহকুমায় ইছামতী ও যমুনার জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। রবিবার সে ভাবে বৃষ্টি না হলেও গাইঘাটা ও হাবরায় জল বাড়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গৃহহারাদের সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার বিকেলের পর থেকে বনগাঁ ব্লকেও জল বাড়ছে। বসিরহাট মহকুমায় সব নদীই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। নতুন করে আরও ৩৫টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, বাদুড়িয়া, সন্দেশখালি-সহ সুন্দরবনের কিছু বাঁধ ভেঙেছে। প্রচুর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। রবিবার সন্দেশখালিতে মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। বাবা-মাকে মাঠে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে বাজ পড়ে স্বরূপনগরের গ্রামে মৃত্যু হয়েছে আরও এক কিশোরীর। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২১৭টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত। ১৮৩টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার বাড়ি ভেঙেছে। ৩২ হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

State west bengal rain flood mamata banerjee trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy