Advertisement
E-Paper

এখনও তাড়া করে খনির জলে ৮২ ঘণ্টা আটকে থাকা

রানিগঞ্জের নিমচার বাড়িতে বসে বছর তিরাশির নন্দদুলালবাবু জানান, ১২ নভেম্বর রাতের শিফ্‌টে কাজে নেমেছিলেন শ’দুয়েক কর্মী।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০৩:৩৯
নন্দদুলাল মণ্ডল এবং মুরলী প্রসাদ। —নিজস্ব চিত্র

নন্দদুলাল মণ্ডল এবং মুরলী প্রসাদ। —নিজস্ব চিত্র

জল বয়ে যাওয়ার শব্দে এখনও চমকে ওঠেন তিনি। বাড়ি থেকে কিলোমিটার পাঁচেক দূরে দামোদর। সে দিক মাড়ান না। নামেন না পুকুরেও। জল দেখলেই প্রায় ২৯ বছর আগে ভূগর্ভে প্রায় ৮২ ঘণ্টা আটকে থাকার স্মৃতি ফিরে আসে প্রাক্তন খনিকর্মী নন্দদুলাল মণ্ডলের। তাইল্যান্ডের গুহায় কোচের সঙ্গে খুদে ফুটবলারদের আটকে পড়ার খবর তাই তিনি জানতে চান না অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কায়।

তাঁর প্রাক্তন সহকর্মী মুরলী প্রসাদ অবশ্য তাইল্যান্ডের ঘটনার খবর রেখেছেন নিয়মিত। উদ্ধারকাজের বিবরণ শুনে মনে পড়েছে নিজের অভিজ্ঞতা। ১৯৮৯ সালের ১৩ নভেম্বর রানিগঞ্জের কুনস্তরিয়া এরিয়ার মহাবীর কোলিয়ারিতে জল ঢুকে যাওয়ায় যে ৬৫ জন কর্মী আটকে পড়েছিলেন, সেই দলে ছিলেন এই দু’জন। ঘটনা বলতে গিয়ে এখনও শিউরে ওঠেন তাঁরা।

রানিগঞ্জের নিমচার বাড়িতে বসে বছর তিরাশির নন্দদুলালবাবু জানান, ১২ নভেম্বর রাতের শিফ্‌টে কাজে নেমেছিলেন শ’দুয়েক কর্মী। ভোরে যখন অনেকেই উঠে গিয়েছেন, সেই সময়ে উপর থেকে ফোনে খবর আসে, খনিতে জল ঢুকছে। ভূগর্ভে থাকা ৭১ জনকে দ্রুত উপরে উঠতে বলা হয়। নন্দদুলালবাবু জানান, তড়িঘড়ি কিছুটা যেতেই কোমর অবধি জল জমে যায়। জনা কয়েক জলের তোড়ে ভেসে যান। তিনি-সহ ন’জন একটি জায়গায় খনির দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে পড়েন।

মুরলীবাবুর মতো জনা ছাপান্ন কর্মী একটু উঁচু জায়গায় পৌঁছন, যেখানে জল ছিল না। তবে আর এগনোরও উপায় ছিল না। ফোনে খবর মেলে, জল বার করার চেষ্টা চলছে। ধৈর্য ধরতে বলা হয়। কিন্তু জল কমেনি। বছর সাতষট্টির মুরলীবাবু বলেন, ‘‘দীর্ঘ অপেক্ষায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বাঁচার আশা দেখছিলাম না।’’ প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে উপর থেকে সরু গর্ত (‌‌বোরহোল) করে ওষুধ, খাবার, পানীয় জল পৌঁছনো হয়। নন্দদুলালবাবুর কথায়, ‘‘গর্ত দিয়ে বাড়ির লোকজন কথা বলে সাহস জোগায়। জানতে পারি, পাশে বড় বোরহোল করে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। খানিক মনোবল পাই।’’

প্রায় তিন দিন অপেক্ষার পরে ইস্পাতের ক্যাপসুলে নেমে আসেন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত সিংহ গিল। মুরলীবাবু বলেন, ‘‘ক্রেনের সাহায্যে ওই ক্যাপসুলে এক-এক করে সবাইকে উপরে তোলা হয়। প্রথমে যান অসুস্থেরা। সবার শেষে গিল সাহেব।’’ ইসিএল জানায়, ৬৫ জন কর্মী উদ্ধার হন। তাঁদের ইসিএলের বাঁশরা হাসপাতালে পাঠানো হয়। নন্দদুলালবাবুর স্ত্রী মিতারানিদেবী বলেন, ‘‘হাসপাতালে থাকাকালীন ওঁর গায়ে হাত দিলেই চামড়া উঠে আসছিল। ধীরে-ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।’’

এই ঘটনার পরে ভূগর্ভস্থ খনিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মীদের অন্যত্র বদলি করা হয়। যে ক্যাপসুলটিতে উদ্ধারকাজ হয়েছিল, সেটি সংরক্ষিত রয়েছে কুনস্তরিয়া এরিয়া অফিসে।

Rescue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy