কেউ রাস্তা গড়ে দিয়েছেন। কেউ গড়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা সুলভ শৌচালয়। এমনই নানা উন্নয়নমূলক কাজে শরিক হওয়া ১০০ জন পঞ্চায়েত প্রধানের মধ্য থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে সেরা ২০ জনকে ‘আল্ট্রাটেক যশস্বী প্রধান’ হিসাবে বেছে নেওয়া হল বুধবার।
বুধবার কলকাতার হায়াত রিজেন্সি-তে ‘আল্ট্রাটেক যশস্বী প্রধান’ সম্মান-এর চূড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অবশ্য আল্ট্রাটেক সিমেন্টের উদ্যোগে রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত প্রধানদের উন্নয়নমূলক কাজকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল মাস চারেক আগেই। গোটা রাজ্য থেকে কয়েকটি জেলা বেছে নিয়ে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর, শিলিগুড়ি ও কলকাতা— এই পাঁচটি জ়োনে ভাগ করা হয়েছিল। ২৬০০টি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে প্রায় ২৫০০ জন পঞ্চায়েত প্রধান এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রাথমিক ভাবে পাঁচটি জ়োনের প্রতিটি থেকে ২০ জন করে মোট ১০০ জনকে বেছে নেওয়া হয় চূড়ান্ত পর্বের জন্য। বুধবার সেই ১০০ জনের মধ্য থেকে ২০ জন পঞ্চায়েত প্রধানকে ‘যশস্বী প্রধান’ হিসাবে বেছে নিলেন বিচারকেরা।
চূড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিচারকেরা বলছেন, ১০০ জন কৃতী পঞ্চায়েত প্রধানের মধ্য থেকে মাত্র ২০ জনকে বেছে নেওয়ার কাজটা সহজ ছিল না। এই পর্বের অন্যতম বিচারক ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের প্রাক্তন জেলা কো-অর্ডিনেটর আইএসজিসি তাপস মুখার্জি। তিনি জানান, সেরা ২০ জন প্রধানকে বেছে নিতে বিশেষ কয়েকটি মাপকাঠির উপর জোর দিয়েছিলেন তাঁরা। তাপস বলেন, ‘‘মূলত প্রাধান্য পেয়েছে কাজের গুণগত মান। এ ছাড়া নারী ও শিশু উন্নয়নের মতো সামাজিক প্রকল্পগুলিকেও মাপকাঠি হিসাবে রাখা হয়েছিল। এর পাশাপাশি গ্রামের প্রান্তিক মানুষেরা যে কাজগুলিতে বেশি উপকৃত হয়েছেন, সেগুলিও আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে।’’
বুধবারের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি এবং প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন আল্ট্রাটেক সিমেন্ট-এর উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরাও। আল্ট্রাটেক-এর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সৌরভ বলেন, ‘‘গ্রাম হল পশ্চিমবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র। গ্রাম গড়লেই দেশ এগোবে। আর গ্রাম-বাংলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে গ্রাম প্রধানদের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।’’ অন্য দিকে, সংস্থার ব্র্যান্ড বিল্ডিং বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সম্রাট সেনগুপ্তের কথায়, “আমরা বিশ্বাস করি, গ্রাম গড়বে, দেশ এগোবে। গ্রাম প্রধানেরা যেভাবে কঠোর পরিশ্রম করে গ্রাম গড়ার কাজ করছেন, তা আমাদের প্রেরণা জোগায়। আশা করব, আগামী দিনেও এ ভাবেই ওঁরা গ্রাম গড়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নেতৃত্ব দেবেন।’’
কী ভাবে গ্রামের উন্নয়নে সাহায্য করবে আল্ট্রাটেক? সংস্থার প্রেসিডেন্ট মার্কেটিং হেড অজয় ড্যাং জানান, এ বিষয়ে সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বিশেষ দল রয়েছে। গ্রাম প্রধানেরা চাইলেই যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজে এই দলকে পাশে পাবেন। যে কোনও নির্মাণকাজের আগে আল্ট্রাটেকের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই নির্দ্বিধায় গ্রামে গিয়ে মাটি পরীক্ষা থেকে শুরু করে ইঁটের গুণমান পরীক্ষা— সব কাজ করে দেবেন তাঁরা।
তবে সেরার সম্মান পেয়ে কী বলছেন ‘যশস্বী প্রধান’-রা? দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের অম্বিয়া খাতুন বিবি বলছেন, ‘‘আমি গর্বিত। আশা করি আগামী দিনে আরও ভাল কাজ করতে পারব।’’ গ্রামে বাজার চত্বর (মার্কেট কমপ্লেক্স) তৈরি করে চূড়ান্ত ২০ জনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অমৃতকুমার মণ্ডলও বলছেন একই কথা। গ্রামে হাট গড়ে দিয়েছেন তিনি। অমৃত জানান, গ্রামীণ বাজারে বহু মানুষের জয়ামেত হয়। তাই সেখানে পাকা বাজারের প্রয়োজন ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের সবার সহযোগিতায় মার্কেট কমপ্লেক্স করতে পেরেছি।পুরস্কার পেয়ে ভালো লাগছে।’’