‘কাটমানি’র বিরুদ্ধে মমতার পাল্টা স্লোগান, ‘ব্ল্যাক মানি ফিরিয়ে দাও’। ছবি: পিটিআই
বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই নাম না করে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ করেন তিনি। অসমিয়া গামছাকে মাঝেমধ্যেই উত্তরীয় হিসেবে ব্যবহার করেন দিলীপ। ‘গামছাবাবু’ বলে সম্বোধন করে উজ্জ্বলা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘উজালা (উজ্জ্বলা) বের করব? কী গামছাবাবু? উজালাটা একটু বের করি! খাপটা খুলি একটু!’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উজালা কেসে আমি চাই তদন্ত হোক। তার কারণ অনেকেই অভিযোগ করেছেন।’’
দিলীপ ঘোষ অবশ্য সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই রয়েছেন। পারলে তদন্ত করুন, দুর্নীতি প্রমাণ করে দেখান।
বিজেপি-কে আক্রমণের ফাঁকেই অল্পক্ষণের জন্য হলেও এ দিন রাজ্যের অন্য দুই বিরোধী দলের উদ্দেশেও নিজের বার্তা দিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘সিপিএম এবং কংগ্রেসকে বলব, যে ডালে বসে আছ, সেই ডালটাকে না কেটে, বিজেপির বিরোধিতা কর।’’ বলেন মমতা। তিনি বলেন, সিপিএম বা কংগ্রেসের ভোট বা সমর্থন তাঁর প্রয়োজন নেই, কিন্তু বিজেপি-কে সাহায্য করা ওই দুই দলের উচিত নয়। মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি একটা পরগাছা এখানে। নিজের কোনও ক্ষমতা নেই, কিচ্ছু নেই। কখনও সিপিএমের কানে কানে উঁকি মারে, কখনও কংগ্রেসের কানে কানে উঁকি মারে, আর তিনটে দল একসঙ্গে কাজ করে।’’
আরও পড়ুন: সঙ্কট বাড়ছে কুমারস্বামীর! আস্থা ভোটে যাবেন না, ফের জানালেন ‘বিদ্রোহী’ বিধায়করা
একুশের সমাবেশে যোগ দিতে কলকাতায় আসার পথে বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের বাধা দেওয়া হয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে, বাস আটকেছে।’’ যেখানে যেখানে তৃণমূল কর্মীদের আটকানো হয়েছে, সেখানে সেখানে সোমবার প্রতিবাদ মিছিল হবে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন। তবে বাধা দিয়েও যে লাভ হয়নি, সে কথা এ দিন বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। এ বারের সমাবেশকে দেখে ব্রিগেড সমাবেশ বলে মনে হচ্ছে— এই রকম মন্তব্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি সভামঞ্চে আসার সময়ে দেখেছেন যে, রেড রোডে ২-৩ লক্ষ লোক দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ময়দানে বসেও অনেকে ভাষণ শুনছেন বলে তিনি দাবি করেন।
টলিউড থেকে বেশ কিছু তারকার বিজেপি-তে যোগদান প্রসঙ্গেও এ দিন বিজেপি-কে কটাক্ষ করেন মমতা। একই লোককে বার বার যোগদান করানো হচ্ছে, দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুকে একাধিক বার বিজেপি-তে যোগদান করানো হয়েছে বলে মন্তব্য করে মমতা বলেন, ‘‘একই লোককে নিয়ে বার বার যোগদান করাচ্ছে। লজ্জা নেই! তোর যদি লোক না থাকে, তা হলে আমার থেকে ধার নে না! আমি দিয়ে দিচ্ছি এক-দু’টো।’’
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই এ দিন আরও কয়েক জন টলি তারকা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে তাঁরা এ দিন বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম রিমঝিম মিত্র। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে রিমঝিম বলেন, বাংলা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনডাস্ট্রিতে কারও কারও ‘একচ্ছত্র আধিপত্য’ চলছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন এবং তাঁকে কোণঠাসা করা হচ্ছে বলেও রিমঝিম এ দিন মন্তব্য করেন।
কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘অটলজির সরকারও দেখেছি, আর এখনও দেখছি। আজকে যা ইচ্ছে বিল নিয়ে আসা হচ্ছে,দেখতে দেওয়া হচ্ছে না, মধ্যরাতে বিল নিয়ে আসা হচ্ছে, সকালে পাস করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ কী বিল পাস হচ্ছে, কারও জানা নেই— অভিযোগ তৃণমূল চেয়ারপার্সনের।