Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নৈহাটিতে মহিলা খুনে গ্রেফতার ২

পিন্টু নাথ ও জয়দেব মণ্ডল

পিন্টু নাথ ও জয়দেব মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা 
 নৈহাটি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৯
Share: Save:

রাতের খাবার দিতে এসে দেখা গেল, মহিলার রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে ঘরে। অথচ, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, মৃত্যু হয়েছিল, অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে। তা হলে দিনের খাবার দিতে এসেছিল কে? সেই খাবার আদৌ এসেছিল কি? না এলে কেন আসেনি? এলসে দিনে খাবার দিতে কেউ এলেও তখন দেহ পড়ে থাকতে দেখেও কি সে পুরো ব্যাপারটা চেপে গিয়েছিল?

এই প্রশ্ন সামনে রেখেই নৈহাটির মহিলা খুনে তদন্ত এগিয়েছিল। শেষমেশ ধরা পড়ল দুই যুবক। ধৃতদের নাম জয়দেব মণ্ডল এবং পিন্টু নাথ ওরফে বাবলু। পুলিশের দাবি, জেরায় জয়দেব স্বীকার করেছে, কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পালপাড়ার বাসিন্দা ইন্দিরা মিত্রকে খুন করেছে সে-ই। এক সময়ে ইন্দিরার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। জয়দেবই ইন্দিরাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পুলিশ ডেকে গল্প ফেঁদেছিল। কিন্তু জেরার মুখে সেই গল্প বেশিক্ষণ টেকেনি।

জয়দেব পালপাড়ার পাশের ব্যানার্জিপাড়ার বাসিন্দা। ১৯৯৯ সালে একটি রাজনৈতিক খুনে নাম জড়িয়েছিল তার। গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দিন জেলে ছিল। পরে জামিন পায়।

পুলিশের দাবি, জয়দেব স্বীকার করেছে, ঝামেলার জেরে সে ইট দিয়ে ইন্দিরার মাথায় আঘাত করে। পরে শ্বাসরোধ করে খুন করে। জনা চারেক বন্ধু তাকে সাহায্য করেছিল। হালিশহরের বাসিন্দা পিন্টু তাদেরই এক জন। পুলিশ বাকি তিন জনকে খুঁজছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দিরার বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়েছে অনেক দিন আগে। শরিকি বাড়ির নিজের অংশের একটি ঘরে একলা থাকতেন ইন্দিরা। সামনের একটি দোকান ঘর দীর্ঘ দিন ধরে ভাড়া নিয়েছিল জয়দেব। সাউন্ড বক্সের দোকান দিয়েছিল। তার সঙ্গে চুক্তি ছিল, ঘরভাড়ার বিনিময়ে ইন্দিরার দু’বেলার খাবার সে দিয়ে যাবে।

তার অনেক আগে জয়দেবের সঙ্গে ইন্দিরার সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে সে সম্পর্ক বিগড়ে যায়। জয়দেব বিয়ে করে। ইন্দিরা আর বিয়ে করেননি। পুলিশের ধারণা, বিয়ের পরেও দু’জনের সম্পর্ক থেকে গিয়েছিল। জয়দেব ঘর ছাড়েনি। ইন্দিরার খাবার আসত জয়দেবের বাড়ি থেকেই। পুলিশ জানতে পেরেছে, দোকানঘরে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মাঝে মধ্যেই মদের আসর বসাত জয়দেব। এই নিয়ে আগেও জয়দেবের সঙ্গে ইন্দিরার অশান্তি হয়েছিল। বুধবার মদের আসরকে কেন্দ্র করে দু’জনের গোলমাল হয়। তারপরেই ইন্দিরাকে খুনের পরিকল্পনা করে জয়দেব। আসর থেকে বন্ধুদের নিয়ে চড়াও হয় ইন্দিরার উপরে। জয়দেব ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করতেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান ইন্দিরা। পরে সকলে মিলে মুখে বালিশ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে খুন করে পালিয়ে যায়।

বাড়িতে আর কেউ না থাকায় বৃহস্পতিবার কেউ ইন্দিরার খোঁজ করেনি। সে দিন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ জয়দেব নৈহাটি থানায় ফোন করে জানায়, খাবার দিতে এসে ইন্দিরাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছে।

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে পুলিশ জানতে পারে, ইন্দিরার মৃত্যু হয়েছে বুধবার রাতে। তদন্তে জানা যায়, একমাত্র জয়দেবই ইন্দিরার ঘর নিয়মিত যেত। তাকে আটক করা হয়। জেরায় সে প্রথমে জানায়, বুধবার দুপুরের খাবার এক জনকে দিয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তার প্রমাণ দিতে পারেনি। এক সময়ে জেরায়

ভেঙে পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Arrest Naihati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE