Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Girl child

আপাতত ‘হোম’ পেল আবর্জনা থেকে লড়াইয়ে ফেরা ছোট্ট জীবন

গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভোরে বৃষ্টির মধ্যে ব্যারাকপুর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পানপাড়া এলাকার একটি বাড়ির সামনের ভ্যাটে শিশুটি পড়ে ছিল। ছিল। টহলদার পুলিশকে সেই খবর দিয়েছিলেন স্থানীয় এক জন।

একরত্তি: চিকিৎসকের কোলে এশা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

একরত্তি: চিকিৎসকের কোলে এশা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪৩
Share: Save:

দু’সপ্তাহ আগের এক ভোরে রাতভর বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় ভ্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক সদ্যোজাত কন্যা। স্বাভাবিকের থেকে কম ওজন, জ্বর, জন্ডিস-সহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা পার করা সেই শিশুকন্যার বৃহস্পতিবার ঠাঁই হয়েছে রাজারহাটের একটি সরকারি হোমে। তার নামকরণও হয়েছে এ দিন। বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালের এসএনসিইউ ও পুলিশ প্রশাসন শিশুটির নাম রাখল এশা।

এশাকে হোম থেকে নিতে এসেছিলেন রূপা মান্ডি নামে এক আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘‘হোমে প্রথম দিন এশা ঠিক আছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং খাবার খেয়েছে। প্রথম তিন মাস ওর জন্মদাত্রী এবং পরিবারের অন্যদের খোঁজ করা হবে। যদি খোঁজ না মেলে, তখন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি পদক্ষেপ করবে। সে ক্ষেত্রে এশাকে দত্তক দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হবে।’’ ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক সৌরভ বারিক বলেন, ‘‘আরবি শব্দে এর অর্থ জীবন। জন্মে ফের নতুন জীবন পেল শিশুটি। তাই এই নাম। ওর পরিবারের খোঁজ চলছে।’’

পুলিশ জানায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভোরে বৃষ্টির মধ্যে ব্যারাকপুর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পানপাড়া এলাকার একটি বাড়ির সামনের ভ্যাটে শিশুটি পড়ে ছিল। টহলদার পুলিশকে সেই খবর দিয়েছিলেন স্থানীয় এক জন। পুলিশ যখন ভ্যাট থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে, তখন কাছাকাছি কয়েকটি কুকুর শিশুটিকে পাহারা দেওয়ার মতো ভঙ্গিমায় ঘিরে ছিল। পুলিশকর্মীরা দেরি না করে শিশুটিকে নিয়ে পৌনে দু’কিলোমিটার দূরের ব্যারাকপুরের বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছন।

সেখানকার জরুরি বিভাগে সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন টিটাগড় থানার ‘নাইট পেট্রোলিং’-এর এক অফিসার। রক্ত আর আবর্জনা তখনও লেগে ভেজা শরীরে। হৃৎস্পন্দন জোরে চলছে। কান্না ছিল না। জরুরি বিভাগের তরুণ চিকিৎসক পুলিশ অফিসারকে বলেছিলেন, ‘‘দ্রুত একে এসএনসিইউ-এ (সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট) পাঠাতে হবে। পরে কাগজপত্র লেখালেখি...।’’ সে দিনের কথা মনে করে এসএনসিইউ-এর প্রধান চিকিৎসক অর্পিতা দত্ত বলেন, ‘‘নাড়িটা এমন ভাবে ছেঁড়া হয়েছিল যে, রক্ত গড়াচ্ছিল। ভ্যাটে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল সম্ভবত। শরীরের বাঁ দিকে তাই কেটে-ছড়ে যাওয়ার ক্ষত ছিল। একটা সুতোও গায়ে ছিল না। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসেছিল। কতটা নিষ্ঠুর হলে কেউ এমনটা করতে পারেন!’’

এশাকে হোমে পাঠানোয় মনখারাপ হাসপাতালের এসএনসিইউ-এর নার্স ও চিকিৎসকদের। গত ১৫ দিন ধরে প্রথমে তাকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা চলেছিল। শিশুটি একটু সুস্থ হতে দিনরাত তাকে কোলে নিয়েই সময় কেটেছে ওই বিভাগের সকলের। এমনকি, ভর্তি থাকা অন্য শিশুদের মায়েরা পালা করে বুকের দুধ খাইয়েছেন তাকে। শরীরের তাপ দিয়ে তাকে চাঙ্গা করতে কেএমসি (ক্যাঙারু মাদার কেয়ার) দিয়েছেন নার্সরা।

নতুন ঘরে যাওয়ার আগে শিশুটিকে পুজোর জামা, খেলনা এবং তার যত্নের যাবতীয় জিনিসও তাঁরা চাঁদা তুলে কিনে দিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, চিকিৎসায় দ্রুত সাড়া দিয়েছিল এশা, সুস্থ হওয়ার পরে তাকে রাজারহাটের একটি সরকারি হোমে পাঠানো হল। আপাতত সেখানেই সে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Girl child vat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE