E-Paper

কর্কট রোগে বোনের মৃত্যু, খবর পেয়েও দেহ নিল না পরিবার

স্থানীয় সূত্রের খবর, খড়দহ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রহড়া পূর্বাচলে নিজেদের বাড়িতেই দাদা-বৌদির সঙ্গে থাকতেন সায়ন্তী দাস নামের তরুণী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫ ০৯:৪০
সায়ন্তী দাস।

সায়ন্তী দাস। ছবি: সংগৃহীত।

কর্কট রোগে (ক্যানসার) আক্রান্ত হয়ে বোনের মৃত্যু হয়েছে। তা জানার পরেও দাদা-বৌদির বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠল। এর জেরে প্রায় ছ’ঘণ্টা বাড়ির বাইরে পড়ে থাকল বছর ৩৪-এর তরুণীর মৃতদেহ। শেষে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় বন্ধু ও সহকর্মীরা ওই তরুণীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। বুধবার খড়দহের ঘটনা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, খড়দহ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রহড়া পূর্বাচলে নিজেদের বাড়িতেই দাদা-বৌদির সঙ্গে থাকতেন সায়ন্তী দাস নামের ওই তরুণী। তিনি স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের গ্রন্থাগারিক পদে ছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরেই কর্কট রোগে আক্রান্ত ওইতরুণীর চিকিৎসা চলছিল। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, সম্পত্তি নিয়ে দাদার সঙ্গে বিবাদও চলছিল সায়ন্তীর। প্রায়ই তাঁদের মধ্যে ওই বিষয়ে অশান্তি লেগে থাকত। অন্য দিকে, বিবাহিত দিদির সঙ্গেও ওই তরুণীর সম্পর্ক খুব একটা ভাল ছিল না বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর।

জানা যাচ্ছে, পারিবারিক অশান্তির হাত থেকে বাঁচতে মাস কয়েক আগে খড়দহের বাসিন্দা রিনা ওঝা নামে এক বন্ধুর বাড়িতে চলে যান সায়ন্তী। সেখানে থেকেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। সম্প্রতি শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সায়ন্তীকে। সেখান থেকে রিনার বাড়িতেই ফিরেছিলেন ওই তরুণী। দিন কয়েক আগে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন সায়ন্তী। বুধবার বিকেলে বন্ধুর বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়। রিনার দাবি, ‘‘ওঁর দাদা শান্তনু দাসকে অসুস্থতার খবর জানালেও তিনি কোনও সহযোগিতা করেননি, কখনও দেখতেও আসেননি। সায়ন্তী মারা যাওয়ার পরেও আমরা ওঁর দাদাকে খবর দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আসেননি।’’

সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বন্ধুরা ওই তরুণীর দেহ নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় তাঁদের বাড়ির সামনে পৌঁছন। কিন্তু তত ক্ষণে বাড়িতে তালাঝুলিয়ে শান্তনু ও তাঁর স্ত্রী অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন বলেই অভিযোগ করছেন সায়ন্তীর বন্ধুরা। তাঁদের কথায়, ‘‘বোনের মৃত্যুর খবর পেয়েই ওঁরা কোথাও চলে গিয়েছিলেন বলেই মনে হচ্ছে।’’ প্রায় ছ’ঘণ্টা দেহ নিয়ে বন্ধ বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করেন বলেও জানাচ্ছেন রিনা এবং ওই তরুণীর অন্য বন্ধুরা।

প্রতিবেশীরা জানান, পারিবারিক অশান্তি থেকে বাঁচতে মাস কয়েক ধরে বাড়ি ছেড়ে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে থাকছিলেন সায়ন্তী। অত্যন্ত মিশুকে স্বভাবের ছিলেন ওই তরুণী। পড়শি প্রশান্ত দাসের কথায়, ‘‘বোনের মৃত্যুর খবর পেয়েও দাদা-বৌদিবাড়ির দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন! এটা খুবই অমানবিক ঘটনা।’’ শেষে পুলিশের সহযোগিতায় সায়ন্তীর দেহ পানিহাটি শ্মশানে নিয়ে গিয়ে তাঁর বন্ধুরাই সৎকার করেন। ব্যারাকপুরের উপ-নগরপাল (মধ্য)ইন্দ্রবদন ঝা বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। তরুণীর বন্ধুরা জানিয়েছেন, ওঁর শেষ ইচ্ছা মতো দেহটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তরুণীর পরিজনেরা দেহ নিতে অস্বীকার করেন। এর পরে নিয়ম মেনে পুলিশের মধ্যস্থতায় শেষকৃত্য করা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Case khardah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy