অচলাবস্থা: এই স্কুলেই আপাতত থমকে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র।
তিন বছর ধরে কোনও শিক্ষক নেই স্কুলে। শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে স্কুল। ছাত্রছাত্রীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে অন্য স্কুলে। দোতলা স্কুলভবন পড়ে রয়েছে তালা বন্ধ অবস্থায়। এমনই পরিস্থিতি রায়দিঘির বয়ারগদি দুঃখের পোল জুনিয়র হাইস্কুলের।
১৯৬৯ সালে কৌতলা পঞ্চায়েতের বয়ারগদি গ্রামের এই জুনিয়র হাইস্কুলটি সরকারি অনুমোদন পায়। প্রায় এক বিঘা জমিতে মাটির দেওয়াল ও খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরে চালু হয় স্কুলটি। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন হত স্কুলে। পরে দোতলা ভবন নির্মাণ হয়। শ্রেণিকক্ষ, অফিসঘর, শৌচালয়, মিড ডে মিলের রান্নাঘর সবই রয়েছে। রয়েছে স্কুলের জন্য আলাদা পানীয় জলের নলকূপ, খেলার ছোট মাঠও। ২০০৫ সালে মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে সরকারি অনুমোদন মেলে।
কিন্তু শিক্ষকের অভাবে নবম-দশম শ্রেণির পঠন-পাঠন চালু করা যায়নি। ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩ জন শিক্ষক ও প্রায় ১৭০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলত। ২০১৭ সালে একজন শিক্ষক অবসর নেন। আরও একজন শিক্ষক কলেজে চাকরি পেয়ে চলে যান। ফলে একজন শিক্ষকই স্কুলটির দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে তিনিও অবসর নেন। তারপর থেকে স্কুলে আর কোনও শিক্ষক নেই। সে সময়ে স্কুলে ৩০-৪০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। বাধ্য হয়ে অন্য স্কুলে চলে যায় তারা। তিন বছর ধরে কার্যত বন্ধ হয়েই পড়ে রয়েছে স্কুলটি।
বয়ারগদি ছাড়াও দুঃখের পোল, বকুলতলা, হাতিপাড়া ও উত্তর দক্ষিণ ও মাঝেরপাড়া এলাকার পড়ুয়ারা স্কুলে পড়ত। বাড়ির কাছেই স্কুল থাকতে, ছেলেমেয়েদের দূরের স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা।
বয়ারগদি গ্রামের বাসিন্দা সন্ন্যাসী হালদার বলেন, “স্কুল বন্ধ হওয়ার মুখে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আমরা আন্দোলনের নেমেছিলাম। সে সময়ে প্রশাসন আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। বর্তমানে স্কুলটি তালা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। ছেলেমেয়েদের দূরের স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। বাড়তি খরচ হচ্ছে। অনেক গরিব পরিবারই এই খরচ জোগাতে পারছে না। ফলে স্কুলছুট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবিলম্বে স্কুলটিতে শিক্ষক নিয়োগ করে চালু করা দরকার।”
এক সময়ে স্কুল সম্পাদকের পদ সামলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামাপ্রসাদ সাউ। তিনি বলেন, “আমি প্রায় ১০ বছর ধরে সম্পাদক পদে ছিলাম। শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিভাগীয় দফতরে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে বহু আবেদন-নিবেদন করেছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে স্কুলটি প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার কচিকাঁচারা।” তিনি জানান, আমপান-ইয়াসের জেরে স্কুল ভবনের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সংস্কারের জন্য প্রায় লক্ষাধিক টাকা অনুমোদন হয়। প্রশাসন থেকে সারিয়েও দিয়ে যায়। তবে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ হয়নি।
ডায়মন্ড হারবার মহকুমার অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শক ব্রজেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “স্কুলটির বিষয়ে জেলা স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নতুন করে শিক্ষক পাঠালে আবার স্কুলটি চালু করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy