নিজের অর্জিত আসল শংসাপত্র হাতে নেই। ফলে, ট্রাম্প-জমানায় আমেরিকা থেকে বিতাড়িত হওয়ার আতঙ্ক নিয়ে দিন-রাত কাটাচ্ছেন এক গবেষক। বারাসতের পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ২০২২ সালে পিএইচ ডি করার পরে বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। কিন্তু ওই গবেষক এখনও হাতে পাননি তাঁর অর্জিত আসল শংসাপত্রটি।
ওই গবেষক এখন আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানে বৈধ ভিসায় পোস্ট-ডক্টরাল স্কলার হিসাবে রয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকার যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে গেলে প্রার্থীকে তাঁর আগের যোগ্যতার আসল শংসাপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু ওই গবেষক ২০২২-এ পিএইচ ডি শেষ করলেও আজও আসল শংসাপত্র পাননি। আমেরিকার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময়ে রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের লেটারহেডে ‘প্রভিশনাল সার্টিফিকেট’ দিয়েছিলেন। আমেরিকার ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেটি গ্রহণও করেছিল। তবে শর্ত ছিল, কিছু দিনের মধ্যেই আসল শংসাপত্র জমা দিতে হবে।
ওই গবেষক বলেন, ‘‘বার বার বিশ্ববিদ্যালয়, রাজভবন, উচ্চশিক্ষা দফতর, এমনকি ইউজিসি-তে জানিয়েও পিএইচ ডি-র আসল সার্টিফিকেট আজও পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়কে সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে ইউজিসি। কিন্তু, তার পরেও কিছু হয়নি।’’
উল্লেখ্য, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া যে সব বিদেশি এখন আমেরিকায় আছেন, তাঁদের খুঁজে বার করতে আমেরিকা জুড়ে হানা দিচ্ছে মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইস)। ইতিমধ্যেই অন্য দেশের পাশাপাশি বেশ কিছু ভারতীয়কে হাতকড়া পরিয়ে, শেকলে বেঁধে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই গবেষক বলেন, ‘‘জানি না, আমার কী হবে! ইতিমধ্যেই আমাদের মতো ছাত্র এবং গবেষকদের এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এত দিন ধরে আর্জি জানিয়েও অরিজিনাল সার্টিফিকেট হাতে পেলাম না।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, সমাবর্তনে এই শংসাপত্র দেওয়া হয়। অথচ, ২০২১ সালের পরে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হয়নি। গত বছরের এপ্রিলে উদ্যোগ দেখা গেলেও রাজভবন থেকে তা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যুক্তি দেখানো হয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনের জন্য সমাবর্তন স্থগিত রাখা হোক। পরে আর সমাবর্তন হয়নি।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। গত জুনে তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় ওই গবেষককে তাঁর আসল শংসাপত্র দিতে উদ্যোগী হয়। কর্মসমিতির বিশেষ বৈঠক করে শংসাপত্র দেওয়ার বিষয়টি রাজভবনে এবং উচ্চশিক্ষা দফতরে অনুমতির জন্য পাঠানোও হয়।
অন্তর্বর্তী উপাচার্য বলেন, ‘‘রাজভবন থেকে জানানো হয়, নিয়মমাফিক যা করতে হবে, তা করা হোক। উচ্চশিক্ষা দফতর গত ডিসেম্বরে জানায়, নতুন স্থায়ী উপাচার্য ইতিমধ্যে বাছাই হয়েছেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে যা করার করবেন।’’ সৌরেন আরও জানান, এখনও পর্যন্ত নতুন স্থায়ী উপাচার্য দায়িত্ব বুঝে নেননি। ফলে, বিষয়টি আর এগোয়নি। তিনি বলেন, ‘‘শেষ চেষ্টা করছি, যদি ডিজি লকারে শংসাপত্রটি আপলোড করা যায়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)