নামটা মনে থাকলেও পদবিটা এখন আর মনে পড়ে না। বিধাননগর স্টেশনের পাশে বাড়ি ছিল, এটুকু বলতে পারলেও ঠিকানাটা বলতে পারেন না বছর তেইশের তরুণ। গত চোদ্দো বছর বাংলাদেশের জেলে কাটানোর পরে মুক্তির আনন্দে যখন বাড়ির পথ ধরেছিলেন, সে সময়ে ফের সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়ায় থানায় যেতে হয়েছে আশিসকে। এমনটাই পুলিশ ও বিএসএফ জওয়ানদের কাছে দাবি করেছেন তিনি।
কেন ভিনদেশে জেলবন্দি ছিলেন? কী ভাবেই বা বাড়ি ফিরতে গিয়ে বিএসএফের হাতে ধরা পড়তে হল?
সে এক দীর্ঘ কাহিনী। আশিসের দাবি, তাঁর বাড়ি বিধাননগর স্টেশনের পাশে। বাড়ির কাছে ভূতনাথের মন্দির ছিল। বাবা অমরেশ প্ল্যাটফর্মে ফল বিক্রি করতেন। তখন আশিসের সবে ক্লাস টু। এত বছর পরে পুরনো ঘটনা তেমন মনে পড়ে না।
তবে ধরা পড়ার ঘটনাটা এখনও আবছা মনে আছে।
আশিসের কথায়, ‘‘একবার মাস্টারমশাইদের সঙ্গে বনগাঁ সীমান্তে চড়ুইভাতি করতে গিয়েছিলাম। সে সময়ে ঘুরতে ঘুরতে সীমান্ত-লাগোয়া এলাকায় চলে যাই। দেখা হয়ে যায় এক বিডিআরের (অধুনা বিজিবি)।’’ আশিস জানান, ওই জওয়ানের সঙ্গে সাথে বলতে বলতে বাংলাদেশের দিকে চলে যান তিনি। ওইটুকু শিশুর পক্ষে দেশের সীমানা বোঝার কথাও নয়।
ইতিমধ্যে ওই জওয়ান চলে যান। পরিবর্তে সেখানে আসেন অন্য এক জওয়ান। তিনি নিজের দেশের বাচ্চা মনে করে ছোট্ট আশিসকে নিয়ে যান থানায়। সেখান শেষমেশ ঠাঁই হয় হোমে। পরে যশোরের জেলে চোদ্দো বছর কাটানোর পরে সম্প্রতি ছাড়া পান তিনি। আশিসের কথায়, ‘‘আমাকে সীমান্তের কাছে ছেড়ে দিয়ে বিজিবি বলল, যা, ফিরে যা তোর দেশে।’’
এ দিক ও দিক ঘুরতে ঘুরতে তারপরে বৃহস্পতিবার রাতে অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বসিরহাটের ঘোজাডাঙায় ঢুকে পড়েন তিনি। ধরা পড়ে যান বিএসএফের ১৪৪ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানদের হাতে। আশিসের কথা শুনে জওয়ানেরা থানায় লিখিত ভাবে সে সব কথা জানাতে বলেন। শুক্রবার আশিসকে আনা হয় থানায়। তাঁর এ সব দাবি সত্যি, নাকি ধরা পড়ার পরে মনগড়া গল্প বানাতে চাইছেন ওই যুবক, তা এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ।