Advertisement
০৬ মে ২০২৪

‘টাকার জন্য শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে সোনালিকে’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে সামিন ও সোনালির পরিচয় হয়। তাঁরা একই জায়গায় নাচ শিখতেন। তাঁরা পালিয়ে বিয়ে করেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবরা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৬
Share: Save:

পণের দাবিতে মৃত্যু হচ্ছে একের পর এক তরুণীর। মামলা রুজু হচ্ছে রোজই। পুলিশ তদন্তও করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পণের দাবিতে বধূ নির্যাতনের ঘটনা কমছে না। ফের তার প্রমাণ মিলল রবিবার দুপুরে হাবরার নকপুল ঘোলার মাঠ এলাকার সোনালি শেখ (২১) নামে এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায়।

সোনালির পরিবারের অভিযোগ, পণের দাবিতে সোনালীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যাচার করত। এই কারণেই তাঁকে খুন করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার বাবা আক্রাম শেখের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতেই ওই তরুণীর স্বামী সামিন সর্দার ও শ্বশুর সুকচানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুনের মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে সামিন ও সোনালির পরিচয় হয়। তাঁরা একই জায়গায় নাচ শিখতেন। তাঁরা পালিয়ে বিয়ে করেন। পরে বাড়ির লোক তাঁদের দু’জনকে ফিরিয়ে এনে রেজিষ্ট্রি করান। কিন্তু সে সময় দেনা পাওনা নিয়ে কোনও কথা হয়নি বলে জানায় সোনালির পরিবার। অভিযোগ, প্রথম দিকে সব ঠিকঠাক থাকলেও বিয়ের কিছুদিন পর থেকে বাপের বাড়ি থেকে পণের টাকা নিয়ে আসার জন্য সোনালির উপর চাপ দিত শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

পুলিশ জানিয়েছে, যেহেতু সে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল বাপের বাড়ির লোকজন তাকে প্রাথমিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল, তাঁরা সোনালীকে কোনও কিছু দিতে পারবে না। ফলে সোনালিও বাপের বাড়িতে টাকার কথা বলতে চাইতেন না। কিন্তু বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে না আসাতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য সোনালি বাপের বাড়িতে টাকার জন্য অত্যাচারের কথা জানিয়েছেন বলে দাবি পুলিশের।

সোনালির দাদা বাবলু শেখ জানান, বাবা প্রতিবন্ধী। কাজকর্ম করতে পারেন না। বাবলু সেলাই কারখানায় কাজ করেন। আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তাঁর কথায়, ‘‘বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি মতো কয়েকবার টাকা দিয়েছি। কিন্তু ওরা মোটা টাকা দাবি করত। তা না দিতে পারায় মদ খেয়ে এসে সামিন বোনকে মারধর করত।’’

সোনালির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ সামিন ফোন করে সোনালীর বাবাকে। আক্রাম বলেন, ‘‘ফোনে জামাই বলে আপনার মেয়ে মারা গিয়েছে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে আক্রাম যেতে পারেননি। তিনি বাবলুকে পাঠান। বাবলু পুলিশকে জানান, সোনালিকে বারান্দার মেঝেতে মৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। বাবলু যেতেই সামিন বলে, সোনালি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ বাবলু। তাঁর প্রশ্ন, সোনালি যদি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যাই করে, তা হলে তাঁকে নামানো হল কেন? নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না কেন? সোনালির পরিবারের দাবি, তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।

মৃতার বাপের বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ ময়না-তদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠায়। প্রথামিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, সোনালির গলায় ফাঁসের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে তা বলা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dowry Housewife Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE