ফেটে পড়ল জনরোষ...। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।
সামনের সারিতে মেয়ে, মা। পিছনে বাবা, পাড়ার কাকারা। সম্মিলিত লড়াইয়ের শেষে এখন খুশির হাওয়া দেগঙ্গার গ্রামে।
মদের ভাটির বিরুদ্ধে এঁদের সকলের লড়াই ক্রমশ আরও মানুষকে সাহস জোগাচ্ছে।
বছর খানেক আগের ঘটনা। মদ্যপান করে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরে এলাকার মানুষের বিক্ষোভের জেরে মদের ভাটির মালিককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জামিনে ছাড়া পেয়েই উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থানার মামুরাবাদ গ্রামে ফের মদ বিক্রি শুরু করেছিল সেই ভাটি মালিক। যার সূত্র ধরে রাতবিরেতে বহিরাগত সমাজবিরোধীদের আনাগোনায় অতিষ্ঠ ছিলেন গ্রামবাসীরা। এর প্রতিবাদ করেছিলেন কিছু যুবক। অভিযোগ যার জেরে তাঁদের খুনের হুমকি দেয় ভাটি মালিক। পুলিশকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি। অবশেষে বুধবার রাতে লাঠি, ঝাঁটা হাতে মদের ভাটি ভেঙে আগুন ধরিয়ে দিলেন এলাকার মহিলারা। পাশে ছিলেন গ্রামের শতাধিক পুরুষও। বেশ কিছু বোতল, মদ ফেলে আগুন দিয়ে নষ্ট করা হয়। পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে কয়েকশো দেশি-বিদেশি মদের পেটি। প্রভাত ঘোষ নামে ওই মদ বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই পুলিশ ও কিছু সমাজ বিরোধীর সাহায্যে নিজের বাড়িতে মদ বিক্রি করছিল প্রভাত ঘোষ। বছরখানেক আগে মাইলো কর্মকার নামে এক কাঠ মিস্ত্রির দেহ মেলে গ্রামের পুকুরে। মদ্যপ অবস্থায় তিনি পুকুরে পড়ে মারা গিয়েছেন, এই অভিযোগ তুলে প্রভাত ঘোষের ভাটিতে হামলা চালান গ্রামবাসীরা। বাড়ি সংলগ্ন আনারসের বাগান থেকে উদ্ধার হয় কয়েশো লিটার চোলাই মদ-ভর্তি ব্যারেল। সে বারও গ্রেফতার হয় প্রভাত।
কিন্তু মাসখানেক আগে ছাড়া পেয়ে ফের ব্যবসায় নেমে পড়ে সে। বৃহস্পতিবার গ্রামের বাসিন্দা মাফুরা বিবি বলেন, ‘‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাতলামি চলছে। মুখে অকথ্য গালিগালাজ। গ্রামের মেয়েরা ঘরের বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছিলেন না। পুরুষেরা প্রতিবাদ করলে খুন করার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।’’ সুফিয়া বিবি নামে এক প্রতিবাদী বলেন, ‘‘কেউ বাধা দিলেই বহিরাগত গুন্ডাদের দিয়ে ভয় দেখাত প্রভাত। ওরা যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াত।’’
তা হলে কী ভাবে সংগঠতি হল বুধবারের প্রতিবাদ?
স্থানীয় মানুষজন জানালেন, বুধবার সন্ধ্যায় অপরিচিত এক ব্যক্তি মদ কিনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে দিতে গ্রামের পথ ধরেই ফিরছিল। প্রতিবাদ করলে সে কয়েক জনের উপরে চড়াও হয়। সহ্য করতে না পেরে এর পরেই মহিলারা ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। মহিলাদের সামনেই প্রভাত ঘোষের নাম করে হুমকি দিতে থাকে সেই ব্যক্তি। এতেই আগুনে ঘি পড়ে। খেপে ওঠেন মহিলারা।
ঘর থেকে যে যা হাতের কাছে পেয়েছেন, তা নিয়ে ওই রাতেই প্রভাতের বাড়ির সামনে জড়ো হতে থাকেন মহিলারা। মেয়েদের রুদ্র মূর্তি দেখে সাহস পায় পুরুষেরাও। তাঁরাও এগিয়ে আসেন। ঘিরে ফেলা হয় বাড়ি। ঘরের মধ্যে উদ্ধার হয় পেটি-পেটি মদের বোতল, গাঁজা। তা দেখে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মহিলারা। অভিযুক্তের বাড়ির সামনে একে একে বোতল ভেঙে মাটিতে মদ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে দেগঙ্গা থানার পুলিশ আসে।
সাবানা বিবি নামে এক প্রতিবাদীর কথায়, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। তাই আমরা মেয়েরাই একত্রিত হয়েছি। সন্ধ্যা হলে ছেলেমেয়েকে পড়াতে নিয়ে যেতে পারতাম না। কত দিন এ সব মুখ বুজে সহ্য করা যায়? গ্রামে আর এ সব হতে দেবো না।’’
আর কী বলছেন সাবানাদের স্বামীরা?
মেহেবুর গুলজার, ইসমাইল মণ্ডল, মহম্মদ আমিরুল হোসেনের মতো গ্রামের পুরুষ সদস্যদের কথায়, ‘‘সত্যিই আমরা বন্দুকের ভয়ে পিছিয়ে গিয়েছিলাম। যে ভাবে গ্রামের মেয়ে-বৌরা এগিয়ে এল, তাতে আমরাও পাশে না থেকে পারলাম না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy