এখানেই শান্তিতে ছুটির ক’দিন কাটাতে চান পর্যটকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
কুলতলিতে পর্যটকদের উপরে দুষ্কৃতী হামলা নিয়ে যখন সারা রাজ্য তোলপাড়, তখন দেখে নেওয়া যাক, উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটনকেন্দ্র পারমাদনের নিরাপত্তার হাল।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতেই হোক, কিংবা সবুজে ঘেরা পরিবেশে বনভোজন, সারা বছর ধরেই বহু মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে বাগদা ব্লকের পারমাদনের বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যে।
কিন্তু ওই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কার্যত কিছু চোখে পড়ে না। সম্পূর্ণ ভাগ্যের হাতে নিজেদের সুরক্ষার দিকটা ছেড়ে দিতে হয় পর্যটকদের। চোখের সামনে দেখা যেতে পারে মদ্যপ যুবকদের অশালীন আচরণ। কিংবা বাইক নিয়ে বেপরোয়া দাপাদাপি। অভয়ারণ্যে ঢোকার আগের রাস্তায় নানা পুজো, কীর্তন, অনুষ্ঠানের জন্য গাড়ি থামিয়ে চাঁদা তোলা হয় পর্যটকদের কাছ থেকে। চাঁদা শিকারিদের সঙ্গে পর্যটকদের ঝামেলাও বাধে মাঝে মধ্যে। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ এক প্রকার বাধ্য হয়েই টাকা দিতে বাধ্য হন। এলাকার মানুষের অভিযোগ, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কিছু লজে রমরমিয়ে চলছে দেহব্যবসা। এলাকার পরিবেশ ও খারাপ হচ্ছে। বাগদা থানার পুলিশের উপস্থিতি প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে।
শীতের মরসুমে যখন প্রচণ্ড ভিড় হয়, তখন মাঝে মধ্যে পুলিশের গাড়ি দেখা যায়। নিয়মিত পুলিশি টহল দেখা যায় না। এখানে আসা মানুষের বক্তব্য, পারমাদনকে কেন্দ্র করে এত মানুষ আসছেন, সরকার আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছে। তা হলে কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হবে না? স্থায়ী পুলিশ চৌকি বা ফাঁড়ি তৈরির দাবিও করেছেন তাঁরা।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগে মদ্যপ অচৈতন্য এক মহিলাকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। অভিযোগ, পুলিশের একাংশের মদতেই এখানে দেহব্যবসার রমরমা কারবার। আর সেই সব লোকজনের সঙ্গে পুলিশের গোপন আতাঁতও আছে বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ।
পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করে জানানো হয়েছে, নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। এলাকায়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পারমাদনে পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত পুলিশি টহল থাকে। ভিড়ের সময় আরও বেশি পুলিশ মোতায়ন করা হয়।’’ যদিও পারমাদনে আসা মানুষের অভিজ্ঞতা অন্য কথাই বলে।
কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নামাঙ্কিত ওই অভয়ারণ্যটি তৈরি হয়েছে ৯৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে। তার মধ্যে ৬৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে আছে ডিয়ার পার্ক।
পারমাদনে কয়েকবার যাওয়া বনগাঁর এক স্কুল শিক্ষকের কথায়, ‘‘একা যাওয়ার পক্ষে পারমাদন অভয়ারণ্য ভাল। কিন্তু বাড়ির বৌ-বাচ্চাদের নিয়ে যেতে সাহস হয় না। কারণ মদ্যপদের বাড়বাড়ন্ত এখানে খুবই বেশি। চোখের সামনে মহিলাদের কটূক্তি করতে দেখেও চুপ করে থাকতে হয়। কারণ আশপাশে পুলিশ দেখা যায় না।’’
বন দফতরের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা আছে, তা দিয়ে বড় কোনও গোলমাল ঠেকানো সম্ভব নয়। কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশকে তাঁরা ফোন করেন। পুলিশ আসতে আসতে অবশ্য দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। উত্তরবঙ্গের মতো এখানে বন দফতরের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা তেমন জোরদার নয়। রক্ষীদের হাতে লাঠি বা বন্দুক কিছুই থাকে না।
গোটা অভয়ারণ্যটি ফেন্সিংয়ে মোড়া। মূল অভয়ারণ্যের মধ্যে অবশ্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফেন্সিংয়ের পাশ দিয়ে প্রেমিকার হাত ধরে পাখপাখালির ডাক শুনে ঘুরতে ঘুরতে কটূক্তি কানে এলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বারাসতের প্রবীর সামন্তের কথায়, ‘‘আমি শীতকালে পারমাদানে গিয়ে খুবই বিপদে পড়েছিলাম। বান্ধবী সঙ্গে ছিল। কিন্তু এলাকার ছেলেছোকরারা খুবই বিরক্ত করছিল। বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে বাধ্য হই।’’
অভয়ারণ্যের ভিতরে মদ্যপান করার কথা নয়। কিন্তু চোরাগোপ্তা বসে মদের ঠেক। পর্যটকদের নিজেদের মধ্যেও ছোটখাট মারপিট মাঝে মধ্যে ঘটে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন।
জেলা বনাধিকারিক নিতাই সাহা বলেন, ‘‘রাজ্যের কোনও অভয়ারণ্যে যে রকম নিরাপত্তা থাকা উচিত, আমাদের এখানে সে রকমই আছে।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, কোনও বড় ঘটনা কখনও ঘটেনি এখানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy