Advertisement
০৪ মে ২০২৪

দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু, পুলিশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির নালিশ, রণক্ষেত্র অশোকনগর

ট্রাকের ধাক্কায় বাইকচালক এক যুবকের মৃত্যুর জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল অশোকনগরের শুড়িয়া ঈশ্বরীগাছা ও কামারপুর এলাকা।  

তৎপর: গোলমাল ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাস। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

তৎপর: গোলমাল ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাস। ছবি: সুজিত দুয়ারি।

সীমান্ত মৈত্র
অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

ট্রাকের ধাক্কায় বাইকচালক এক যুবকের মৃত্যুর জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল অশোকনগরের শুড়িয়া ঈশ্বরীগাছা ও কামারপুর এলাকা।

পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। পুলিশকে লাঠি ও কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাতে হয়। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। উত্তেজিত জনতা পুলিশের দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করে। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একটি বাসেও ভাঙচুর চলে। ইটের ঘায়ে কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জন হামলাকারীকে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি থামিয়ে টাকা তুলছে পুলিশ। যান চালকেরা পুলিশকে এড়াতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। এই জন্যই বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ, পুলিশকে জানিয়েও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ফলে ক্ষোভটা দীর্ঘ দিন ধরে জমছিল বাসিন্দাদের মধ্যে। মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় এক বাইক চালক যুবকের মৃত্যুর ঘটনার পর সেই ক্ষোভই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ দিনও পুলিশ রাস্তায় তোলা আদায় করছিল। ট্রাকের চালক পুলিশকে এড়াতেই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি বাইকে ধাক্কা মারে। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সাইফুদ্দিন মণ্ডল (৩২) নামের ওই যুবকের। তাঁর বাড়ি কামারপুর এলাকায়। তিনি একটি মাংস বিক্রির দোকানে কাজ করতেন। এ দিন সকালে বাইকে কর্মস্থল আওয়ালসিদ্ধির দিকে যাচ্ছিলেন। শুড়িয়া এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

দুর্ঘটনার পরে উত্তজিত মানুষ হাবড়া-নৈহাটি রাজ্য সড়কের তিনটি জায়গায় অবরোধ শুরু করেন। শুড়িয়া কামারপুর ও ঈশ্বরীগাছা এলাকায় জলের পাইপ, গাছের গুঁড়ি, গার্ডরেল ফেলে অবরোধ চলতে থাকে। শুড়িয়ায় দেহ রাস্তায় ফেলে অবরোধ হয়।

বাসিন্দারা দাবি, ঘটনার পরপরই পুলিশ গিয়ে ট্রাকটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। অথচ দেহ পুলিশ উদ্ধার করেনি। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করে। একই সঙ্গে ভাঙচুর করা হয় একটি যাত্রিবাহী বাস। পুলিশ ফিরে আসে। রাজ্যসড়কে গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে আসা সাংবাদিকদের আটকে রাখা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অবশ্য ছাড় দিয়েছিল অবরোধকারীরা। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ অশোকনগর ছাড়াও হাবড়া, গোপালনগর, গাইঘাটা, গোবরডাঙা, আমডাঙা, বারাসত ও দত্তপুকুর থানা থেকে পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশ শুড়িয়া ও ঈশ্বরীগাছা এলাকায় অবরোধ তুলতে গেলে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে অবরোধ তোলে। দেহ উদ্ধার করে বারাসত জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

পরে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুর। তিনি কামারপুরে গিয়ে অবরোধকারীকে আশ্বাস দেন, তোলা আদায়ের অভিযোগের তদন্ত করা হবে। এর পরে কামারপুর থেকে অবরোধ তোলে জনতা। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সাহানুর জামান গাজি, সহর আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘বহু দিন ধরে হাবড়া-নৈহাটি সড়কে পুলিশ গাড়ি আটকে তোলা তুলছে। এর ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।’’ এ দিকে, ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাইফুদ্দিনের বাবা ফজর আলি। সাইফুদ্দিনের পাঁচ বছরের সন্তান রয়েছে। ফজর বলেন, ‘‘পুলিশের তোলাবাজির জন্যই ছেলেকে হারালাম। সংসারটা ভেসে গেল। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, সংসারটা বাঁচান। দোষী পুলিশদের শাস্তি দিন।’’

গত নভেম্বরেও পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে দু’টি ট্রাকের মধ্যে ধাক্কা লেগেছিল বলে অভিযোগ। দু’জন জখম হন। তখনও রাজবেড়িয়া মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মানুষজন। তখনও পুলিশকর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন। অভিযোগ, তারপরেও সমস্যা মেটাতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident Money Extortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE