Advertisement
০৬ মে ২০২৪

এইচআইভি আক্রান্ত যুবতীকে মারধরের নালিশ

এইচআইভি আক্রান্ত যুবতীকে মারধরের অভিযোগ উঠল তাঁর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। হাসনাবাদ থানার পাটলিখানপুর পঞ্চায়েতের বেনা গ্রামের এই ঘটনায় আহত যুবতীকে টাকি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নির্মল বসু ও অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
হাসনাবাদ ও বারাসত শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৬ ০২:০২
Share: Save:

এইচআইভি আক্রান্ত যুবতীকে মারধরের অভিযোগ উঠল তাঁর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। হাসনাবাদ থানার পাটলিখানপুর পঞ্চায়েতের বেনা গ্রামের এই ঘটনায় আহত যুবতীকে টাকি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আত্মীয়দের অবশ্য দাবি, যুবতী তাঁর অসুস্থ মাকে গালিগালাজ, মারধর করছিলেন। মায়ের সঙ্গে হাতাহাতিও হয়। তাঁকে কেউ অপমান করেনি, মারধরও করা হয়নি।

ওই যুবতীর বাবা মারা গিয়েছেন। মা মানসিক ভারসাম্যহীন। দাদা ভাল করে চোখে দেখে না। ভাই থাকে ভিনরাজ্যে। হতদরিদ্র পরিবার। যুবতীর দাবি, মাস আটেক আগে তাঁর অসুস্থতা ধরা পড়ার কথা জানাজানি হয়। আত্মীয়েরা সুযোগ পেলেই অপমান করতেন। ২৯ জুলাই মারধরও করেন।

সোমবার রাতে হাসনাবাদ থানায় পুলিশ বারাসাত হাসপাতালে গিয়ে ওই যুবতীর কাছ থেকে অভিযোগ নেয়। এই ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থার কথা জানান জেলার পুলিশ সুপার ভাষ্কর মুখোপাধ্যায়। বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়েটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয়েছে। আঘাত তেমন গুরুতর না হওয়ায় ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতাশের যুবতী পাঁচ বছর আগে পাচার হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল মুম্বইয়ের একটি যৌনপল্লিতে। সেখানে দু’বছর কাটানোর পরে পুলিশের সহযোগিতায় বাড়ি ফেরেন তিনি। পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েক মাস রক্ত পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি এইচআইভি পজেটিভ।

বারাসতের এইচআইভি সংগঠনের কর্ণধার সমীর বিশ্বাস জানান, যুবতীর আত্মীয়রা জমি-জায়গা নিয়ে তাঁকে মারধর করেছিল। সেই খবর পেয়ে ৩০ জুলাই গ্রামে গিয়ে চিকিৎসার জন্য তাঁকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর দাবি, রোগ জানাজানির পরে মেয়েটিকে নানা ভাবে টিপ্পনি কাটা হতো। এ বার মারধরও করা হল।

ওই তরুণী ও তাঁর দাদা বলেন, ‘‘সম্পত্তি নিয়ে আত্মীয়েরা নানা ভাবে হেনস্থা করে। রোগের কথা জানার পর থেকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করা হতো। এ বার মারধরও করা হল।’’

মঙ্গলবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে হাজির পঞ্চায়েত প্রধান রেহেনা বিবি ও তাঁর স্বামী ছাত্তার মণ্ডল। বেনা গ্রামের সদস্য তথা হাতুড়ে চিকিৎসক আব্দুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে এইচআইভি ছোঁয়াচে নয়, সে কথা বোঝাচ্ছেন সকলকে।

যুবতীর এক কাকা বলেন, ‘‘অসুস্থ মাকে প্রায়ই মারধর করে মেয়ে। ঘটনার দিন মা-মেয়েতে মারামারির সময়ে বাড়ির মহিলারা তাদের ছাড়াতে যায়। মেয়ে মায়ের গলা টিপে ধরেছে দেখে দু’টো চড় দিয়ে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর বেশি কিছু হয়নি।’’ তাঁর দাবি, এইচআইভি আক্রান্ত বলে মেয়েটিকে কোনও ভাবে অপমান করা হয়নি।

আব্দুর রহিম, ছাত্তার মণ্ডলরা বলেন, ‘‘এইচআইভি ধরা পড়ার পরে আত্মীয়দের মধ্যে কেউ কেউ মেয়েটিকে এড়িয়ে চলত। আমরা প্রচার করি, এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। এখন তেমন কেউ এ সব নিয়ে ভাবে না।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘মা-মেয়ের গণ্ডগোল থামাতে মহিলাদের মধ্যে কেউ মারধরে জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে অসুস্থকে মারধর করা অন্যায়। এমনটা না হলেই ভাল হতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

HIV allegation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE