Advertisement
E-Paper

পুলিশ পেটানোর নালিশ, তবু অধরাই ছিল বিশ্বনাথ

কাকদ্বীপ থানায় কয়েক বছর আগে পর্যন্ত গুন্ডা, তোলাবাজ হিসেবে ছবি টাঙানো থাকত বিশ্বনাথ পাত্রের। পরবর্তী সময়ে যিনি তৃণমূলের টিকিটে জিতে কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছেন!

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০২:১৮
এই পার্টি অফিসেই থাকতেন বিশ্বনাথ (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র।

এই পার্টি অফিসেই থাকতেন বিশ্বনাথ (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র।

কাকদ্বীপ থানায় কয়েক বছর আগে পর্যন্ত গুন্ডা, তোলাবাজ হিসেবে ছবি টাঙানো থাকত বিশ্বনাথ পাত্রের। পরবর্তী সময়ে যিনি তৃণমূলের টিকিটে জিতে কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছেন!

তৃণমূল নেতা হিসাবে এলাকায় প্রভাব-প্রতিপত্তির জন্যই সিপিএম কর্মী নরোত্তম মণ্ডলকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় নাম জড়ানোর পরেও বিশ্বনাথ এখন গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারছে বলে সমালোচনা চলছে বিরোধী শিবিরে। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, তৃণমূলের নেতা হিসাবেই কলার উঁচিয়ে ঘোরার সাহস পেতেন বিশ্বনাথ। দিন দিন তাঁর প্রতাপ বেড়েই চলেছিল।

এলাকায় কান পাতলে শোনা যায় বিশ্বনাথের নানা কীর্তিকলাপের কথা। গত বছর তখন সাগরমেলা চলছে। তৃণমূলের বাপুজি অঞ্চল কার্যালয়ে ৮ জন সিপিএম কর্মীকে তুলে আনা হয়েছিল। যাতে নাম জড়ায় বিশ্বনাথ পাত্র ও তাঁর দলবলের। খবর পেয়ে কাকদ্বীপ থানায় পুলিশ গিয়েছিল ছাড়াতে। অভিযোগ, দলবল নিয়ে বিশ্বনাথ চড়াও হয় পুলিশের উপরেই। তবে ওই ঘটনাতেও পুলিশ তাঁর টিকিও ছুঁতে পারেনি। আগেই আদালত থেকে জামিন নিয়ে নেন বিশ্বনাথ। ২০১১ সালের আগেও একাধিক গোলমালে নাম জড়িয়েছিল বিশ্বনাথের। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও সাগরমেলা চলাকালীন ওই ঘটনা ছাড়া আরও কিছু অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। যার মধ্যে খুনের চেষ্টার অভিযোগও ছিল। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই অধরা থেকে গিয়েছেন কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির এই তৃণমূল সদস্য।

১৩ নম্বর বাজারে তৃণমূলের বাপুজি আঞ্চলিক অফিসকে দীর্ঘদিন ধরেই নিজের বাড়িঘর বানিয়ে ফেলেছিলেন বিশ্বনাথ। সেখানেই একটি ঘরে থাকতেন। বিরোধী দলের লোকজনকে ওই পার্টি অফিসে তুলে এনে মারধর, তোলা আদায়ের ঘটনায় সামনের সারিতে থেকেছেন বিশ্বনাথ, বিরোধীদের অভিযোগ এমনটাই। নরোত্তমের স্ত্রী প্রমীলাদেবীও সেই অভিযোগই করেছিলেন। তবে অধিকাংশ ঘটনাই পুলিশের কাছে গিয়ে বলার সাহস করেননি ভুক্তভোগীরা, এমনও দাবি স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের।

শুক্রবার এলাকায় গিয়ে বিশ্বনাথের খোঁজ মেলেনি বলাইবাহুল্য। পার্টি অফিসেও তালা ঝুলতে দেখা গেল। এলাকা সুনসান। স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার পর থেকে ওই পার্টি অফিস মাড়াচ্ছেন না অন্য নেতারাও।

২০০৮ সালের আগে পর্যন্ত সিপিআই করতেন বিশ্বনাথ। পরে আসেন তৃণমূলে। ডাকাবুকো নেতা হিসাবে দ্রুত জাঁকিয়ে বসেন দলের অন্দরে। ২০১৩ সালে ভোটেও জেতেন।

স্থানীয় পুরনো তৃণমূল নেতাদের একাংশের সঙ্গে বনিবনা ছিল না বিশ্বনাথের। শুরু থেকে দলের সঙ্গে থাকা পুরনো কিছু তৃণমূল কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বিশ্বনাথের দাদাগিরিতে অতিষ্ঠ বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী ২০১১ সালের পর থেকে হয় বসে গিয়েছেন, না হলে দলবদল করে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বলে দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে।

‘বসে গিয়েছেন’, এমন এক স্থানীয় তৃণমূল নেতা ফোনে বললেন, ‘‘তোলাবাজির অভিযোগ বার বার উঠেছে বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে। সালিশির নামে সাধারণ মানুষের পারিবারিক বিষয়ে ঢুকে তাদের নানা ভাবে হেনস্থা করার কথাও কানে আসত। বিষয়টি আমাদের মতো অনেকের পছন্দ হয়নি বলেই সরে এসেছি।’’

একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে পুরনো কর্মীদের দলে আরও সক্রিয় ভাবে ফেরানোর বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু দলে যত দিন বিশ্বনাথের মতো নেতারা ছড়ি ঘোরাবেন, তত দিন কী তাঁরা ফিরবেন, প্রশ্নটা ঘুরছে স্থানীয় তৃণমূলের অন্দরেই।

তবে কাকদ্বীপের তৃণমূল নেতা তথা এলাকার মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা এই ঘটনার পরে বিশ্বনাথের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। তিনি আগেই দাবি করেন, ‘‘টাকা তোলার অভিযোগ নেই ওঁর (বিশ্বনাথ) বিরুদ্ধে। কিছু নেতার নাম মিথ্যা ভাবে খুনের ঘটনায় জড়ান হয়েছে।’’ তবে আইন আইনের পথে চলবে বলেও একই সঙ্গে মন্তব্য করেন তিনি। আর পুলিশ জানিয়েছে, খোঁজ চলছে মূল অভিযুক্ত বিশ্বনাথ-সহ বাকিদের।

কবে ধরা পড়বেন এলাকার ত্রাস বিশ্বনাথ, আদৌ ধরা পড়বেন তো— প্রশ্নগুলো অতএব থেকেই যাচ্ছে।

এ দিনই ফোনে ধরা গেল বাপুজির অঞ্চল সভাপতি তথা ঘটনায় দ্বিতীয় অভিযুক্ত সুভাষ গুড়িয়াকে। মেদিনীপুর থেকে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে যে টাকা তোলা-সহ অন্যান্য অভিযোগ উঠছে, তার কিছুটা তো সত্যি অবশ্যই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অনেক বিষয়েই আমার সঙ্গে ওর বনিবনা হচ্ছিল না। ও খুবই দাপুটে।’’

কিন্তু খুনের ঘটনায় তো নাম জড়িয়েছে আপনারাও। এ ব্যাপারে সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘ঘটনার দিন আমি ডাক্তার দেখাতে নামখানা গিয়েছিলাম। সেটা এলাকার মানুষ জানেন। বর্তমানে মেদিনীপুরে রয়েছি। নিজের ফোনও বন্ধ করিনি। ’’

বিশ্বনাথের মোবাইল ফোন অবশ্য এ দিন বন্ধ ছিল।

miscreant allegation Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy