Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চাঁদার জুলুম

হাবড়া ও দেগঙ্গা থানা এলাকার মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে রাস্তা দু’টি। চাঁদার বিল হাতে রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকছে ৮-১০ জন যুবক। ট্রাক, ম্যাটাডর বা ছোট গাড়ি আসতে দেখলেই হাত দেখিয়ে থামানো হচ্ছে। না থামলে বিপদ।

চাঁদা-শিকারি: গোপালনগর-নহাাটা সড়কে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

চাঁদা-শিকারি: গোপালনগর-নহাাটা সড়কে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

 সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

সমস্যাটা ফি বছরের। পুলিশ জানায়, খোঁজ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কালীপুজো এলেই পুরনো চালকেরা জানেন, হাবড়া-মগরা বা গৌড়বঙ্গ সড়কে চাঁদা শিকারিদের খপ্পরে পড়তেই হবে।

হাবড়া ও দেগঙ্গা থানা এলাকার মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে রাস্তা দু’টি। চাঁদার বিল হাতে রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকছে ৮-১০ জন যুবক। ট্রাক, ম্যাটাডর বা ছোট গাড়ি আসতে দেখলেই হাত দেখিয়ে থামানো হচ্ছে। না থামলে বিপদ। দৌড়ে গিয়েও পথ আটকানো হচ্ছে গাড়ির। চলছে গালিগালাজ। টাকা না দিলে নিস্তার নেই। চাঁদার পরিমাণ নিয়েও চলছে কথা কাটাকাটি। হাতে দশ-বিশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে পথ পাওয়া যাবে না। পঞ্চাশ টাকার কমে রেহাই নেই। যতক্ষণ না টাকা মিলছে, রাস্তার ধারে নিয়ে গিয়ে গাড়ি আটকে রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার সকালে গৌড়বঙ্গ সড়ক ধরে যাওয়ার পথে অন্তত ছ’টি জায়গায় জোর করে গাড়ি আটকে চাঁদা তোলার দৃশ্য চোখে পড়ল। বুধোরহাটি মোড়, কুমড়া, কাশীপুর, বনবিবিতলা, বিজয়নগর, সুবর্ণপুর এলাকায় চাঁদা তোলা হচ্ছে।

প্রতি বছরই কালীপুজোর আগে এই রাস্তায় জোর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েক জন চাঁদা শিকারিকে গ্রেফতারও করে। তারপরেও বছরের পর বছর বন্ধ হয় না রাস্তা জোড়া চাঁদার জুলুম।

অতীতে চাঁদা শিকারিদের হাতে লাঠিসোঁটাও দেখা যেত। এ বার সে দৃশ্য অবশ্য চোখে পড়ল না। চালকদের মারধরের অভিযোগ এ মরসুমে এখনও পর্যন্ত শোনা যায়নি। তবে পরিস্থিতি কোন সময়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, তা নিয়ে ভরসা কিছুই নেই। দেখা গেল, চাঁদা আদায়কারীরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। চট করে দেখে বোঝার উপায় নেই। হঠাৎই গাড়ির সামনে চলে আসছে চাঁদা আদায়কারীরা। পালানোর পথ পাচ্ছেন না চালক। এ রাস্তায় পরিচিত চালকেরা অনেকে গতি বাড়িয়ে গাড়ি চালান বছরের এই সময়ে। কিন্তু তাতেও অনেক সময়ে একই রাস্তার একাধিক জায়গায় চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

পুলিশ কোথায়? টহলদার ভ্যান চোখে পড়ছে না এমন নয়। পুলিশের গতিবিধি বুঝতে দু’একজন যুবক কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকছে। দূর থেকে পুলিশের গাড়ি আসতে দেখলে ফোন করে দলের অন্যদের সতর্ক করছে তারাই। হাবড়া-বসিরহাট সড়কে পেয়ারাতলা ও মছলন্দপুর এলাকাতেও গাড়ি আটকে চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। গোপালনগর থানার গোপালনগর-নহাটা সড়কেও চলছে জুলুম। বাদ নেই যশোর রোড।

সমস্যা এড়াতে যান চালকেরা অবশ্য সরাসরি থানায় অভিযোগ জানাতে চাইছেন না। কেন? তাঁদের বক্তব্য, সারা বছরই তো ওই সব সড়ক দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এখন অভিযোগ জানিয়ে রেহাই পেলেও পরে যদি গোলমালে জড়িয়ে পড়তে হয়, সেই ভয় আছে।

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, চাঁদা তোলা বন্ধ করতে অভিযান শুরু হয়েছে। ধরপাকড়ও চলছে। সেই সঙ্গে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে চলছে চাঁদার জুলুমও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Forceful Fund Raising Kali Puja Habra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE