Advertisement
E-Paper

শিক্ষককে মারধর, শিক্ষিকাকে কটূক্তি

শিক্ষিকাদের দিকে জগ ছুড়ে এক সময়ে ‘নাম’ কুড়িয়েছিলেন তৃণমূল নেতা তথা ভাঙড় কলেজের তৎকালীন পরিচালন সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলাম। এ বার স্কুল চত্বরেই শিক্ষকদের মারধর, বোতল ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের আর এক নেতার বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৬
মনোরঞ্জনবাবুকে দেখতে এসেছেন এবিটিএ-র সদস্যেরা। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

মনোরঞ্জনবাবুকে দেখতে এসেছেন এবিটিএ-র সদস্যেরা। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

শিক্ষিকাদের দিকে জগ ছুড়ে এক সময়ে ‘নাম’ কুড়িয়েছিলেন তৃণমূল নেতা তথা ভাঙড় কলেজের তৎকালীন পরিচালন সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলাম। এ বার স্কুল চত্বরেই শিক্ষকদের মারধর, বোতল ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের আর এক নেতার বিরুদ্ধে। শিক্ষিকাদের অশ্লীল মন্তব্য করারও অভিযোগ উঠেছে ওই নেতার বিরুদ্ধে। থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সাত জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রহৃত এক শিক্ষকের চিকিৎসা চলছে কাকদ্বীপ হাসপাতালে।

মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে কাকদ্বীপের ফ্রেজারগঞ্জ কৃষ্ণপ্রসাদ আদর্শ বিদ্যাপীঠে। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আশিস বাগ দলের স্থানীয় বুথ কমিটির সভাপতি। তিনি অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আশিসবাবুর দাবি, কয়েকজন শিক্ষক মিলে স্কুলে একটা গোষ্ঠী তৈরি করেছেন। ওঁরা পড়াশোনার বারোটা বাজাতে চান। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা ক্লাস করছেন না জেনে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন সামান্য ঝামেলা হয়েছে।’’ ওই তৃণমূল নেতার দাবি, উত্তেজনার মুহূর্তে টেবিল চাপড়াতে গিয়ে জলের বোতল পড়ে গিয়েছিল। কাউকে মারধর করা বা খারাপ কথা বলা হয়নি।

কিন্তু তিনি পরিচালন সমিতির কেউ নন। স্কুলের অভিভাবক মাত্র। তা হলে কোন অধিকারে গেলেন স্কুলে ব্যাপারে নাক গলাতে? এ প্রশ্নের উত্তর নেই আশিসবাবুর কাছে। প্রধান শিক্ষক দেবাশিস ভৌমিকের ইঙ্গিতেই স্কুলের এক কর্মী আশিসবাবু-সহ কিছু তৃণমূল নেতাকে বাইরে থেকে ডেকে এনেছিলেন বলে অভিযোগ বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এক শিক্ষিকা রেশমি কুণ্ডু সাঁতরা বলেন, ‘‘আশিসবাবু পরিচালন সমিতির কেউ নন। প্রধান শিক্ষকের মদত না থাকলে উনি স্কুলে ঢুকলেন কী ভাবে?’’ ওই শিক্ষিকার আরও অভিযোগ, জলের বোতল ছুড়ে মেরেছেন আশিসবাবু। এ-ও বলেছেন, চুড়িদার পরে স্কুলে এলে ওড়না খুলে নেবেন।

কিন্তু গোলমাল ছড়াল কেন?

পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের নানা সমস্যা নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সঙ্গে শিক্ষকদের কিছু দিন ধরেই ঝামেলা চলছিল। শিক্ষকেরা চান, স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসেব দেওয়া হোক। স্কুলের এক শিক্ষাকর্মীর ব্যবহারেও আপত্তি ছিল শিক্ষকদের। যা প্রধান শিক্ষক আলোচনায় বসে মিটিয়ে নিন, এই দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। এ সব নিষ্পত্তির জন্য মঙ্গলবার বৈঠক ডাকা হয়। নির্ধারিত সময়ে বৈঠক শুরু হয়নি। অভিযোগ, হঠাৎই স্কুলে ঢুকে পড়েন আশিসবাবু-সহ স্থানীয় আরও কিছু তৃণমূলের লোকজন। মনোরঞ্জন দাস নামে এক শিক্ষককে ঘুষি মারা হয়। জলের বোতল ছুড়ে মারা হয় অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিকে।

শিক্ষক দীপনারায়ণ করণ বলেন, ‘‘আলোচনার বিষয়গুলি প্রধান শিক্ষক ক্রমশই এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা চাপ দিতেই বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে এমন কাণ্ড ঘটানো হল।’’ মনোরঞ্জনবাবু আপাতত বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

বুধবার তাঁকে দেখতে হাসপাতালে আসেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবিটিএ-র প্রতিনিধিদল। শিক্ষক-নিগ্রহের প্রতিবাদ করেন তাঁরা।

প্রধান শিক্ষক দেবাশিসবাবু এবং পরিচালন সমিতির সদস্যদের তরফে আবার শিক্ষকদের সম্পর্কে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাঁদের দাবি, শিক্ষকেরা ক্লাস করছেন না। স্কুলের ব্যাপারে কিছু বললেই খালি বৈঠকে বসার দাবি তুলছেন। দেবাশিসবাবু আবার বলেন, ‘‘বার বার ডেকেও ওঁদের বৈঠকে পাইনি।’’ পরিচালন কমিটির সভাপতি অশোককুমার দাসের কথায়, ‘‘আমি শিক্ষকদের অনুরোধ করেছিলাম, আপনারা ক্লাস নিন। আমরা একবার আলোচনায় বসেছি। প্রয়োজনে আবার বসব। কিন্তু ক্লাসটা করুন। কিন্তু শিক্ষকেরা ক্লাসে যানন‌ি। সেটা জানতে পেরে অভিভাবকেরা চলে আসেন।’’ বাইরে থেকে কাউকে ডেকে আনা হয়নি বলে দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক।

নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি শ্রীমন্ত মালি বলেন, ‘‘শিক্ষকদের সঙ্গে বসে সব মিটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তা-ও কেন ওঁরা থানায় অভিযোগ করলেন, তা খতিয়ে দেখছি।’’

Allegation TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy