Advertisement
E-Paper

অল্পের জন্য হাত ছেড়ে গেল, আক্ষেপ রমেশদের

মুখঝামটা তাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বদলে গিয়েছে ছবিটা। পরিচিতেরা পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে রমেশ সাউ, সন্তোষ সাউদের। 

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৮
দুইভাই: গঙ্গার জলে এ ভাবেই পয়সা খোঁজে রমেশ, সন্তোষরা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

দুইভাই: গঙ্গার জলে এ ভাবেই পয়সা খোঁজে রমেশ, সন্তোষরা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

মুখঝামটা তাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বদলে গিয়েছে ছবিটা। পরিচিতেরা পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে রমেশ সাউ, সন্তোষ সাউদের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে খরস্রোতা গঙ্গায় চার জনের প্রাণ বাঁচিয়েছে বছর তেরো-চোদ্দোর দুই ভাই রমেশ-সন্তোষ। শ্যামনগরে গঙ্গার ঘাটে চুম্বক ফেলে খুচরো পয়সা তোলে রমেশরা।

এত প্রশংসা-বাহবার পরেও অবশ্য মন ভাল নেই রমেশদের। আফসোসটা কিছুতেই যাচ্ছে না দুই ভাইয়ের। চার জনকে বাঁচালেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দীপকুমার পালকে হাতের নাগালে পেয়েও রক্ষা করতে পারেনি তারা। তলিয়ে গিয়েছে ওই কিশোর। শনিবার খোঁজ চলেছে নদীতে।

শুক্রবার অন্যান্য দিনের মতো শ্যামনগরে নানাবাবার ঘাটে এসেছিল রমেশ-সন্তোষ। ঘাটের সিঁড়িতে বসে উদাস চোখে তাকিয়ে ছিল গঙ্গার দিকে। রমেশ বলে, ‘‘ওই দাদাটার কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম আমরা। দাদা ওর চুলও ধরে ফেলেছিল। কিন্তু জলের টান ছিল খুব। নিমেষে হাত ছাড়িয়ে হারিয়ে গেল দাদাটা।’’

রমেশের বাড়ি শ্যামনগরের মায়াপল্লিতে। পিঠোপিঠি দুই ভাই স্বামী বিবেকানন্দ হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা প্রহ্লাদ সাউ আগে রঙের কাজ করতেন। বছর দু’য়েক ধরে অসুস্থ হয়ে ঘরবন্দি। কাজ করার ক্ষমতা নেই। মা সুমিত্রা পলতায় আয়ার কাজ করেন। মূলত তাঁর রোজগারই ভরসা পাঁচ সন্তান-সহ স্বামী-স্ত্রীর।

বাড়ির কাছেই গঙ্গা। ছোটবেলা থেকে সাঁতারে দক্ষ রমেশ-সন্তোষ। সকাল থেকেই গঙ্গার ঘাটে ভিড় জমে পুণ্যার্থীদের। শ্রাদ্ধ থেকে শুরু করে অন্যান্য ধর্মীয় আচারের কাজ হয় গঙ্গার ঘাটে। অনেকে নদীতে খুচরো পয়সা ছুড়ে দেন। সরু সুতোর এক প্রান্তে বাঁধা চুম্বক নদীতে ফেলে সেই পয়সা তুলে নেয় অল্পবয়সী ছেলের দল।

তাদেরই দু’জন রমেশ আর সন্তোষ। তারা জানায়, সুতোয় চুম্বক বেঁধে সব সময়ে পয়সা ওঠে না। তখন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পয়সার কাছাকাছি পৌঁছতে হয়।

সারা দিনে কত টাকা সংগ্রহ হয়?

সন্তোষ জানায়, দু’জনে মিলে ৬০-৭০ টাকা হয়েই যায়। আর উৎসব বা বিশেষ সময়ে রোজগার হয় ১০০ টাকা বা তারও বেশি। রমেশ বলে ‘‘বেশিরভাগ টাকাই বাড়িতে দিয়ে দিই। আর কিছুটা নিজেদের জন্য রেখে দিই। পরোটা কিনে খাই।’’

কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার?

রমেশ বলে, ‘‘আমরা তখন নদীতে নেমে পয়সা তুলছিলাম। দেখলাম, চারটে দাদা আর একটা দিদি জলে নেমে খেলতে শুরু করল। খুব কাছেই ছিল ওরা। কে কতক্ষণ জলে ডুবে থাকতে পারে, তার প্রতিযোগিতা শুরু করে ওরা।’’ সন্তোষ জানায়, খেলার সময়ে পিছোতে পিছোতে যে ক্রমশ গভীর জলে চলে যাচ্ছিল, তা বুঝতে পারেনি কেউ। আচমকা ভাটার টানে সকলে ভেসে যায়।

দুই ভাই জানায়, জলের তোড়ে ভেসে হাবুডুবু খেতে শুরু করেছিল পাঁচ জন। কাছেই ছিল রমেশ, সন্তোষ আর এক কিশোর। তারা তিন জন দু’জনকে টেনে তুলে পাড়ের কাছে এনে ছেড়ে দেয়। দীপ, তার এক দাদা জয় এবং বোন জ্যোতি পাল তখন আরও গভীর জলে। প্রাণপণে সাঁতার দিয়ে তাদের কাছে পৌঁছয় রমেশরা। জয় এবং জ্যোতিকে টেনে তোলে।

গঙ্গাপাড়ের লোকজন এখন দুই ভাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

Drowning Ganges Shyamnagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy