Advertisement
০২ মে ২০২৪
ছেলেকে স্কুলে দিয়ে ফেরার পথে মৃত্যু মায়ের
Road Accident at Petrapol

‘আর কখনও স্কুলে পৌঁছে দেবে না মা’

গ্রেফতার করা হয়েছে চালক কমল মণ্ডলকে। তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

দুর্ঘটনাস্থল। মৃত শ্রাবণী পাল (ইনসেটে)

দুর্ঘটনাস্থল। মৃত শ্রাবণী পাল (ইনসেটে)

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৯
Share: Save:

ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল মায়ের। গুরুতর জখম হয়েছেন ছাত্রের বাবা। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে পেট্রাপোল থানা এলাকায় যশোর রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শ্রাবণী পাল (৩৬)। জখম হয়েছেন তাঁর স্বামী সৌমেন। পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চালক কমল মণ্ডলকে। তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ শহরে শিমুলতলার বাসিন্দা সৌমেন এ দিন সকালে স্ত্রী শ্রাবণী ও ছেলে সৌম্যদীপকে বাইকে চাপিয়ে পেট্রাপোল থানা এলাকার ছয়ঘরিয়ায় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। সৌম্যদীপ সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেকে পৌঁছে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে যশোর রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলেন সৌমেন। রাখালদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে পিছন দিক থেকে আসা একটি ট্রাককে পাশ দিতে গিয়ে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারান সৌমেন। ট্রাকে ধাক্কা লেগে শ্রাবণী ও সৌমেন দু’জনেই ছিটকে পড়েন। ট্রাকের চাকা শ্রাবণীর গায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। সৌমেনকে জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

খবর ছড়িয়ে পড়তেই সৌমেনের বাড়িতে পড়শিরা ভিড় করতে থাকেন। এক মহিলার কথায়, ‘‘সকালে দেখলাম ওঁরা ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরেই শ্রাবণীর মৃত্যুর খবর পেলাম। এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’’ এক যুবকের কথায়, ‘‘দিদি (শ্রাবণী) দেখা হলেই পরিবারের খোঁজ-খবর নিতেন। এ ভাবে উনি চলে গেলেন ভাবতে পারছি না।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌমেন ও শ্রাবণী রোজই এক সঙ্গে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যেতেন। ছুটির পরেও এক সঙ্গে ছেলেকে আনতেন। এ দিন শ্রাবণীর মৃত্যুর পরে ছেলেকে বাড়ি আনা হয়। সঙ্গে স্কুলের শিক্ষিকারা ছিলেন। সৌম্যদীপ কান্নায় ভেঙে পড়েছে। সে বলে, ‘‘মা আর কখনও আমাকে স্কুলে পৌঁছে দেবে না!’’

ট্রাক দুর্ঘটনায় শ্রাবণীর মৃত্যুর পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ফের যশোর রোডে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছেন। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, বহু বার দাবি তোলা সত্ত্বেও কেন স্কুলের সময়ে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয় না? যশোর রোডে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু ঘটেই চলেছে। অভিযোগ, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তারপরের কয়েকটা দিন পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ে। তারপর পরিস্থিতি যে কে সেই! অভিযোগ, বনগাঁ শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় যশোর রোডে ২৪ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে ট্রাক চলাচল
করে। বাসিন্দারা ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবি তুললেও সেই দাবি আজও কার্যকর হয়নি।

শ্রাবণীর আত্মীয় অর্পণ পাল বলেন, ‘‘এত দুর্ঘটনার পরেও প্রশাসনের কোনও মাথাব্যথা নেই। যশোর রোড দিয়ে দু’টি ট্রাক পাশাপাশি যাতায়াত করতে পারে না। এত দিনেও রাস্তা চওড়া হল না।’’ শুভাশিস
পাল নামে এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘আর কত মৃত্যু হলে প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে, কে জানে!’’

পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে,
ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নজরদারিও চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Petrapol Road Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE