Advertisement
E-Paper

মৃত্যু বাড়ছেই, দেগঙ্গায় বন্ধ বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্র

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪৬
তালাবন্ধ: এ ভাবেই পড়ে রয়েছে বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শুক্রবার দেগঙ্গার চৌরাসিতে। নিজস্ব চিত্র

তালাবন্ধ: এ ভাবেই পড়ে রয়েছে বহু স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শুক্রবার দেগঙ্গার চৌরাসিতে। নিজস্ব চিত্র

শুক্রবার বেলা একটা। কদম্বগাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকশো মহিলা ও পুরুষ। মহিলাদের অনেকেরই কোলে বাচ্চা। রোগীদের নাম-ঠিকানা লিখে সরকারি স্লিপ তৈরি করে দিচ্ছেন এক জন। নাম প্রভাস হাজরা। ভিতরে আর এক জন রোগী দেখে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। নাম দেবাশিস বিদ।

প্রভাসবাবু হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। দেবাশিসবাবু ফার্মাসিস্ট। আপনারা রোগী দেখছেন? ডাক্তার কোথায়? তাঁদের অসহায় জবাব, ‘‘এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জনই মাত্র ডাক্তার। আজ তিনি আসেননি।’’ বাধ্য হয়ে রোগীদের চাপে তাঁরাই ওষুধ দিচ্ছেন। সকাল থেকে রোগীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

দেগঙ্গা আর বারাসতের মাঝে কদম্বগাছির এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নতুন করে সাজিয়ে এক বার উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এক বার সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। কিন্তু, সে সব যন্ত্রপাতি ও শয্যা পড়ে নষ্ট হচ্ছে। রোগী ভর্তির ব্যবস্থাই নেই। এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে পাতড়ার বাসিন্দা সাবিরুল ইসলাম বললেন, ‘‘এত দূরে
এসেও ডাক্তার দেখাতে পারলাম না। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যদি ঠিকঠাক চিকিৎসা হত, তা হলে দেগঙ্গা
থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বারাসতে নিয়ে যাওয়ার পথে এত মানুষের মৃত্যু হত না।’’

ডেঙ্গি ও ‘অজানা জ্বর’ মহামারির আকার নিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ও সংলগ্ন এলাকায়। চলছে মৃত্যু-মিছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর এই হাল হলে মানুষ যাবে কোথায়? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাঘবেশ মজুমদারের জবাব, ‘‘কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রই বন্ধ নয়। আর জেলায় মাত্রই পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নেই।’’ কদম্বগাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে অবশ্য উত্তর নেই তাঁর কাছে।

এ বার দেখা যাক, কতটা ঠিক বলছেন স্বাস্থ্য আধিকারিক।

১৩টি পঞ্চায়েত নিয়ে দেগঙ্গা ব্লক। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে জনসংখ্যা দু’লক্ষ ২২ হাজার। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই এলাকায় রয়েছে একটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৪২টি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও সরকারি রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় পাঁচটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়ে পড়েই আছে। কলসুর পঞ্চায়েতের পলতার আটি, চৌরাশির দক্ষিণ মাটিকুমড়া, চাকলার বহড়াগাছি, চাঁপাতলার হাদিপুর, ঝিকরা ২, চটকাবেড়িয়া ও শেখপাড়ার উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি বন্ধ।

এ দিন চৌরাশির দক্ষিণ মাটিকুমড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তালা। এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম বিবি বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে জ্বর। সাত কিলোমিটার দূরে বিশ্বনাথপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখাতে হচ্ছে। ভ্যানোতে যেতে ৩০০ টাকা পড়ে যাচ্ছে।’’ এই ক’দিনে চৌরাশিতেই জ্বরে মারা গিয়েছেন প্রায় আট জন। আবেদ হোসেন নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আজ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু থাকলে মানুষগুলোকে মরতে হত না।’’

স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে আমুলিয়া উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ‘খোলা’। দুপুর দুটো নাগাদ দেখা গেল, গোটা এলাকা ধু ধু করছে। গেটে তালা। দরজা-জানলা ভাঙা। মাঠে যাচ্ছিলেন এক কৃষক। প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে বললেন, ‘‘এ তো বহুকাল ধরেই বন্ধ। তবে রাতে কারা যেন আসে।’’

আজিজনগর গ্রামে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। তবে দীর্ঘদিন চিকিৎসক নেই। জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় অস্থায়ী ডাক্তার বসেছেন। এলাকার বাসিন্দা সাবির খান জানালেন, গ্রামের পাঁচটি পাড়ার তিন হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য ছুটছেন পাশের গ্রামের আনোয়াদহ উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। একই হাল হাদিপুর ঝিকরা ২ পঞ্চায়েতের চটকাবেড়িয়া শেখপাড়ার উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও। এ দিন সেখানে ঘিরে ধরলেন এলাকার মানুষ। রাজীব শেখ, রমিদ্রা বিবিরা বললেন, তিন বছর আগে তৈরি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র আজও চালু হয়নি।

অসহায় দেখায় দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি লিলু মোস্তারি খানমকে। তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, চিকিৎসকের অভাব ও নানা কারণে অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা যায়নি। কোথাও কোথাও চিকিৎসকও নেই।’’

Dengue Malaria Water pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy