ভোটার তালিকা তৈরিতে একাধিক অনিয়ম, শতাধিক ভুয়ো নাম তোলা ও বৈধ নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগে নিলম্বিত করা হল কাকদ্বীপ মহকুমা নির্বাচন কমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সিস্টেম ম্যানেজার অরুণ গড়াইকে। জেলাশাসকের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০-এর ৩২ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই পদক্ষেপ করেছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। অরুণের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। মেসেজেরও উত্তর আসেনি
সূত্রের খবর, অরুণ কাকদ্বীপের যুগ্ম বিডিও স্বপনকুমার হালদারের লগ-ইন আইডি অবৈধ ভাবে ব্যবহার করে শতাধিক ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকায় তোলেন। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে তিনি বহু বৈধ নামও তালিকা থেকে বাদ দেন। যুগ্ম বিডিওর ফোন নম্বর পাল্টে নিজের নম্বর ব্যবহার করেন, যাতে যাবতীয় যাচাই প্রক্রিয়া তাঁর হাত দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই সব কাজ করা হয় ভোটার ফর্ম নিষ্পত্তির সময়ে। টাকার বিনিময়ে তিনি এই সব কাজ করেছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, নির্বাচন কমিশন মার্চ মাসেই অরুণকে শো-কজ় করে। জবাবে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, তার প্রতিশ্রুতিও দেন। তবে শুধু তাঁকে নয়, কমিশনের রিপোর্টে আরও দু’জনের নাম উঠে এসেছে— এক জন জেলা নির্বাচন দফতরের কর্মী, অন্য জন সমবায় দফতরের পরিদর্শক। যদিও তাঁরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘অরুণ যুগ্ম বিডিও-র লগ-ইন আইডি ব্যবহার করেছেন। এটা একেবারেই অনুমোদিত নয়। আপাতত তাঁকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হয়েছে, তদন্ত চলছে।”
ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে দিল্লির জাতীয় নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর থেকে রিপোর্ট তলব করেছে। ভোটার তালিকা থেকে ঠিক কতগুলি নাম অবৈধ ভাবে যোগ ও বাদ দেওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ চাওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধীরা রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে। কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা কিছু দিন আগেই জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানান, এলাকায় প্রায় চার হাজার ভুয়ো ভোটার রয়েছে। তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। অন্য দিকে, বিরোধীদের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে আসা নাগরিকেরা শাসকদলের আশ্রয়ে টাকা দিয়ে নাম তুলেছেন ভোটার তালিকায়। অরুণ গড়াই প্রসঙ্গে বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘কিছু সরকারি আধিকারিকের সহযোগিতায় দালালচক্রের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে ভোটার লিস্টে নাম তোলা হচ্ছে।’’
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। নিজের সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ প্রমাণিত হল।’’
নির্বাচন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “অরুণ দায়িত্বে গাফিলতি করেছেন, একাধিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)